কুমিল্লা ফুটওভার ব্রিজ আছে-তবুও ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার!

ডেস্ক রিপোর্টঃ বেলা আড়াইটা। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা মহানগরীর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা। মহাসড়কের সড়ক বিভাজকের দু’পাশ দিয়েই যাত্রীবাহী বাস- পণ্য আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক পিকআপ ও লরি দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে । পাশেই পথচারীদের সড়কের এপার থেকে ওপারে পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সামান্য সময় বাঁচানোর জন্য মহাসড়কের সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়েকর এপার থেকে ওপারে যাওয়া আসা করছে পথচারীরা। একটু অসাবধানতায় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। কিন্তু তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই পথচারীদের। আছে ফুটওভার, তবুও ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষ মহাসড়ক পারাপার হচ্ছে । এ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য বিভিন্ন সময় সভা সেমিনার করলেও সচেতন হচ্ছে না সাধারণ মানুষজন।

একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে সড়ক মহাসড়কে অসচেতনভাবে চলাচলের কারণে গত দু’বছরে শুধু কুমিল্লা জেলায় সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত পনেরোশ জন।

সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে- সর্বোপরি মানুষ নিহত হওয়া রোধসহ যানজট নিরসনে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ,সড়ক ও জনপদ বিভাগ ( সওজ), সচেতন নাগরিক কমিটি( সনাক), জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ অনেক সভা সেমিনার করলেও সচেতন হচ্ছে না সাধারণ মানুষজন। অচেতনভাবে সড়ক পারাপার করতে গিয়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। যার ফলে মৃত্যু নয়তো পঙ্গুত্ব বরণ করে নিচ্ছেন।

আসলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করতে সচেতনতার বিকল্প নেই বললেন কুমিল্লা সচেতন নাগরিক কমিটি ( সনাক) সভাপতি বদরুল হুদা জেনু। তিনি বললেন, শুধুমাত্র সচেতন ভাবে সড়কে চলাচল করলেই আশিভাগ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। সচেতনভাবে ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চললে জীবনের যেমন ঝুঁকি থাকে না, ঠিক তেমনি সড়ক দুর্ঘটনার মতো একটি ব্যাধি আর বিস্তৃতি লাভ করতে পারে না। অন্যথায় অকালে কারো জীবন যেন না হারাতে হবে, না হয় পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হবে। সচেতন হতে হবে। এখানে নিয়মের কিছু নেই। তবে নিজেরা সচেতনভাবে সড়কে চলাচল করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সচেতনভাবে সড়কে চলাচল করবে, কমবে সড়ক দুর্ঘটনা।

ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষজন মহাসড়ক পারাপারের বিষয়ে কুমিল্লা ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক কামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের যে পরিমাণ ট্রাফিক সদস্য রয়েছে তা অপ্রতুল। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ ভিআইপি প্রটোকলে আমাদের সদস্যদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়। এখন সড়কে যদি সাধারণ মানুষজন অসচেতনভাবে পারাপার হয় এবং কোন দুর্ঘটনার শিকার হয় এ নিয়ে আমাদের আফসোস ছাড়া আর কিবা করার আছে। তবুও আমরা সাধারণ মানুষদের প্রায়ইশ সচেতনভাবে সড়ক পারাপারে সাহায্য করি,সচেতনতা সৃষ্টিতে সভা সেমিনার করি। তারপরেও যদি অসচেতনভাবে কেউ সড়ক পারাপার হয় বিশেষ করে মহাসড়কে ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও ব্যস্ত মহাসড়কের মাঝে দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

পদুয়ার বাজার এলাকায় যারা ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের এপার থেকে ওপারে পারাপার হয় তাদের মধ্যে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ওবায়েদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ত মহাসড়কের মাঝ দিয়ে দৌড়ে সড়ক পার হলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়েদ জানান, ফুটওবার ব্রিজ দিয়ে গেলে সময় অপচয় হয়, কিন্তু জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্য কি বেশি এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সামনে এগিয়ে যায় ওবায়েদ।

একহাতে চার বছর বয়সী ছেলে কোলে এক বছর বয়সী এক নারী ব্যস্ত মহাসড়কের মাঝ দিয়ে অনেকটা দৌড়ে এসে সড়ক বিভাজকে উঠলেন। কিছুটা থেমে আবার দৌড় দিয়ে বাকিটা সড়ক পার হলেন। এভাবে সন্তান ও নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে মহাসড়ক পার না হয়ে পাশের ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করলেও তো পারতেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই গৃহিণী বললেন, ভাই দুই সন্তান নিয়ে ব্রিজের সিড়ি ভেঙে সড়ক পার হওয়া কষ্টের। তাই সড়কের মাঝ দিয়ে কোন রকম পার হলাম। যদি সড়ক দুর্ঘটনায় পড়তেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওই গৃিহণী বললেন আল্লাহ ভরসা। কিচ্ছু হইতো না।

তবে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমিয়ে আনতে সড়ক সংস্কার, বিভিন্ন সাইনবোর্ড টানানো হয়। বিশেষ করে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছি বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কের পাশে- বললেন কুমিল্লা সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হায়দার। তারপরেও যদি সাধারণ পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সড়কের মাঝ দিয়ে চলাচল করে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই সবাই স্ব- স্ব অবস্থান থেকে সচেতন হোক। তাতে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।

আরো পড়ুন