কুমিল্লায় এমপি বাহার কে বিশাল নাগরিক সংবর্ধনা

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষের স্মরণাতীতকালের বিশাল নাগরিক সংবর্ধনার জবাবে কুমিল্লা সদর আসনের তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেছেন, আমাকে সব সময় প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করতে হয়েছে। সকল চক্রান্তকে উপেক্ষা করে ২০০৮ সালে আমার প্রিয় নেত্রী, জাতির জনক কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন না দিলে আজকে কুমিল্লার বাহারের এই সংবর্ধনায় দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ ছিল না। সকল চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র উপক্ষো করে আমাকে মনোনয়ন দেয়ায় আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি আমার প্রিয় নেত্রীকে। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

তিনি বলেন, সে সময় আমি দল থেকে বহিস্কৃত বাহার ছিলাম, চক্রান্ত করতে করতে আমাকে দল থেকে বহিস্কার করে দেয়া হয়েছে। বহিস্কৃত বাহারকে আমাদের দলের নেত্রী মনোনয়ন দেয়ার কারণেই কুমিল্লার মানুষ হিসেবে, কুমিল্লার মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আজ দাঁড়িয়ে বলতে সাহস পাই- ‘কুমিল্লা এগুলেই এগুবে বাংলাদেশ’।

এমপি বাহার রবিবার বিকালে কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে নাগরিক সংবর্ধনা পর্ষদ আয়োজিত স্মরণাতীতকালের বিশাল নাগরিক সংর্বধনার জবাবে দেওয়া বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।

কুমিল্লার মানুষের ভালোবাসা আমার সাহস ও শক্তি-এমপি বাহারজামায়াত প্রশ্নে কোন ছাড় নেই উল্লেখ করে ওয়াদা করে এমপি বাহার বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। এবারে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে বলেছি জামায়াতে ভোট আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের লাগবে না। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তারা আমার মা বোনদের সম্ভ্রমহানী করার জন্য পাকিস্তানী বাহিনীকে সহায়তা করেছে। তাদের সাথে আপোষ করে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার রাজনীতি করবে না। আমি তাদের ভোট চাই নাই।

তিনি বলেন, আগামী দিনের কুমিল্লায় আমরা জঙ্গি মুক্ত, ইভটিজিং মুক্ত কুমিল্লা গড়ে তুলবো। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা চাই। আমরা অনেক আগেই ইভটিজিং বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা পারিবারিকভাবে ইভটিজিং বন্ধে কাজ করছি। তাঁর সংগঠন আছে। কিছুদিন আগেও ইভটিজিংয়ের জন্য একজন স্কুল শিক্ষককে গ্রেপ্তার করিয়েছি। মেয়েকে যৌন হয়রানী করেছে তাকে ছাড়ার কোন সুযোগ নেই। আমি কুমিল্লাকে মাদকমুক্ত করতে চাই। জাতির জনক কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল মাদকমুক্ত বাংলাদেশ- আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ করতে চাই।

কুমিল্লার মানুষের ভালোবাসা আমার সাহস ও শক্তি-এমপি বাহারকুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ও নাগরিক সংবর্ধনা পর্ষদের আহবায়ক প্রফেসর রুহুল আমিন ভূইয়ার সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও কুমিল্লা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বেগম মেহেরুন্নেছা বাহার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এমরান কবির চৌধুরী, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএম ও কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক সংবর্ধনা পর্ষদের যুগ্ম আহবায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।

মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক রোমেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নাগরিক সংবর্ধনা পর্ষদের সদস্য সচিব ও কুমিল্লা অজিতগুহ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাসান ইমাম মজুমদার ফটিক।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সংবর্ধিত অতিথি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নাগরিক সংবর্ধনা পর্ষদের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা, সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট ও মানপত্র প্রদান করা হয়। মানপত্র পাঠ করেন নাগরিক সংবর্ধনা পর্ষদের সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ নুরুর রহমান।

