কুমিল্লা বুড়িচং আ’লীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী বিতর্কের ঝড়

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে দলীয় অঙ্গনে নেতাকর্মীদের মাঝে বিতর্কের ঝড় বইছে। গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদেরসহ বিএনপি-জামায়াত ও অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের সমন্বয়ে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ করেন দলের স্থানীয় অধিকাংশ নেতাকর্মী। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং চরম আকার ধারণ করেছে। তারা এ ধরনের কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে বিগত সময়ে দলের জন্য ত্যাগী ও পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠনের জন্য দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের উপজেলা কমিটি গঠনের বিষয়ে উপজেলা কিংবা জেলা কার্যালয়েও নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক বা সিদ্ধান্ত হয়নি। কোন ধরণের সম্মেলন, প্রচার-প্রচারণা ও বৈঠক ছাড়াই গত ৩০শে সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদনের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। তারা জানান, স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর ঢাকার বাসায় বসে কিছু বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী লোকের সমন্বয়ে মনগড়াভাবে এ ধরনের কমিটি করা হয়েছে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া আখলাক হায়দারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি স্বাক্ষরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৮ই সেপ্টেম্বর আখলাক হায়দারকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়।

ওই নোটিসে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং নানাবিধ তৎপরতায় সংগঠনের আদর্শ, শৃঙ্খলা বিরোধী ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগের বিষয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না উল্লেখ করে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে প্রেরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরও তড়িঘড়ি করে কোনরুপ সম্মেলন ছাড়াই আখলাক হায়দারকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি করায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার একাধিক সিনিয়র নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভার বরাত দিয়ে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর স্বহস্তে লেখা প্রেসনোটের একাংশে উল্লেখ করেন, ‘সারা দেশের আওয়ামী লীগ এর আহ্বায়ক কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। যেহেতু আহ্বায়ক কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়, সেহেতু বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন কমিটি প্রকাশ করা হয়, যা আমি কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হয়েও অবগত নই এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভার সিদ্ধান্তের পরিপন্থি বটে।’ কিন্তু এর ৩ দিনের মাথায় ৩০শে সেপ্টেম্বর বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদিত কমিটির তালিকা প্রকাশকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও পকেট কমিটি’ বলে দাবি করেন নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তত ৬ জন নেতা বলেন, বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কমিটির মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে ১৫-২০ বছরের পুরনো কমিটি দিয়ে দলের কার্যক্রম চলছে। উপজেলার সব ইউনিয়নের কমিটি করার পর ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন করে দলের উপজেলা কমিটি করা হলে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হতো, পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের পদ-পদবি দিয়ে মূল্যায়ন করা যেত কিন্তু তা না করে হঠাৎ অনুমোদিত কমিটির তালিকা প্রকাশ করায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বলেন, ‘ওই কমিটির তালিকায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আমার নাম রাখা হয়েছে, কিন্তু কীভাবে কমিটি হলো তা আমি জানি না। তবে এ কমিটির তালিকার সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান এবং সাধারণ সম্পাদক আখলাক হায়দার। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আখলাক হায়দার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এজন্য দল থেকে আখলাক হায়দারকে কারণ দর্শানোর জন্য চিঠি দিয়েছে। এছাড়া গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অন্তত অর্ধশত বিদ্রোহী এবং বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল থেকে অনুপ্রবেশকারী বিতর্কিত লোকদের নাম কমিটির তালিকায় রয়েছে, যা দুঃখজনক। কোনরূপ সম্মেলন না করে স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু সাহেবের ঢাকার বাসায় বসে এ ধরণের পকেট কমিটি করা হয়েছে। এতে সংগঠনের ত্যাগী ও পোড় খাওয়া নেতাদের মূল্যায়ন হয়নি। এ ধরনের কমিটির কারণে দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে কমিটি বাতিল করে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করার দাবি জানাচ্ছি।’

কমিটির বিষয়ে অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান বলেন, ‘এমপি বলেছেন আগে কমিটি হোক, পরে আখলাক হায়দারকে দেয়া দলের শোকজের বিষয়টি সুরাহা করে সম্মেলন করা যাবে- এতে অসুবিধা নেই। তবে এ কমিটিতে যারা আছে তাদের কেউ কেউ হয়তো অনেক আগে বিএনপি-জামায়াত বা অন্য দলের রাজনীতির সঙ্গে ছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছে, এখন তারা আওয়ামী লীগ।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু সাংবাদিকদের বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার কারণে কম সময়ের মধ্যে কমিটি করতে হয়েছে। তাই সম্মেলন করা যায়নি। সহসাই দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।

সূত্রঃ মানবজমিন

আরো পড়ুন