কুমিল্লায় জ্বলে না গ্যাসের চুলা!

ডেস্ক রিপোর্টঃ ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাড়ে ৩টা। তখনই ঘুম থেকে জেগে ওঠেন মাসুদা মেহনাজ। যদিও পরিবারের অন্য সদস্যরা তখন গভীর ঘুমে। কিন্তু পরিবারের সবাই ঘুমে থাকলেও শীতের রাতে ঘুমানোর সুযোগ নেই ওই গৃহবধূর। কারণ রাত গড়িয়ে ভোর হলেই তাঁদের গ্যাসের চুলা আর জ্বলবে না। আর চুলায় আগুন না জ্বললে খাবারের জন্য কষ্ট পেতে হবে পরিবারের সবাইকে। গত দুই মাস ধরে এভাবে রাতে জেগে উঠে রান্নার কাজে লেগে পড়েন কুমিল্লার লাকসামের কোমারডোগা গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী মাসুদা মেহনাজ। তবে এ সমস্যা শুধু ওই গৃহবধূর একার নয়, গ্যাস সংকটে কয়েক মাস ধরে এমন দুর্ভোগে আছে কয়েক হাজার পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) লাকসাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে পরিচালনাধীন লাকসাম, বরুড়া, লালমাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলার কমপক্ষে ১০ হাজার গ্রাহক গ্যাস সংকটের কারণে ভোগান্তিতে রয়েছে। সরবরাহ লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় ভোর থেকে রাত অবধি গ্যাস সংকটের কারণে দিনেরবেলায় রান্না হয় না অনেক পরিবারে। বন্ধ থাকে ছোটখাটো অনেক কলকারখানাও। এ ছাড়া গ্যাস সংকটে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁও এখন প্রায় বন্ধের পথে। এতে লোকসানে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছর ধরে শীতকাল এলেই গ্রাহকরা এমন ভোগান্তিতে পড়লেও এ সমস্যা সমাধানে কার্যকরী তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) কুমিল্লা জেলায় গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু কুমিল্লায় গ্যাসের যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে তার বিপরীতে সরবরাহ অনেক কম। এ ছাড়া বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বাখরাবাদ গ্যাসের যে পরিমাণে বৈধ সংযোগ রয়েছে এর চেয়ে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা বেশি। বাখরাবাদ গ্যাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এর ঠিকাদারদের যোগসাজশে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত বছর অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও এর পরিমাণ অনেক কম। এসব কারণে বৈধ গ্রাহকরা গ্যাসের সংকটে পড়ে।

ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতকাল এলেই ভোর থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনেক সময় বিকেলে থেকে রাত ১০টার মধ্যে কিছুটা গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। আবার অনেক সময় দেখা গেছে গভীর রাতেও গ্যাস আসে না। এ সময়ের মধ্যে বাধ্য হয়ে কাঠ কিনে মাটির চুলায় বা সিলিন্ডার কিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়।

এদিকে নাম প্রকাশ না শর্তে বিজিডিসিএলের এক ঠিকাদার জানান, স্বল্প ডায়ামিটারের সরবরাহ লাইন থেকে শত শত গ্রাহকের সংযোগ দেওয়ার ফলে গ্যাসের চাপ কমে যায়। আর যেসব এলাকার তিন-চার ইঞ্চি ব্যাসের প্রধান লাইন থেকে গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে ওই সব এলাকায় গ্যাসের সংকট সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ১৯৮৫ সালে লাকসাম অঞ্চলে গ্রাহক ছিল দুই থেকে তিন হাজার। বর্তমানে বৈধ গ্রাহকের সংখ্যাই দাঁড়িয়েছে ১০ হাজারের বেশি। আগের বসানো লাইনে এখনো গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

লাকসামের কোমারডোগা গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা রাতে যখন ঘুমাতে যাই, তখন চুলায় গ্যাস আসতে শুরু করে। তখন কি আর রান্না করার অবস্থা থাকে? যার কারণে আমার স্ত্রীকে গভীর রাতে উঠে রান্না করতে হয়। অনেক সময় এক দিন রান্না করলে ফ্রিজে রেখে সেগুলো দুই-তিন দিন খাই। বাচ্চারা এই শীতে ঠাণ্ডা পানিতে গোসলও করতে চায় না। কারণ গ্যাস না থাকায় পানি গরম করার কোনো উপায় থাকে না।’

সূত্রঃ কালের কন্ঠ

আরো পড়ুন