কুমিল্লায় বিদেশ গমনেচ্ছুদের ফিঙ্গার প্রিন্টের ফি দিতে ভোগান্তি চরমে

কুমিল্লায় বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের ভোগান্তি বেড়েছে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে সরকার নির্ধারিত ফিঙ্গার প্রিন্ট ফি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ এবং শিউর ক্যাশে জমা দিতে গিয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন বিদেশ গমনেচ্ছু শত শত ব্যক্তি। এর কারণ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানে সার্ভিসগুলোর সার্ভারে ত্রুটি, স্বাভাবিক না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস থেকে দেওয়া পাসপোর্টের নম্বর সঠিক সময়ের মধ্যে অনলাইন ডাটা এন্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত না করা। এ ধরনের সমস্যাগুলোর কারণে একজন বিদেশ গমনেচ্ছুকে ফি জমা দিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই দোকান থেকে অন্য দোকানে দৌড়াদৌড়ি করে হয়রান হতে হচ্ছে।

বুধবার কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরাবাজার সিগাইল ইউনিয়নের সাগদা গ্রামের প্রবাসী আমির হোসেন ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে উঠে কুমিল্লার বাগিচাগাঁও জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার জন্য আসেন। তিনি সৌদি আরবে যাবেন। আগেও তিনি সৌদি আরবেই প্রবাসী হিসেবে ছিলেন। সকালে এসে ফরমপূরণ করে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমার সাথে ফি জমা দিতে গেলে তাকে জানানো হয় ফিঙ্গার প্রিন্টের ফি এখানে নেওয়া হয় না। পাসপোর্টে থাকা নম্বরে বিকাশসহ যে কোনও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। সহজ কথায় বিষয়টি স্বাভাবিক ভেবে প্রবাসী আমির হোসেন ছুটে যান বিকাশে লেনদেন করা হয় এমন পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে। কিন্তু, আশেপাশে মাত্র একটি দোকান হওয়ায় বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের ভিড়ে সেখানেও দীর্ঘ অপেক্ষা। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি দৌড়াতে থাকেন এদিক-সেদিক। কোথাও মিলছে না সেবা। আবারও ছুটে গেলেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে। সেখানেও পাননি কোনও সমাধান। রাস্তায় ছুটাছুটি করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলে ভুক্তভোগী আমির হোসেন একটু সহযোগিতা চেয়ে কথাগুলো জানান।

প্রবাসী আমির হোসেনের মতো একই সমস্যায় পড়েছেন বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তি আবুল কাউছারও। তিনি এসেছেন কুমিল্লার সদর দক্ষিণ গয়ির ভাঙ্গা উত্তরদা থেকে। আবুল কাউছার ফিঙ্গার প্রিন্টের ফি জমা দিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোথাও পারছেন না। পাসপোর্ট নম্বরসহ সকল কাগজপত্র সঠিক রয়েছে। কিন্তু বিকাশে ফি জমা দিতে গেলে দোকানি বলছেন পাসপোর্টের নম্বরে সমস্যা। যার কারণে টাকা পাঠানো যাচ্ছে না।

আমির হোসেন ও আবুল কাউছারে মতো কুমিল্লার ১৭ উপজেলাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর থেকে আসা বিদেশ গমনেচ্ছুদের মধ্যে প্রতিদিন শত শত ব্যক্তি এমন সমস্যায় পড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ফি জমা দিতে গিয়ে বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের ভোগান্তি ও সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ জানান, আগে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছুদের ফিঙ্গার প্রিন্ট ফি জমা নেওয়া হতো। এছাড়াও তাদের সুবিধার্থে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নিয়মিত নিয়োজিত ছিলেন এই ফি জমা নিতে। ফি প্রদানে যাতে করে বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের সুবিধা হয়। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে নতুন করে কার্যক্রম শুরু হলে ফিঙ্গার প্রিন্টের ফি মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ ও শিউরক্যাশের মাধ্যমে জমা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন সরকার। কিন্তু এতে প্রবাসী বা নতুন বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিরা ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ আরও জানান, বিদেশ গমনেচ্ছুদের ভোগান্তি ও তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়। তারা জানান, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভারে ত্রুটি থাকলে এই সমস্যা হবে। এছাড়া কোনও ব্যক্তিকে পাসপোর্ট দেওয়ার পরে এর নম্বর যদি ওই অফিসের কর্মকর্তা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এন্ট্রি না করেন তাহলে পাসপোর্ট পাওয়া ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট আসবে না। ফলে ফি জমা নেবে না। যেহেতু পাসপোর্টের নম্বরে ওই ফি প্রদান করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফলে পাসপোর্টের নম্বরটি ডেটা হিসেবে এন্টি করা অত্যন্ত জরুরি। তাই সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট নম্বরটি ডেটা হিসেবে এন্ট্রি হয়েছে কিনা তা যাচাই করেই ফিঙ্গার প্রিন্ট করতে এলে ওই ব্যক্তিকে আর ভোগান্ত পোহাতে হবে না।

আরো পড়ুন