কুমিল্লায় প্রস্তুত প্রশাসন, ‘রাতে ভোট’ চান না কেউ

ডেস্ক রিপোর্টঃ কাল রোববার সকাল থেকে কুমিল্লার সাতটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট নেওয়া শুরু হবে। ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা বিরাজ করছে। তবে সুষ্ঠুভাবে ভোট নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

বিএনপি এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করছে। এ কারণে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে হবে মূল লড়াই। দলীয় প্রার্থীদের বিপরীতে রয়েছেন একই দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা। তাঁরা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তাঁরাই জয়ী হবেন। আর দলীয় প্রার্থীদের আশা, উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বেগবান করতে মানুষ নৌকা প্রতীকেই ভোট দেবেন।

আগের রাতে ব্যালট বাক্স যাতে না ভরা হয়, সে নিরাপত্তা চান আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী উভয় প্রার্থীরাই। ভোটের দিন স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকবে—এমন আশাও তাঁদের।

তিতাসে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসী, আগের রাতে ভোট কাটাকাটি ঠেকানো ও ভোটকেন্দ্রে ভোটারের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা (বুড়িচং, হোমনা, চান্দিনা ও মুরাদনগর উপজেলা) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা সকালে গিয়ে ব্যালট পেপার ও বাক্স যাচাই করতে পারবেন। রাতের বেলায় ভোট হলে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কাল বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, চান্দিনা, তিতাস, হোমনা ও মেঘনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে। এ সাতটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২২ জনসহ ৭৫ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এতে ৪৮৭ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৩ হাজার ২১৫ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৬ হাজার ৪৩০ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, অস্ত্রধারী আনসার, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম রয়েছেন।

সাতটি উপজেলায় ৪৮৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটার ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৭২৪ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৭ লাখ ৩৪৪ জন ও নারী ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮০ জন। ৪৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রার্থীরা।

বুড়িচং উপজেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হাসেম খান বলেন, ‘ভারেল্লা উত্তর, ভারেল্লা দক্ষিণ, ময়নামতি ও মোকাম ইউনিয়নে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে। ব্যালট পেপার ও বাক্স ভোটের আগের রাত থেকেই হেফাজতে রাখতে হবে।’

ওই সাত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট নেওয়া হবে। এর মধ্যে মেঘনা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জনসহ মোট প্রার্থী ১৫ জন, মুরাদনগরে চেয়ারম্যান পদে ৪ জনসহ ১৪ জন, বুড়িচংয়ে চেয়ারম্যান পদে ৩ জনসহ ১২ জন, তিতাসে চেয়ারম্যান পদে ২ জনসহ ১০ জন ও হোমনায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জনসহ ১০ জন, ব্রাহ্মণপাড়ায় চেয়ারম্যান পদে ২ জনসহ ৮ জন ও চান্দিনায় চেয়ারম্যান পদে ২ জনসহ ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন।

মেঘনায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুস সালাম ও মো. তাজুল ইসলাম বলেন, তাঁরা নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব চান না। প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চান না। ভোটাররা যাঁকে ভোট দেবেন তিনি জয়ী হলে অসুবিধা নেই।

ব্রাহ্মণপাড়ার বিদ্রোহী প্রার্থী মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে নিয়ে মিছিল–মিটিংয়ে থাকা মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের তিন প্রভাষককে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পদে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সরাতে হবে। সিল দিয়ে জাল ভোট মেরে একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে হবে।

চান্দিনায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি ও তাঁদের সন্তানদের অযাচিত প্রভাব ভোটের দিন দেখতে চাই না।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা (তিতাস, মেঘনা ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা) কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণের তথা ভোটারদের সন্তুষ্টি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা ভোটকেন্দ্রে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। মানুষ শান্তিতে ভোট দিতে পারবেন। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি রয়েছে।’

সূত্রঃ প্রথম আলো

আরো পড়ুন