কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে মেডিকেলে চান্স পেলো ২০০ শিক্ষার্থী

প্রতি বছরের মত এবছরও মেডিকেলে চান্স পাওয়ার দিক থেকে দেশের শীর্ষস্থানে রয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজ প্রতি বছর মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার দিক থেকে সারাদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে এগিয়ে থাকে। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এবার প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। গত বছর মোট ১৬৫ জন শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সাফল্যের পেছনে শিক্ষকদের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘এখানে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানসিক একটা পরিবর্তন হয়। এ কলেজে ভর্তি হওয়া মানে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, ভালো জায়গায় চান্স পেতে হবে। ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে, ভালো জায়গায় যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানের ব্যাপারে কলেজের শিক্ষকরা খুব দক্ষ, প্রশীক্ষিত এবং আন্তরিক। তারা প্রতিটি ক্লাস গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং ক্লাস নেওয়াতে তারা কখনো অবহেলা করেন না। শিক্ষকরা প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে বড় হওয়ার অনুপ্রেরণা দেন এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’

করোনায় অব্যাহত ছিল পাঠদান

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সবকিছু যখন স্থবির, তখনও বন্ধ ছিল না ভিক্টোরিয়া কলেজের পাঠদান। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘করোনার আগে যেমন ক্লাস, সাপ্তাহিক পরীক্ষা নেওয়া হতো, এখন মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা অনলাইনে ক্লাস, অনলাইন সাপ্তাহিক পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো ক্লাস থেকে বিচ্ছিন্ন না থাকে, সে জন্য ক্লাসের শুরু এবং শেষে হাজিরা নেওয়া হয়।’

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘করোনার মধ্যেও আমাদের কোনো ক্লাস বন্ধ হয়নি। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে বছরের শুরু থেকে একটা কাউন্সিলিংয়ের উপর রাখি। তাদেরকে স্বপ্ন দেখাই, তোমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেতে হবে। তোমাকে হতে হবে জাতির কর্ণধার।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক দিন মোট ছয়টা ক্লাস হয় এবং সপ্তাহে একদিন প্রত্যেক বিষয়ের উপর পরীক্ষা নেওয়া হয়। এক অধ্যায় পড়ানোর পর এমসিকিইউ আকারে পরীক্ষা নিই এবং এমসিকিইউ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখানো হয় ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি ধরন, যাতে তারা বিভিন্ন এডমিশন পরীক্ষায় এগিয়ে থাকে। এমন পরীক্ষাগুলোর জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা খুব উপকৃত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত পরীক্ষা ছাড়াও আমরা প্রতি মাসে একটা মূল্যায়ন করে পরীক্ষা নিই। ওই পরীক্ষার মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এতে আমাদের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আরো আগ্রহী হয়ে যায়।’

চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা

ঢাকা মেডিকেল কলেজে জান্নাতুল মাওয়া মুমু, ফারহানা রহমান, কাজী লামিয়া সুলতানা, নুসরাত জাহান।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, পারভীন আক্তার, শারমিন আক্তার, নাজমা খাতুন।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সাবেকুন্নাহার শারমিন, সামিহা নুর, মরিয়ম জাহান তামান্না, সাদিয়া রহমান আফনান, ফাতিহা বিনতে ঈসমাইল, ফাহমিদা জাহান অনিকা।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে তানজিলা বিনতে ওয়াহিদ, নাজমুন নাহার বিথী।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ওসমা হাবিব, সায়মা।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে রুনা লায়লা, আয়শা সিদ্দিকা মিটু, আজাদুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে জান্নাত আক্তার লাভনী, উম্মে হালিমাতুস সাদিয়া, সাবিহা, জান্নাতুল মাওয়া অনামিকা।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ, সানজিদা।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে সাবিকুন নাহার সারমিন, মিথিলা আফরোজা মিটু, ফারিয়া আক্তার।

টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে নাফিসা তাবাসসুম তাসনিয়া।

বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে সাদিকা বিনতে বাশার নীলা, হাফসা জান্নাত, মো. নাঈম রহমান।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে আফসারা তাহসিন, নাজমুল হোসাইন, জাকিয়া সুলতানা লিমা, অর্পি বারুয়া, অনন্তা কুমার ভৌমিক, ফাহিম মোস্তফা তানিন।

সিরাজগঞ্জ শহীদ মোহাম্মদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে নাজিলা হোসাইন সুপরা।

নোয়াখালী আবদুল মালেক উল মেডিকেল কলেজে ফারজানা আক্তার সায়মা।

মানিকগঞ্জ কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজে প্রিতম দেব নাথ, সাকিব।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে এসএম মাসহিউর রহমান।

খুলনা মেডিকেল কলেজে মো. সাব্বির বিন এনাম, শাহাদাত।

যশোর মেডিকেল কলেজে আবু সালেহ আল কাদেরী।

পাবনা মেডিকেল কলেজে হাফসা আক্তার, আব্দুল মান্নান।

আগ্রহ-ই সফলতায় পৌঁছে দেয়

অধ্যাপক মো. ইউনুস মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর থেকে পড়াশোনার ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকে এবং তারা শিক্ষকদের বন্ধুত্বসূলভ আচরণে বড় হওয়ার সাহস পায়। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহ নিয়ে নিয়মিত ক্লাস করে। কখনো তারা পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না। কখনো পড়াশোনার একটু ঘাটতি তৈরি হলে, তারা তা পূরণের জন্য খুবই আন্তরিক থাকে। এতে শিক্ষক হিসেবে আমাদেরও মনোবল বাড়ে। আসলে আমি ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক হতে পেরে গর্বিত।’

‘আমরা সবসময় অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা খোঁজ-খবর নিই’, যোগ করেন শিক্ষক পরিষদের এ নেতা।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি সভাপতি আশিক ইরান বলেন, ‘এই কলেজ নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। প্রতিবছরই সফলতার শীর্ষ থাকে। কুমিল্লা বোর্ডের মধ্যে টপ পজিশন দখল করে আছে। এখানের শিক্ষকরা পাঠদানের ব্যাপারে খুবই যত্নশীল, স্যাররা কলেজে আসলেই শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশোনার তদারকি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ কলেজে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ছা্ত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী থাকে। আশা করি পরবর্তী বছরগুলোতে আরো ভালো করবে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা।’

সদ্য চান্স পাওয়াদের অনুভূতি

এ বছর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া পারভীন আক্তার বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। যেটার জন্য স্বপ্ন দেখেছি, রাতকে দিন বানিয়েছি—সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে এখন আশা পূরণ হয়েছে। এক্ষেত্রে ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষকদের অবদান বলে বুঝানো যাবে না। তাদের কাছে আমি যখনই শরনাপণ্ণ হয়েছি, তারা আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন। ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু করতে চাই।’

এবছর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া ফাহিম তানিন বলেন ‘মেডিকেল ভর্তি হওয়ার আমার জন্য একটা স্বপ্নের মত ছিল। আমিও হয়তো কোনোদিন ভাবিনি মেডিকেল চান্স পাব কিন্তু ভিক্টোরিয়া কলেজের স্যারদের কাছে এসে মনে হয়েছে আমার স্বপ্নটাকে বাস্তবে রুপ দিতে পারবো। এখন আমি খুবই আনন্দিত। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’

সূত্রঃ মেডিভয়েস

আরো পড়ুন