কুমিল্লায় অসুস্থ বাবাকে ডাস্টবিনের পাশে ফেলে গেলো সন্তানরা-হাসপাতালে মৃত্যু

রাত সাড়ে আট’টা। কুমিল্লা বাদুড়তলা ফয়জুন্নেচ্ছা স্কুলের বিপরীতে ডাস্টবিন। তারপাশেই এক বৃদ্ধ মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। সন্তানরা অসুস্থ খোরশেদ মিয়াকে মিয়াকে ফেলে চলে যায় । এ সময় জরুরী জাতীয় সেবার নাম্বার থেকে ফোন আসে পুলিশের কাছে। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ সদস্যরা। বৃদ্ধকে উদ্ধার করে মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায় পুলিশ সদস্যরা। হাসপাতালে ভর্তি করার পরেই মারা যান খোরশেদ মিয়া (৬০)। গতকাল শনিবার এ ঘটনা ঘটে।

এ্যাসিসন্টেন টাউন সাব-ইন্সপেক্টর খন্দকার শাহাব উদ্দিন জানান, গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮ টায় খবর পাই একজন অসুস্থ মানুষ ফয়জুন্নেচ্ছা স্কুলের বিপরীতে একটি ডাস্টবিনের পাশে পরে আসেন। পরে এসআই শাওন দাস স্যারের সাথে ঘটনা স্থলে যাই। আমাদের দেখেই বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়া বলে উঠেন কুঁকড়ে উঠেন। আমাদের দেখে বললেন বাবা আমাকে বাঁচাও। লোকটির শ্বাস কষ্ট হচ্ছিলো। খুবই অসুস্থ ঠিক মতে কথা বলতে পারছিলেন না। পরে শাওন স্যার বললেন শাহাবউদ্দিন পুলিশের কাজ মানুষের সেবা করা। এ কথা শোনার পর আমরা করোনায় আক্রান্ত হবো সে চিন্তা মাথায় আসলো না। থানা থেকে ওসি আনোয়ার হক স্যার ফোন করলেন। বৃদ্ধকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললেন। আমরা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে নিয়ে আসলাম। বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়াকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।

পথে বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়াকে বললাম চাচা আপনি ডাস্টবিনের পাশে কেন? আধো আধো মুখে বললেন উনার সন্তানরা ডাস্টবিনের পাশে ফেলে গেছেন। কথাটি শোনার পর আমাদের চোখে পানি চলে আসে। এর বেশী কিছু বলতে পারেন নি খোরশেদ মিয়া। তাই ঠিকানাটাও ঠিকমতে নিতে পারেনি। আমরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পৌছাই। অসুস্থ বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়াকে ভর্তি করি। উনার ভর্তির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি। ঠিকানার জায়গায় আমার নাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে আসি। পরে হাসপাতাল থেকে শাওন স্যারসহ আমরা গাড়ি নিয়ে আবারও ডিউটির উদ্দেশ্য রওনা হই। আমাদের গাড়ীটি টমসমব্রীজ আসার পর হাসপাতাল থেকে একজন নার্স ফোন করে। বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়া মারা গেছেন। এ কথা শুনার পর দাঁতে দাঁত চেপে কতক্ষণ কান্না করি।

এখন লাশটি মেডিকেলে আছে। পরিচয় খোঁজার চেষ্টা চলছে। পরিচয় পেলে আত্মীয়স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। না হয় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে লাশটি বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হবে।
কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ারুল হক জানান, বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়া অস্পস্ট স্বরে জানালেন তার বাড়ি নোয়াখালীর লক্ষীপুর এলাকায়। তবে আমরা তার সঠিক ঠিকানা খুঁজে পাইনি। তাই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে লাশটি দাফনের প্রক্রিয়া চলছে।

আরো পড়ুন