কুমিল্লার এক অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আকুতি

জে.এইচ বাবুঃ প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ।কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের শিমড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সামাদ। মুক্তিযুদ্ধের সময় আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর বদ্ধভূমির পাশে জীবনের মায়া না করে দেশের স্বাধীনতার জন্য সবোর্চ্চ ঝুকি নিয়ে একদল পাক বাহিনীর সাথে অ্যাম্বুশ বা কৌশলী যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্কুল ফাঁকি দিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ। দুটো হ্যান্ড গ্রেনেড আর একটি এলএমজি (হাল্কা মেশিন) গান দিয়ে একদল পাকিস্থানীকে আক্রমন করেন। এই আক্রমনে দুজন পাকিস্থানী হায়নাকে মেরেছিলেন, আহত করেছেন আরো চারপাঁচজনকে। তারপর রাতের আঁধারে আহত সঙ্গীদের নিয়ে পালিয়ে যায় পুরো দলটি পালিয়ে যায়।

এই মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ আরো বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রানন্তকর প্রচেষ্টায় দেশ স্বাধীন করলেও নিজের ভাগ্য পরিবর্তণ করতে পারেন নি বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ। এ নিয়ে আফসোসও নেই। তিনমাস অন্তর অন্তর সরকার যে ভাতা দেয় তা দিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করতে পারলেও ১৪ জনের সংসারে দৈনদিন খাবারসহ নানান প্রয়োজনীয় খরচের জন্য বাড়তি আয়ের প্রয়োজন। অন্যর জমি বর্গা করে-খোলা জলাশয়ে মাছ ধরে জীবন পার করার চেষ্টা করেন। আত্মসম্মানটাই পুঁজি। তাই অভাবের মধ্যে জীবন পার করলেও কারো কাছে হাত পাতেন নি তিনি। অভাবের কারনে লেখাপড়া করাতে পারেন নিজের ছেলে-মেয়েদের। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। আরো এক ছেলে ও দুই মেয়ে এখনো বিয়ের বাকি। কোন রকম চলছে মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদের একান্নবতী পরিবারটি। এ জন্য কিস্তির মাধ্যমে কিনে নেন একটি অটোরিক্সা। মাসে পাঁচ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। এভাবে ১৫ মাসের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। প্রতিদিন অটোরিক্সাটি চালানোর প যা পায় তার থেকে আগে কিস্তির টাকা রাখতে হয়। এই অটোরিক্সাটি চালায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদের বড় ছেলে ফরহাদ। কিস্তির টাকা জমানোর পরে যা থাকে তা দিয়ে কোন রকম বাজার সদাই করে বাড়ি ফিরে ফরহাদ।

পুরো পরিবারে ১৪ জন সদস্য রয়েছে। আর একান্নবর্তী এই পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে কিস্তিতে নেয়া এই অটোরিক্সাটি।

গত ১৪ মে মঙ্গলবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদের বড় ছেলে ফরহাদ তার বাড়ীর পাশে অটোরিক্সাটি রেখে বাবার সাথে দেখা করতে যায়। এ সময় স্থানীয় চিহ্নিত একদল চোর অটোরিক্সাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মুষড়ে যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ। বয়সের ভারে নুহ্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ জেলা পুলিশের প্রতি বিশ্বাস রেখে বলেন, আমি জানি পুলিশ আমার রিক্সাডা উদ্ধার করতে পারবো-আর নইলে আমডা না খাইয়া দিন পার করতে হইবো।

এ নিয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ এর ছেলে ফরহাদ একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এসআই মুক্তা।

মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদের অটোরিক্সা চুরির বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কোতয়ালী মডেল থানার ছত্রখীল ফাঁড়ির এসআই রবিউল ইসলামকে। অটোরিক্সা চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই রবিউল ইসলাম জানান, থানা থেকে আমি অভিযোগটি পেয়েছি। অবশ্যই তদন্তপূর্বক চোরের দলকে আটক করার জন্য সবোর্চ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।

আরো পড়ুন