কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচারের অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের এক ছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রোগ্রাম পরিচালকের কাছে এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক বলছেন, অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের অষ্টম ব্যাচের প্রথম ট্রাইমিস্টারের ০০১ নং কোর্সের পরীক্ষা দিতে বিভাগে আসেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। বিকেল সাড়ে ৫টায় পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে বিভাগীয় প্রধান মোবাইল ফোন সঙ্গে না রেখে সবাইকে পরীক্ষা দিতে বলেন।

‘বিষয়টি শুনে ওই ছাত্রী মোবাইল ফোনটি নিজের ব্যাগে রেখে আসেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষে ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করে দেখেন, সিম অদলবদল করা এবং মেমোরি কার্ডের জায়গায় নষ্ট একটি মেমোরি কার্ড লাগানো রয়েছে। বিষয়টি জানার জন্য ওই শিক্ষককে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ওই শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাবে ভুক্তভোগী ছাত্রীর রাজি না হওয়া সংক্রান্ত অনেক তথ্য মোবাইল ফোনটিতে ছিল।’

প্রমাণগুলো নষ্ট করার জন্য অভিযুক্ত শিক্ষক সবকিছু মুছে দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

অভিযোগকারী ছাত্রী বলেন: বিভাগীয় প্রধান প্রথমে আমাকে ব্যাচের সিআর হিসেবে নির্বাচন করে এবং বিভিন্ন সময় আমাকে রুমে ডাকতেন। এছাড়াও আমাকে ব্যক্তিগত রুমে ও শহরের বাসায় ডাকতেন। কিন্তু আমি বিভিন্নভাবে সেই প্রস্তাব এড়িয়ে যেতাম। পরবর্তী সময়ে আমাকে প্রলোভিত করার জন্য মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মেসেজ দিয়ে অনেক কিছু বলত। আমি তার বিষয়গুলোতে সাড়া না দেওয়ায় আমার ফোন থেকে সব নিয়ে মুছে দেয়।

অভিযুক্ত শিক্ষক ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আলী রেজওয়ান তালুকদার বলেন: আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ যেহেতু দেওয়া হয়েছে তা প্রমাণ করার বিষয়। প্রমাণ করলে বিষয়টি বোঝা যাবে।

ইংরেজি বিভাগের প্রোগ্রাম পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান বলেন: আমি অভিযোগ পেয়েছি। প্রোগ্রামের সঙ্গে যারা আছেন সবাইকে নিয়ে বসে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন: এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছি। উপাচার্যের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বক্তব্য মিথ্যাচার, যৌন হয়রানীর শিকার ছাত্রীর দাবীঃ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলী রেজওয়ান তালুকদার সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানীর অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করলেও অভিযোগকারী ছাত্রী পাল্টা দাবী করে বলেছেন, এটাও ওই শিক্ষকের একধরণের মিথ্যাচার। যৌন হয়রানীর সামগ্রিক ঘটনাকে আড়াল করে সাজানো ও মনগড়া বক্তব্য দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা করছে ওই শিক্ষক। রোববার দুপুরে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে ওই শিক্ষক সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কুবি শিক্ষক আলী রেজওয়ান সান্ধ্যকালীন কোর্সের ওই ছাত্রীর পরিচয় তুলে ধরে তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন, পরকীয়ায় আসক্তসহ তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে এবং এসবের নেপথ্যে ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষকের ইন্ধন রয়েছে বলে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন। সংবাদ সম্মেলনে ওই ছাত্রীর ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় কিভাবে জানেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে যান শিক্ষক রেজওয়ান। তাঁর বক্তব্যে ব্যাপক মিথ্যাচার রয়েছে এমনটি আঁচ করতে পেরে তিনি তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন।

এদিকে এবিষয়ে জানতে চাইলে যৌন হয়রানীর শিকার ওই ছাত্রী জানান, ‘কোর্সের ক্লাস শুরুর সময় ওই শিক্ষক আমাকে ক্লাস প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন। পরীক্ষায় নাম্বার বাড়িয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আমার ফোন নম্বর নিয়েছিলেন। আমার সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগও স্থাপন করেছিলেন। ম্যাসেঞ্জারে খালি গায়ের ছবি পাঠাতেন। বিভিন্ন সময়ে আমাকে নানা কারণে তার রুমে ডাকতেন। এছাড়া পরীক্ষায় নাম্বার বাড়িয়ে দেবে বলে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিতেন এবং কুমিল্লা শহরে নিজের বাসায় যাওয়ারও প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। ওনার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যৌন হয়রানীর অভিযোগ করেছি। ওই শিক্ষক নিজেকে বাঁচানোর জন্য এবং ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যের পুরোটাই মিথ্যাচার। আমি আমার অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করছি এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি, যাতে আর কোন ছাত্রী ওই শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানীর শিকার না হয়’।

সূত্রঃ ইনকিলাব ও চ্যানেল আই

আরো পড়ুন