কুমিল্লার গোমতীর চরে মুলা চাষে ব্যস্তসময় পার করছে কৃষক

মারুফ আহমেদঃ কুমিল্লার গোমতী নদী তীরবর্তী চরের বিভিন্নস্থানে বছরব্যাপী কৃষকরা ব্যস্তসময় পার করছে মুলা চাষে। মূলতঃ শীতকালীন হলেও চাষাবাদ সহজলভ্য এবং স্বল্পসময়ে ফসল উৎপাদনে দিন-দিন তাই ব্যাপকহারে বাড়ছে মুলা চাষ। জেলার বুড়িচং উপজেলার চরাঞ্চলের কমপক্ষে ২০ টি স্থানের ৩’শতাধিক কৃষক পরিবার বর্তমানে তাই ব্যস্ত সময় পার করছে মূলা চাষে ।

কুমিল্লা প্রধান নদী গোমতী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপন্ন হয়ে সদর উপজেলার কটকবাজার সীমান্ত পথে এদেশে প্রবেশ করে দাউদকান্দি উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এই নদীর বুড়িচং উপজেলার চরাঞ্চলে কৃষকরা দিন দিন ঝুঁকছে মুলা চাষে। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, গোমতীর বুড়িচংসহ পাশ্ববর্তী সদর ও ব্রাহ্মণপাড়ার কমপক্ষে ২০ টি স্থানে চরাঞ্চলের প্রায় ১’শ হেক্টর জমিতে মুলা চাষ হচ্ছে। এতে প্রতিটি ফলনে উৎপাদিত হচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশী মুলা। সদর উপজেলার সুবর্ণপুর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর জানান, শীতকালীন সব্জি হিসেবে মুলার কদর থাকলেও বাজার মূল্য অন্যান্য সব্জি অপেক্ষা কম থাকে। তবে বছরের অন্যান্য সময় বাজার মূল্য বেশভালো থাকায় এখানকার কৃষকরা তাই দিন দিন পুরো বছরজুড়ে মূলা চাষে ঝুঁকে পড়েছে। এতে এক একজন কৃষক বছরে কমপক্ষে ৪/৫ টি করে ফলন পাচ্ছে।

সরেজমিন নদী তীরে ঘুরে চাষীদের থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর , শাহপুর , সুবর্ণপুর, নিশ্চিন্তপুর , বুড়িচংয়ের ভান্তী , বালিখাড়া ,পূর্বহুরা, কাহেতরা, ভরাসার, ফরিজপুর, রামপাল, নানুয়ারবাজার, কাঠালিয়া, বাগিলারা , বাজেহুরা, মিথিলাপুর, বাজেবাহেরচর, মহেষপুর,এতবারপুর, মীরপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়ার মনোহরপুর, মালাপাড়াসহ বেশ কিছু নদী তীরবর্তী চরএলাকায় কৃষকরা বারোমাসই চাষাবাদ করছে মুলা। নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার একাধিক কৃষক জানান,সারা বছরই নদী তীরে নানাজাতের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় পুরোবছরই কৃষকরা মূলা চাষে ব্যাস্তসময় পাড় করছে। ময়নামতির বাজেহুরা এলাকার মতিন,ফজলু মিয়া,হাশেমসহ একাধিক কৃষক জানান, শীতকালে অন্যান্য সব্জির মতো মুলাও বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় মূল্য অনেক কম থাকে। কিন্তু বছরের অন্যান্য সময় বাজারে মুলার ভালো মূল্য পাওয়া যায়। জমি থেকে প্রতি কেজি মুলার মুল্য সর্বোচ্চ ২০/২৫ টাকা পাচ্ছে কৃষক। ফলে এখানকার নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক কৃষকরা গোমতীরচরে ব্যাপকহারে মুলা চাষ করছে। একটি ফলন উঠানোর সাথে সাথে আবারো জমি চাষ করে বীজ বপন করছে। এভাবে পুরা বছরে অন্যান্য সব্জির তুলনায় ৩/৪ গুণ আবাদ করা যায়। দেশের অন্যতম বৃহৎ কাচাঁবাজার বুড়িচংয়ের নিমসারে কথা হয় আব্দুর রব, জাহাঙ্গীর নামে দু’পাইকারী ব্যবসায়ীর সাথে। তারা জানান, আমরা সরাসরি জমি থেকে মুলা কিনে নিয়ে আসি। সেখান থেকে ঢাকা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ,চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছি। কথা হয় ভান্তী গ্রামের কৃষক ইউসুফের সাথে, তিনি বলেন,লাভ ভালো হওয়ায় এখানকার কৃষকরা দিন দিন মুলা চাষে ঝুঁকে যাচ্ছে ব্যাপকহারে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ফলন উঠতে দু থেকে আড়াই মাস সময় লাগে। এককালীন ৫০ শতক জমিতে তিনি মুলা চাষ করতে ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। নদী তীরবর্তী ময়নামতির বাগিলারা গ্রামের কৃষক আলমঙ্গীর জানান, এখানকার কৃষকরা লালতীর,সুফলা নামের হাইব্রীড বীজ ব্যবহার করেন। তিনি আরো বলেন, কৃষিবিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ের লোকজন এসে তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ছাড়াও সরকারীভাবে বীজ-সার সুবিধা পাচ্ছেন।

বিষয়টি জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল হাদি বলেন, গোমতীর চরে বুড়িচং কুমিল্লা সদর ও ব্রাহ্মনপাড়ায় বছরব্যাপী মুলা চাষ হয়। তিনি আরো বলেন,৪০/৪৫ দিনে বিক্রয় উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন ঝুঁকছে এটার চাষাবাদে। এতে লাভও বেশী। ফলে দিন দিন বাড়ছে গোমতীর চরাঞ্চলে মুলা চাষ।

আরো পড়ুন