কুমিল্লার মানুষের ভালোবাসা আমার সাহস ও শক্তি-এমপি বাহারবিকালে কুমিল্লা শহরের মুন্সেফ বাড়ি থেকে কুমিল্লা স্টেডিয়াম পর্যন্ত সংবর্ধনা কমিটির আহবায়ক প্রফেসর রুহুল আমিন ভূইয়ার নেতৃত্বে মোটর শোভাযাত্রাসহকারে সংবর্ধিত অতিথি তিনবারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। এ সময় স্বাগত সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংর্বধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনসিসি রোভার স্কাউটের ৩টি চৌকষ দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। বিএনসিসি স্কাউট দলের নেতৃত্ব দেন প্যারেড কমা-ার ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী। সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাফর সাদের। এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাথী, প্রিয়াঙ্কা ও একরামুল হক। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এডভোকেট সৈয়দ নুরুর রহমান। মাঠে ও গ্যালারীতে হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কর্ণিয়া ও মিনার। ছিল জলের গান। মাঠ ও গ্যালারি ভর্তি দর্শক সাংস্কৃতিক পর্ব উপভোগ করেন।

কুমিল্লার মানুষকে গর্বিত করার জন্য নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে এমপি বাহার বলেন, আপনাদের সন্তান, ১৯৮৪ সালের সেই ছোট্ট বাহার, আপনাদের সহায়তায় আজ এই জায়গায়, বার বার আপনারা সহায়তা করেছেন, আপনাদের অনেক সহায়তা পেয়েছি। গত নির্বাচনে আপনারা দু’মাস ধরে কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কাজ করেছে।

তিনি বলেন, আমার শক্তি সাহস হচ্ছে কুমিল্লার মানুষের ভালোবাসা। আপনাদের ভালোবাসায় আমি অনেক চড়াই উৎড়াই অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। আপনাদের ভালোবাসা, আমার স্ত্রীর সহযোগিতায় আমি কুমিল্লার বাহারে পরিণত করেছে, কুমিল্লাকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।

কুমিল্লার মানুষের ভালোবাসা আমার সাহস ও শক্তি-এমপি বাহারসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমপি বাহার বলেন, আসুন সবাই মিলে দুর্নীতি মুক্ত একটি সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করি। কুমিল্লা থেকে আমরা শুরু করি। আসুন আমরা প্রত্যেক অফিসে লিখে দেই আমাদের অফিস দুর্নীতি মুক্ত। এখানে ঘুষের কোন ব্যবস্থা নেই। আপনারা সরকারী কর্মকর্তা এখানে আছেন, আসুন আমরা লিখে দেই, বাংলাদেশ অবশ্যই দুর্নীতি মুক্ত হবে।

তিনি বলেন, মাদক যেভাবে বাংলাদেশকে, যুবসমাজকে ধ্বংস করছে, দুর্নীতি আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, দুর্নীতিমুক্ত না করলে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। আজকে রাজনীতিতে দুর্নীতিবাজ, প্রশাসনে দুর্নীতি, সাংবাদিকতায় দুর্নীতি, কিভাবে একটা দেশ এগিয়ে যাবে? আসুন আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করি একটা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের।
তিনি বলেন, মানসিকতার উন্নতি ঘটাতে পারলে জাতির উন্নতি হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পূর্বে আমি কুমিল্লাবাসীর কাছে ওয়াদা করেছিলাম। আমি সততার সাথে কাজ করবো। আমি সততার সাথে কাজ করেছি। ওয়াদার বরখেলাপ করিনি। আমি বলেছিলাম, কুমিল্লার মানুষের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা থাকবে। আমার দরজা খোলা ছিল, এখনও খোলা আছে। আজকে নাগরিক সংবর্ধনার মাধ্যমে আপনাদের দরজা আমার জন্য খোলে দিয়েছেন, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমাকে নির্বাচন করতে হয়। ২৩ বছর আমি দলীয় সদস্য পদ থেকে বঞ্চিত ছিলাম। শত বাধার মুখে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এ নির্বাচনে কুমিল্লার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একাকার হয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমি সকলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই।

আরো পড়ুন