কুমিল্লায় অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন

হালিম সৈকতঃ বর্ষা শুরু হলেও বর্ষার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে চৈত্র মাস। চৈত্র মাসে প্রখর রৌদ্রে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। চারদিকে পানির জন্য হাহাকার নেমে আসে।
কবির কবিতা মনে পরে যায়,
ঘাম ঝরে দর দর গ্রীষ্মের দুপুরে
মাঠ-ঘাট চৌচির , জল নেই পুকুরে।
অবস্থা ঠিক গ্রীষ্মের মত। প্রতিনিয়ত পৃথিবীর তাপমাত্রা অধিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ুর স্বাভাবিক চরিত্র পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হলো বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এক সময় আমাদের দেশকে বলা হত ছয় ঋতুর দেশ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ আর ছয় ঋতুর বৈশিষ্ট্য চোখে পরিলক্ষিত হয় না।

অত্যধিক গরমের কারণে কুমিল্লাসহ সারা দেশের মানুষের স্বাভাবিক কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু আর বৃদ্ধরা। আর যারা মোটা । গতকাল পর্যন্ত কুমিল্লায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। আজও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
তার সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুতের উৎপাদন স্বত্ত্বেও কেন লোডশেডিং জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নটি। শহরের তুলনায় গ্রামে এই লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেশি। এই দিকে তিতাস উপজেলার বাসিন্দা হাসান মাহমুদ অপু ও জুয়েল রানা বলেন, ভাই অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। সারারাত ঘুমুতে পারিনি। কারণ বিদ্যুৎ ছিল না। তিতাসে গড়ে ৮-১০ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না।
একজন কৌতুক করে বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ কখনো যায় না, মাঝে মাঝে আসে। এই হল গ্রামের বিদ্যুতের সার্বিক চিত্র।

গরমের তীব্রতার বিষয়ে প্রকৃতিপ্রেমী ও গাজী টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সেলিম রেজা মুন্সী বলেন, পরিবেশের এই বিপর্যের জন্য মানুষই দায়ী। আমরা যে হারে গাছপালা এবং বনভূমি ধ্বংস করছি, সেই হারে গাছ রোপন করছি না। ফলে পরিবেশ আমাদের উপর বৈরী আচরণ করছে। আমাদের উচিত প্রচুর বৃক্ষ রোপন করা। এক সময় কুমিল্লাকে বলা হত ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর। দেখেন আজ কয়টি দীঘি রয়েছে। সব ভরাট করে ফেলেছে। অথচ আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। কে কাকে বলবে এইসব কথা।

বিএমএ কুমিল্লার সাবেক সভাপতি ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইকবাল আনোয়ার বলেন, এই গরমে প্রচুর পানি খাওয়া উচিত। অত্যধিক গরমে যে কোন সময় হিথস্ট্রোক হতে পারে। ডেঙ্গু, টাইফয়েট, চিকনগুনিয়া ও ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিতে পারে। শিশুদেরকে দৈনিক ২-৩ বার গোসল করালে ভাল হয়। বেশি বেশি তরল খাবার দিতে হবে। খুব প্রয়েজন ছাড়া বাইরে না যাওয়াই ভাল। প্রাকৃতিক বাতাসটা খুবই প্রয়োজন, এসির বাতাস ক্ষতিকর।

আর এই সমস্ত কারণ হচ্ছে প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব। প্রকৃতিকে আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি। আর অতিমাত্রায় বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। বিজ্ঞান যেমন আমাদের অনেক কিছু দেয় আবার কেড়েও নেয়। এখন আমাদের করণীয় হচ্ছে প্রকৃতির কাছে যাওয়া। সিভিক সেন্স বৃদ্ধি করা। গাছপালা লাগানো। বনভূমি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। সমুদ্রের তলদেশকে পলিথিন ও অন্যান্য ময়লা-আর্বজনা দিয়ে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সমুদ্রকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা। কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাস করা।

শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘরে দেখা গেছে গরমের কারণে মানুষজন খুব একটা বের হচ্ছেন না। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। রিকসা চালক, দিন মজুর ও ফেরিওয়ালাসহ অন্যান্য পেশার মানুষজন পড়েছেন বিপদে কারণ পেটের দায়ে তাদেরকে বের হতেই হচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা নদী কিংবা পুকুরের পানিতে ঝাপ দিচ্ছে, একটানা কয়েক ঘন্টা সাঁতার কাটছে।

অন্যদিকে ফেইসবুক, টুইটারে মানুষজন তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছেন। অনেকে সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করছেন। কেউ কেউ শৈশবের দিনগুলিতে ফিরে যাচ্ছেন।

সকলেই বৃষ্টির প্রহর গুণছেন। এক পশলা বৃষ্টি সকলের মনে প্রশান্তি এনে দিতে পারে।

আরো পড়ুন