কুমিল্লায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দের বছরের ছোট ছেলেটার শরিরটা ভালো না তাই রাতেই স্বামীকে জানিয়ে রেখেছিলো সোনিয়া। সকালে হাসপাতালে যাবে। বাড়ির কাছেই কাবিলা ইষ্টার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শুক্রবার রোজার দিন সকালে পরিবারের ততটা কাজ না থাকায় স্বামীকে দোকানের জন্য গুছিয়ে বিদায় দেয় সোনিয়া। দোকানে যাওয়ার আগেও স্ত্রী আর হাসিখুশি মুখে বাচ্চাদের সাথে কথা বলে যায় স্বামী রিপন মিয়া।

সকাল সারে ৯টায় কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার সৈয়দপুর ডুবাইরচর স্বামীর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পাশেই কাবিলা ইষ্টার্ণ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তার দেখাতে যাবে সোনিয়া। যাওয়ার সময় ৭বছরের মেয়ে এবং ৪বছরের মেঝো ছেলেকে রেখে যায় বাড়িতে। শাশুর শাশুড়ি কে বলে যায় “এই যাবো আর ডাক্তার দেখিয়ে চলে আসবো আম্মা ওদের একটু দেখে রাখেন”। ছেলে মেয়েকে বলে বলে যায় ” জ্বালাতন করবে না আম্মু একটু পরেই চলে আসতেছি”

যথাসময়ে ছোট বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আবার ফিরে আসার জন্য হাসপাতাল গেইটে ক্যান্টনমেন্ট মুখি মারুতি পরিবহন পেয়ে উঠে পরে গাড়ীতে। কিন্তু বিধাতার লিখন যে সোনিয়াকে নিয়ে যাবে চিরতরে না ফেরার দেশে তা করো কল্পনাতেই হয়তো ছিলো না। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কাবিলা ইষ্টার্ণ মেডিকেলের একটু পূর্বদিকে ঘটে গেল হৃদয় বিদারক এ ঘটনা। সময় তখন সকাল সারে ১০টা গাড়ির চাকা কিছুটা ঘুরতেই পেছন থেকে ঘাতক প্রান্তীক পরিবহনের একটি বাস সজোরে ধাক্কা মারে।

মায়ের কোল পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা তাই দেড় বছরের শিশু সন্তান অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হয় সোনিয়া আক্তার (২৩) । এছাড়াও গাড়ীতে থাকা ড্রাইভার ও আরো ২/৩জন অজ্ঞত যাত্রী। নাকেমুখে অনবরত রক্তগড়িয়ে পরছিলো সোনিয়ার। স্থানীয় লোকজন দৌড়ে আসেতেই ঘাতক বাসটি পালিয়ে যায়। উদ্ধার করা হয় গুরুতর আহত সোনিয়া, মারুতি গাড়ীটির চালক এবং অন্যান্য যাত্রী সহ সোনিয়ার শিশু পুত্রকে। কাবিলা হাসপাতালে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রেফার্ড করা হয় কুমেক হাসপাতালে। দ্রুত নেয়া হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খবর পেয়ে স্বামী সহ পরিবারের লোকজন হাসপাতালে যায়। তবে বিধিবাম
ডাক্তাররা চেষ্টার কোন ত্রুটি না করলেও বাঁচানো যায়নি সোনিয়াকে। দুপুর সারে১২টায় মৃত্যুর কাছে হারমেনে চলেযায় না ফেরার দেশে। শোকে অবিহ্বল স্বামী বোবা হয়ে যায় মুহুর্তে। লাশ নিয়ে আস হয় স্বামীর বাড়িতে। সৈয়দপুর এলাকার ডুবাইরচর রাজ্জাক মিয়ার ছেলে রিপনের বাড়িতে। ছোট ছোট এক কন্যা সহ ৩সন্তানের জননী সোনিয়ার লাশ দুপুর ২টায় বাড়িতে পৌছুলে পুরো এলকায় নেমে আসে শোকের ছায়। পাড়া প্রতিবেশী ও বাড়ির লোকজনের কান্নায় আকাশ বাতাস ভাড়ী হয়ে ওঠে এলাকার।

গত ১০বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় রিপন ও সোনিয়ার। একই উপজেলার নাজিরা বাজরের বারেক মিয়ার কন্যা সোনিয়ার সাথে ক্যান্টনমেন্ট মার্কেটের ঝর্না কসমেটিকস এর স্বত্তাধীকারি ডুবাইরচর এলাকার রিপন মিয়ার সাথে। ১০বছরের সংসার জীবনে সোনিয়া ও রিপনের পরিবারে আরো তিন সদস্যের আগমন ঘটে। বড় মেয়েটি ২য় শ্রেনিতে পড়ে এছাড়া ছোট দুটো ছেলে যথাক্রমে ৪ বছর ও দেড় বছর। ডুবাইর চর এলাকায় সোনিয়ার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে কেবল কান্নার রোল শোনা যাচ্ছিল। বিলাপ করে সোনিয়ার স্বজনরা কেবল বলছিলো “এই যাবো আর আসবো বলে কই চলে গেলিরে সোনিয়া”।।

কিছুক্ষণ পরেই জানা খবর পাওয়া গেলো মারুতি গাড়ীর চালক কুমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু বরন করছে। এছাড়া আরো তিনজন আহতে হয়েছে। তারাও কুমেক হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে অবস্থান করছেন। ( দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহত অন্যান্যদের বিষয়ে খোজ নেয়া হচ্ছে। এ রিপোর্ট লিখার সময় নিহত চালক ও আহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি )

এবিষয়ে ময়নামতি হাইওয়ে থানার এসআই আঃ ছালাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মারুতি গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে হতাহত কাউকে পাওয়া যায় নি। অারেকটি যাত্রীবাহী বাস কুমিল্লা সেনানীবাস এলাকার নাজিরা বাজার সংলগ্ন মহাসড়ক থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত বাসটির নং ঢাকা মেট্রোঃ জ ১১-১৫৬১। নিহত ও আহতদের বিষয়ে এখনো কোন তথ্য পাওয়া যায় নি বলেও তিনি জানান।

আরো পড়ুন