কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা

মো. জাকির হোসেনঃ কুমিল্লার সীমান্তবর্তী উপজেলা ব্রাহ্মণপাড়া। জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরের এই উপজেলায় রয়েছে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট সরকারী হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে কিছুটা চিকিৎসক সংকটের সাথে রয়েছে অপর্যাপ্ত জনবল। পাশাপাশি ঔষধ সংকটে রোগীরা পাচ্ছেনা পর্যাপ্ত ঔষধ। এরসাথে রয়েছে খাবারের নিম্নমান। মোট কথা রোগীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী সব কিছুই স্বাভাবিক।

সরেজমিন ঘুরে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়,সীমান্তবর্তী এই উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি বর্তমানে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট। তবে প্রস্তাবিত ৫০ শয্যার। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানালেন,অচিরেই ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে।

এই উপজেলায় রয়েছে ৮ টি ইউনিয়ন। জানা গেছে,বর্তমানে এই হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১৪ জন চিকিৎসক। তাদের মাঝে আবার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে এই চিকিৎসকদের। ফলে কার্যত উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে আসা রোগীদেরও স্বাভাবিক চিকিৎসা দিতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। প্রায় ৪ লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত এই উপজেলার জনগণের একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

তবে চিকিৎসক সংকটই শুধু না, এখানে নেই জরুরী ভিত্তিতে রোগী স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত এ্যাম্বুলেন্স চালক, এক্সরে মেশিন নস্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন নেই, ইসিজি মেশিন, ডেন্টাল চিকিৎসার সরঞ্জাম নাই, আছে চিকিৎসক, নেই এ্যনেসথেসিস্ট ডাক্তার, সাথে আরো নেই পর্যাপ্ত সুইপার, ফার্মাসিষ্ট, দারোয়ান, স্টোরকিপার, ওয়ার্ড বয় কিছুই নেই। এই অবস্থায় প্রতিদিন আসা উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে রোগীরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা।

এই হাসপাতালটির ৩১ শয্যার মাঝে পুরুষ ১৩ টি, নারী ১০, শিশু ৬ এবং ডায়ারিয়া রোগীর জন্য বরাদ্দ ২ টি শয্যা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায় ,চিকিৎসক আসেন, তবে হাসপাতাল থেকে কোন ঔষধ পাইনা। হাসপাতাল সুত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে এখানে শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতালের বেডগুলোও থাকে পরিপূর্ণ।

একাধিক রোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্যারাসিটামল জাতীয় কিছু ঔষধ দেওয়া হলেও প্রায় সব ধরনের ঔষধ দোকান থেকে কিনে আনতে হয়। উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের সিদ্দিক মিয়া (৫৮) জানান, ২০ দিনের বেশী হয়েছে এখানে ভর্তি হয়েছি, সেবা পাচ্ছি, তবে বেশীর ভাগ ঔষধ বাহির থেকে কিনছি। একই কথা বললেন, উপজেলার নন্দীপাড়া গ্রামের সফিকুল ইসলাম (৪৮), দুলালপুর গ্রামের আব্দুল মতিন (৭৬), শিশু ওয়ার্ডে থাকা বেজড়া গ্রামের শিখা আক্তার।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বললেন, রোগীর পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে, কোন সংকট নেই। এদিকে হাসপাতালটিতে যখন রোগীরা ঔষধ সংকটে বাধ্য হয়ে নিজেরাই দোকান থেকে ঔষধ ক্রয়ে বাধ্য হচ্ছেন, তখন ওই রোগীদেরও জন্য বরাদ্দ খাবারের মান নিয়েও অভিযোগ অনেক রোগীর। তারা বলছেন, দুপুরে বা রাতে বিভিন্ন কম মূল্যের বা পোনা মাছ রোগীদেরও খাদ্য তালিকায় রাখা হয়েছে। অথচ প্রতিটি রোগীর জন্য প্রতিদিন মান সম্পন্ন মাছ বা মুরগী খাদ্য তালিকায় রাখার কথা ছিল।

দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, রোগীদের জন্য প্রতিদিন সর্ব নিম্ন এক কেজি ওজনের মাছ বা মুরগীর মাংস সরবরাহের কথা থাকলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতীর কারনে রোগীদের পোনা মাছ খেতে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানায়, খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার মনিরুল হক কারো কথা শুনেন না। হাসপাতালের খাবারের নিম্ন মান সম্পর্কে জানতে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার মনিরুল হকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নিয়মনীতি মেনেই রোগীদের খাবার সরবরাহ করা হয়। কোন অনিয়ম নেই খাবারের তালিকায়। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল মালেকের কাছে ঔষধ স্বল্পতা, খাবারের নিম্ন মান বিষয় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সব কিছুই ঠিকঠাকভাবে চলছে।

আরো পড়ুন