এক মাসেও জমা হয়নি ভিক্টোরিয়া কলেজে দূর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অর্থ কেলেঙ্গারীর তদন্ত প্রতিবেদন দফায় দফায় পেছানো হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা নয় ছয়ের এ অভিযোগ সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ রতন কুমার সাহার বিরুদ্ধে। মসজিদ, কর্মচারি কল্যাণ তহবিল, আইসিটিসহ কলেজে ডজনের বেশী একাউন্টে টাকা নয়-ছয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়, জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সহ অর্ধশতাধিক মিডিয়া এ দূর্নীতি অভিযোগ বিষয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় অভিযুক্ত সাবেক অধ্যক্ষের পক্ষে ওকালতি করেছেন তারই সাঙ্গপাঙ্গরা। নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত ১১ জুন বিদায় নেন রতন কুমার সাহা। তার বিদায়ের পর পত্রিকার সংবাদের সূত্র ধরে ১৫জুন একটি তদন্ত কমিটি ঘটন করেন কলেজের নব নিযুক্ত অধ্যক্ষ। গত জুন মাসে এ প্রতিবেদন জমার কথা থাকলেও জুলাই মাসের অর্ধ সময় অতিক্রম করলেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি তদন্ত কমিটি। দূর্নীতির প্রতিবেদন নিয়ে দফায় দফায় কালক্ষেপণ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অধ্যক্ষের পরিবর্তন মানে নতুন সকল হিসাব প্রস্তুত। তাহলে সকল ব্যাংক একাউন্টে হিসাব সংগ্রহে কোন বিলম্ব নেই। তবে অভিযুক্ত রতন কুমার সাহা ও তার সঙ্গীদের বাঁচাতেই কালক্ষেপণ?

অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মো. নাজমা নূর বলেন,মা-বাবার টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই। ধর্মপুর একটা ম্যাচে থাকি। টিউশনি করে নিজের খরচ চালাই, কলেজের বেতন ফি দেই। বহু শিক্ষার্থী পার্ট টাইম জব করে। এমন ছাত্র-ছাত্রীও আছে যারা যাকাত-ফেতরার টাকা দিয়ে কলেজ ফি দেয়। যখন শুনি আমাদের স্যারেরা আমাদের টাকা লুটপাট করেছে, স্যারদের প্রতি ঘৃণা হয়। তাদের থেকে আমরা কী শিক্ষা গ্রহণ করবো?

কলেজের একজন কর্মচারি বলেন, কর্মচারি কল্যাণ ফান্ড থেকে সবচেয়ে বেশী অর্থ চুরি হয়েছে। এর সাথে কর্মচারিদের একটা অংশ জড়িত। আর তারা রাজনৈতিক ছাড়ায় এসব কান্ড করে। কলেজ থেকে প্রকাশিত বন্ধন বইটা খুললে দেখা যায়, তারা বিএনপি জামাতের আমলে নিয়োগ পেয়েছে। তাদের বিদায় না করলে দূর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।

নাম পরিচয় গোপন রাখা শর্তে একজন সহকারি অধ্যাপক বলেন, অভিযুক্ত অধ্যক্ষের পক্ষে যারা ফেসবুকে এবং কলেজ সভায় দালালি করেছে, তাদেরও তদন্ত হওয়া উচিত। কোটি কোটি টাকা একজন ইন্ডিয়া নিয়ে যায়নি। সাথে আরো নেতারা জড়িত আছে। সারা জীবন শিক্ষাকতা করে বইয়ের কোন পাতায় কোনটা আছে এটা জানা সম্ভব। শেষ জীবনে এক-দেড় বছরে কোন ফান্ড থেকে পুকুর চুরি করা যাবে, কোনটা থেকে সাগড় চুরি করা যাবে এটা অফিসে বসে বছরের পর বছর যারা টাকার যোগ বিয়োগ করে, তারাই বলতে পারবে। তারাই এ কাজটা করেছে। সুতরাং তাদের আগে ধরা দরকার। এসকল নব্য চেতনাবাজ, অনুপ্রবেশকরী, দূর্নীতিবাজ শিক্ষক, কর্মকর্তাদের ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিদায় করে দিলে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী এ কলেজ বন্ধ হয়ে যাবে না।

সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রদান ও পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: মোশারফ হোসেন বলেন, যেহেতু এখনো প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়নি, এখন আমি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে প্রস্তুত নই। আমাকে মন্তব্য করার জন্য নিষেধ করা হয়েছে।

কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর রুহুল আমিন ভূইয়া জানান, গত মাসের ৩০ তারিখ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিলো, তদন্ত কমিটি তা করতে পারে নাই। তারা আবার সময় চেয়েছে তাদের সময় দিয়েছি। গত ১৪ জুলাই এসে তারা পুনরায় সময় চেয়েছে তাদের সময় দিয়েছি। কমিটির বক্তব্য হলো, তারা যাচাই বাচাই করে জমা দিবে। তাই একটু সময় লাগবে। তবে কত দিন সময় লাগবে এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, নির্ধারিত সময় তো আগেই অতিবাহিত হয়ে গেছে। আশাকরি অল্পদিনে তা প্রকাশ করতে পারবো।

আরো পড়ুন