কুমিল্লায় ইটভাটা বিক্রির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ

শাহাজাদা এমরানঃ কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় প্রতারণার মাধ্যমে জাল দলিলপত্র দিয়ে ইটভাটা বিক্রির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিক্রীত ইটভাটা পুনর্দখলসহ মিথ্যা মামলায় এক ব্যক্তি ও তার প্রবাসী ছেলেকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সামাজিক বিচারের রায়সহ আদালতে দাখিল করা আপোসনামা উপেক্ষিত হওয়ায় ন্যায় বিচারের আশায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি তার পরিবার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন যাপন করছেন।

ঘটনার বিবরণে ও অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার শাহ দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম ও তার ছেলের কাছে সদর উপজেলার আলেখারচর-দূর্গাপুর এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে মো. বিল্লাল হোসেন ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর লিখিত চুক্তিতে ‘ইরা ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটা বিক্রি করেন। প্রায় ১০ একর জমির ওপর তৈরি ইটভাটাটি সদর উপজেলার কালির বাজার এলাকায় অবস্থিত। চুক্তি মোতাবেক ক্রেতা মো. তাজুল ইসলামের ছেলে মো. তানভীরুল ইসলাম বিক্রেতা বিল্লালকে এক কোটি ৯৫ লাখ টাকার দুটি চেক প্রদান করেন। পরে বিভিন্ন ধাপে বিক্রেতা বিল্লালকে ৯০ লাখ টাকা চুক্তি মোতাবেক প্রদান করা হয় এবং সে টাকা পেয়ে স্ট্যাম্পের হিসাব বিবরণীতে টাকা বুঝে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করে নিজে স্বাক্ষর করেন বিল্লাল হোসেন।

এদিকে চুক্তিপত্রে ইটভাটার মালিক বিল্লাল হোসেন জানায়, পুরো ভাটার মধ্যে তার নিজস্ব ক্রয়কৃত ও পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ১১১ শতক জমি ক্রেতা মো. তানভীরুল ইসলামকে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর করবেন। আর ইটভাটার অবশিষ্ট অংশ জমির মূল মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া হিসেবে বুঝিয়ে দেবেন। পরে ক্রেতা তানভীরুল ইসলাম ইটভাটা চালুর লক্ষ্যে জমির মালিকদের সঙ্গে জমি ভাড়া সংক্রান্ত ২০২৩ সাল পর্যন্ত চুক্তি সম্পাদন করেন যার মধ্যে তানভীর ২০১৯ সাল পর্যন্ত জমির মালিকদের অগ্রিম ভাড়া প্রদান করেন।
পরবর্তীতে তানভীর ক্রয়কৃত ইটভাটার পূর্বের নাম ইরা ব্রিকস থেকে তাহিম এন্ড তামির (টিএন্ডটি) নামে পরিবর্তন করতে গিয়ে জানতে পারেন ইটভাটার আগের মালিক বিল্লাল প্রশাসনের কোনোরূপ বৈধ ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে ইটভাটা চালিয়ে আসছিলেন। পরে তানভীর নিজ উদ্যেগে ক্রয়কৃত ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র তৈরি করেন এবং ১১১ শতক জমি রেজিস্ট্রির মাধ্যমে ভূমির মালিকানা বুঝিয়ে দিতে বললে মালিক বিল্লাল টালবাহানা শুরু করে। পরবর্তীতে বিল্লাল প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ইটভাটার ১১১ শতক জমির মধ্যে মাত্র ১৮ শতক জমি তার নামে মালিকানা থাকলেও বাকি ৯৩ শতক জমি সে ভাড়া নিয়ে ইটভাটা চালাতেন। এ ঘটনা জানতে পেরে তানভীর বাকি জমির মালিকানার কাগজপত্র দাবি করলে বিক্রেতা বিল্লাল ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং আগে প্রদান দুটি চেক দিয়ে সদর কোর্টে ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট একটি মামলা দায়ের করেন। একই মাসের ১৬ তারিখ কোতোয়ালি মডেল থানায় ওই দুটি চেকের বিপরীতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে কোতোয়ালি থানার পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে তানভীরকে তার ক্রয়কৃত ইটভাটা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে মামলা দায়েরের পর জেলহাজতে প্রেরণ করেন। ৬ দিন জেল খাটার পর আদালতে বিক্রেতা বিল্লাল ক্রেতা তানভীর ও তার বাবা তাজুল ইসলামের উপস্থিতিতে একটি আপোসনামা দাখিল করা হয়। যেখানে আদালতে বিল্লাল আপোসের কথা বললে আদালত তানভীরকে জামিনে মুক্তি প্রদান করেন।
এদিকে কোর্টে দাখিলকৃত আপোসে উল্লেখ ছিল বিক্রেতা বিল্লাল বিক্রয়কৃত তার ১১১ শতক জমির মালিকানা রেজিস্ট্রি করে বুঝিয়ে দিলে ক্রেতা তানভীরের বাবা তাজুল ইসলাম প্রদত্ত এক কোটি ৫০ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করতে পারবে।

পরে বিল্লাল তার আপোসনামায় উল্লেখিত যে চুক্তি করেছিল তা না করে উল্টো তানভীরের বাবা তাজুল ইসলামের নামে ওই চেক দুটো দিয়ে সদর কোর্টে আবারো একটি মামলা দায়ের করেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে বিক্রেতা বিল্লাল জানায়, সে ইটভাটা জোরপূর্বক দখল করে নয় বরং সে বৈধভাবে ইটভাটায় ইট তৈরি করছে।

সূত্রঃ মানবকন্ঠ

আরো পড়ুন