কুমিল্লায় পুলিশ কনস্টেবলের সাহসীকতা: প্রানে বেঁচে গেলো চালক-হেলপার !

মো. জাকির হোসেনঃ সন্ধ্যা হলেই শুনসান নিরবতা শুরু হয় নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে। মাঝে মাঝে দু একটা যাত্রীবাহী বাস-পিক আপ ভ্যান কিংবা মালবাহী ট্রাক সাঁই করে ছুটে চলে।

গত ৭ জুলাই সোমবার রাত সাড়ে আটটা। সড়কটির লালমাই উপজেলার জয়নগর চৌমুহনী এলাকায় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। কেউ একজন ফোনে টহল পুলিশকে জানায়, জয়নগর চৌমুহনী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি বালুবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মোবাইল ফোনে খবরটি শুনেই ঘটনাস্থলে হাজির হয় লালমাই থানার পুলিশের একটি টহল দল। ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি ২০/২২ জন বাসযাত্রী আহত হয়। বাসের মধ্যে আটকে থাকা আহত যাত্রীদের বের করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠায় টহল দলের পুলিশ সদস্যরা। এবার নজর পড়ে সংঘর্ষে ধুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রাকের দিকে। ট্রাকের চালক-হেলপার স্টেয়ারিং ও সীটের মাঝে আটকে আছেন। ব্যাথার যন্ত্রনায় ছটফট করছেন। এ দৃশ্য দেখেই পুলিশের টহল দলের কনস্টেবল হাসান এগিয়ে যায়। কাছে গিয়ে দেখে ট্রাকের ভেতর চালক ও হেলপার সীট ও স্টিয়ারিংয়ের মাঝে আটকে আছে। দু’জনের পা ভেঙ্গে রক্তাত্ব হয়ে আছে। শত চেষ্টা করেও চালক ও হেলপার ট্রাকের ভেতর থেকে বের হতে পারছে না।

এ দৃশ্য দেখে কনস্টেবল হাসান স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে অসীম ধৈয্য সহকারে মারাত্বকভাবে আহত ট্রাক চালক ও হেলপারকে বের করে আনতে সক্ষম হয়। শুধু বের করে এনেই দায়িত্ব শেষ করেন নি হাসান। দ্রুত নিয়ে যান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে দায়িত্বরত চিকিৎসক আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। পরে পুলিশের সার্বিক তত্বাবধানে আহত ট্রাক চালক ও হেলপারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। দূর্ঘটনায় পুলিশের তড়িৎ উপস্থিতি আহত যাত্রীদের খুব বেশী ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

খবর নিয়ে জানা যায় সড়ক দূর্ঘটনায় আহত ট্রাক চালক নাঙ্গলকোট উপজেলার দোলখাড় ইউনিয়নের মুগদাপাড়ার মো:নুরুল ইসলামের ছেলে মো:আবদুর রহিম। হেলপারের পরিচয় জানা যায় নি। বালুবাহী ট্রাক ও একুশে পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত বাসযাত্রী আনোয়ার হোসেন জানান, কনস্টেবল হাসানের অসীম সাহসিকতায় ট্রাকের সামনের অংশ ধুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় ট্রাকের স্টেয়ারিং ও সীটের মাঝে আটকে পড়া চালক ও হেলপারকে যেভাবে উদ্ধার করে প্রানে বাঁচালো তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আহত ট্রাক চালক ও হেলপারকে উদ্ধারের সময় কনস্টেবল হাসানও বেশ আহত হয়।

কনস্টেবল হাসান বলেন, পুলিশে চাকুরী করি দেশ ও মানুষের নিরাপত্তার জন্য। চোখের সামনে দু’জন লোক মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে তা সহ্য করতে পারিনি। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে ট্রাকের ভেতর লেপ্টে থাকা চালক ও হেলপারকে বের করে আনি। যখন তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করতে পারি তখন এক অন্য রকম প্রশান্তি অনুভব করি। মনে পড়ে পুলিশে যোগদান করে যখন শপথ নিয়েছিলাম দেশ ও জনগনের সেবা করার অঙ্গিকার করার কথা। এখন মনে হচ্ছে আমি আমার শপথের মান রাখতে পারছি। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও দেশ ও জনগনের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।

আরো পড়ুন