কুমিল্লায় রোগীদের ভোগান্তির কারণ রিপ্রেজেন্টেটিভ

সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজঃ কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারের সামনে অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) চিকিৎসাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে টানাটানির কারণে রোগীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে রোগীদের গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। রিপ্রেজেন্টেটিভরা মোবাইলে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে তা ইন্টারনেটে ছাড়ছেন। এ নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে রিপ্রেজেন্টেটিভদের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। কুমিল্লার সিভিল সার্জন রিপ্রেজেন্টেটিভদের এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে নোটিশ জারি করলে বিষয়টি কিছু দিন সহনীয় পর্যায়ে ছিল। এখন আবার তাদের উৎপাত আগের চেয়েও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগীরা।

কুমিল্লায় একটি সরকারিসহ পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে দুই শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। শুধু সিএমএইচ বাদে এর সবগুলোতেই রয়েছে রিপ্রেজেন্টেটিভদের বেপরোয়া উৎপাত।

কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে এবং ডাক্তারদের চেম্বারে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ঢোকার বিভিন্ন দিন ও সময় নির্ধারণ করা আছে। অনেক হাসপাতালে নোটিশও টানানো হয়েছে। কিন্তু সে নোটিশ বা নিয়মের তোয়াক্কা না করেই রোগীদের চিকিৎসাপত্র নিয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধ লেখা আছে কিনা, তা দেখতে রোগীদের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময়ের বাইরেও চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করেন। কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডাক্তারের চেম্বার ঘিরে প্রতিদিনই থাকে রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভিড়। কোনো রোগী ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাত থেকে ছুঁ মেরে চিকিৎসাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে মোবাইলে ছবি তুলেন তারা। কুমিল্লার একটি হাসপাতালে চান্দিনা থেকে আসার আবুল হাসান নামে এক রোগী বলেন, বুকে ব্যথার চিকিৎসা নিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে বেরুতেই তাড়াহুড়ো করে দুজন ভদ্রলোক এসে প্রেসক্রিপশনটি কোনো অনুমতি ছাড়াই নিয়ে গিয়ে ছবি তুলে নিল। কষ্ট হলেও দাঁড়িয়ে থেকে ওদের ছবি তুলতে ও লিখতে সময় দিয়েছিলাম। পরে দেখি ডাক্তারকে জড়িয়ে ওই দুজন উল্টাপাল্টা মন্তব্য এবং ডাক্তারকে বাজে গালমন্দ করছে তাদের ওষুধ না লিখায়।

এ ব্যাপারে ওষুধ কোম্পানির এক প্রতিনিধি জানান, কোম্পানি থেকে তাদের পাঠানো হয় তাদের কোম্পানির ওষুধ ডাক্তার লিখছেন কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য। শুধু তিনি নন, প্রতিটি কোম্পানির প্রতিনিধিকেই এখানে পাবেন। সবার একই দায়িত্ব, প্রেসক্রিপশন পরীক্ষা করা। কারণ এর ওপর তাদের পদোন্নতি নির্ভর করে।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, কয়েক মাস আগে আমরা একটি চিঠি দিয়েছিলাম বিভিন্ন হাসপাতাল ও ওষুধ কোম্পানির কাছে। এটি আইন সঙ্গত নয়। রিপ্রেজেন্টেটিভদের এটি অন্যায় আচরণ। প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে অনলাইনে পাঠালে রোগীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা হয় না। তিনি বলেন, রিপ্রেজেন্টেটিভরা আবার রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করব। খুব সহসা আবারও হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হবে।

সূত্রঃ আমাদের সময়

আরো পড়ুন