কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারে জড়িত শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর

ডেস্ক রিপোর্টঃ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে শাখা ছাত্রলীগের কতিপয় বেপরোয়া নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার (১০ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে মূল ফটকের সামনে ঐ শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এই নেতাদের মধ্যে তিনজন পূর্বে মারধরের অভিযোগে বহিস্কৃত হয়েছিলেন।

বুধবারই (৯ মে) তিন জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেপারোয়া হয়ে উঠেছে ঐ তিন নেতাকর্মী এমনটাই অভিযোগ উঠেছে ঐ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ইংরেজি বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশরাফুল সৌরভকে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহুল হক শান্ত (পদার্থ বিজ্ঞান), উপ-প্রচার সম্পাদক আহমেদ আলী বোখারী (তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি), উপ-সমাজবিষয়ক সম্পাদক মুনতাসির আহমেদ হৃদয় (হিসাব ও তথ্য বিজ্ঞান), চাই মং মারমা (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা), জুনায়েদ ও জয় (হিসাব ও তথ্য বিজ্ঞান), মাসুম (ফার্মেসী) সহ বেশ কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী।

তারা প্রথমে সৌরভকে বাস থেকে নামিয়ে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের বাহিরে নিয়ে আসে। শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বায়জিদ ইসলাম গল্প উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের থামানোর চেষ্টা করেন। এরপরও সৌরভকে ধারাবাহিকভাবে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে অভিযুক্তরা। এক পর্যায়ে সৌরভ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সৌরভ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছ মৌখিকভাবে ঘটনার বিবরণ দেয়।

ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী জানান, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে শহরে যাওয়ার জন্য বাসে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় বেশ কয়েকজন এসে আমাকে ক্যাম্পাস গেটে যাওয়ার জন্য বলে। আমি যেতে অনিহা প্রকাশ করায় তারা আমাকে জোর করে টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের গেটে নিয়ে যায় এবং কিছু না বলেই আমাকে মারধর শুরু করে। আমি কারণ জানতে চাইলে ওরা আমাকে আরও মারধর করে।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন বলেন, ‘আমি এখন ঢাকাতে আছি। আমি জানতে পেরেছি এক শিক্ষার্থী কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র ফেইসবুক গ্রুপে সরকার ও পরিকল্পনা মন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে বলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে মারধর করেছে।’

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘শুনেছি এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী উত্তম-মাধ্যম দিয়েছে। ঐ ছেলে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রীকে নিয়ে ফেইসবুকে বিরুপ মন্তব্য করেছে বলেই তাকে মারধর করেছে’।

কিন্তু মারধরের সময় কেউই এমন কারণ উল্লেখ করে নাই এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে মারধরের সময় অভিযুক্তরা শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্যই মারধর করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা আমি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।’

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় গত ৬ মে (রবিবার) আইন বিভাগের ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী মহিবুল হক রাইমকে মারধর করে উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

আরো পড়ুন