কুমিল্লায় টানা বৃষ্টিতে অসহনীয় দুর্ভোগ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাব কুমিল্লায়ও পড়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কুমিল্লায় ৮১ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবারও সারাদিন দমকা ও ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে রবিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমে আবহাওয়ার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার সম্ভবনা রয়েছে। এদিকে শুক্রবার দিনভর টানা বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস এবং সড়কে সড়কে জমে থাকা হাঁটু পানিতে কুমিল্লার জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষদের বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া বিরতিহীন বর্ষণে শুক্রবার দিনভর চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারসহ কুমিল্লার নগরবাসী। এছাড়া মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতে কুমিল্লা শহরের বেশির ভাগ এলাকা হাঁটুপানিতে ডুবে যায়। সড়কে যানবাহন চলাচলও থমকে গিয়ে ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার সারাদিন বৃষ্টির পর সন্ধ্যার পর কিছুটা বিরতি থাকলেও গভীর রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সারাদিনের ভারী বর্ষণে কুমিল্লা রাজগঞ্জ থেকে চকবাজার সড়ক, নগরীর কান্দিরপাড় থেকে নজরুল এভিনিউ সড়ক, কর অফিস থেকে বাগানবাড়ি (ঠাকুরপাড়া) সড়ক এবং কুমিল্লার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হাটু পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় রূপ নেয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চারপাশ। প্লাবিত হয়ে পড়ে হাসপাতালের কয়েকটি ভবনের নিচতলা এবং প্রবেশপথগুলো। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় মুমূর্ষু রোগি, স্বজন, চিকিৎসক ও নার্সরা।

এছাড়া নগরীর অধিকাংশা এলাকায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নিম্নমানের এবং অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির পানি মুহুত্বের মধ্যে সড়ক থেকে সরতে না পারায় সড়কসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
সিরাজুল ইসলাম নামে পূর্ব বাগিচাগাঁওয়ের এক বাসিন্দা জানান, কুমিল্লার শহরে রাস্তার চেয়ে উঁচু করে ড্রেন নির্মাণের কারণে মানুষের বাড়ি-ঘর ড্রেনের নিচে পড়েছে। যার কারণে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতেই প্লাবিত হচ্ছে এলাকা। ঘর -বাড়িতে সহজে পানি প্রবেশ করছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে মানুষ।

বর্ষণে কষ্টের নগরী কুমিল্লাঅন্যদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে কখনও মাঝারি আবারও কখনও ভারী টানা বৃষ্টি ও হালকা বাতাসের কারণে ভোগান্তিতে পড়ে কুমিল্লার মানুষ। লোকজন বাইরে বের হতেও সমস্যার মধ্যে পড়ে। শুক্রবার যদিও সাপ্তাহিক ছুটির দিন তারপরও নগরীর অভ্যন্তরে তেমন লোকজন ছিল না বললেই চলে। রিকশা ও অটোরিকশাতেও ছিল না অন্যান্য দিনের মতো যাত্রীদের ভিড়।

এদিকে কয়েকজন নগর বাসিন্দা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, বৃষ্টি শীতের আগমনী বার্তা। তবে আরেক শ্রেণির মানুষ এই শীত শীত আমেজকে সাময়িক বলে মনে করছেন। তাদের দাবি বৃষ্টির কারণে সারাদেশে তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। যে কারণে কিছুটা শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। তাদের মতে, শীতের আগমণ কি না সেটা বুঝতে নিম্নচাপ কেটে যাওয়া পর্যন্ত অপো করতে হবে।

বাবুল নামে এক রিকশা চালক জানান, দুইদিনের টানা বৃষ্টিতে যাত্রীর পরিমাণ কমেছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় একটি ভাড়া শেষ করার পরও পড়নের ভিজে কাপড় নিয়ে দেড় থেকে ২ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও একজন যাত্রীও পাইনি। ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে ভুল করেছি। কারণ আয় না হলেও ভাড়া করা গাড়ির দৈনিক টাকা পরিশোধ করতে হবে মালিককে। এদিকে না বের হয়ে উপায় দেখিনি। বাড়ি রংপুর জেলায়। কুমিল্লায় পরিবার নিয়ে থাকি। আয় না থাকলেও প্রতিদিনের নির্দিষ্ট ব্যয়তো রয়েছে।

কুমিল্লার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, বৃহস্পতিবারের চেয়ে আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে কুমিল্লায় শুক্রবার দিনভর কখনও কখনও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সঙ্গে ঝড়ো বাতাসও ছিল। শনিবারও নিম্নচাপের প্রভাব কুমিল্লায় থাকবে। তবে দিন শেষে রবিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আবহাওয়ার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার সম্ভবনা রয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস গত ২৪ ঘন্টায় কুমিল্লায় ৮১ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

আরো পড়ুন