কুমিল্লা ভ্রমণে একদিনে যা যা দেখবেন

ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন না পৃথিবীতে এমন মানুষ খুব কমই আছেন। আর আমি বরাবরই ভ্রমণপ্রিয়। মনোরম কোথাও ভ্রমণের সুযোগ পেলে সহজে সেটা হাতছাড়া করি না। কয়েক মাস হলো শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) সাংবাদিক সমিতির নতুন কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলাম। সমিতির সদস্যরা একটি ট্যুর প্রত্যাশা করছে, সেটি সমিতির সভাপতি সবুজ ভাই আর আমি উপলব্ধি করছিলাম। গরম বেশি হওয়ায় এখন দূরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একদিনের একটি ট্যুরে যাবো আমরা। পরে সদস্যদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত হলো আমরা কুমিল্লা যাবো।

যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি মাইক্রোবাস নেওয়ার পরিকল্পনা করা হলো। যাতে সবাই স্বাচ্ছন্দে যেতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মাইক্রোবাসের অনুমোদন পাওয়া গেল। তাই নেওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নবাগত কয়েকজন সাংবাদিক, যারা এখনো সমিতির সদস্য হয়নি; তাদের সঙ্গে নেওয়া সম্ভব হলো না। ২৯ জুন (শনিবার) সকাল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে আমাদের যাত্রা শুরুর সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে সবার আসতে একটু দেরী হওয়ায় প্রায় ৮টার দিকে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। আমাদের অনেকেই ইতোপূর্বে কুমিল্লা যাননি। তাই একটু উত্তেজনা ভর করতে থাকে সবার মনে।

প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে ছুটে চলছে গাড়ি। যানজট তেমন নেই। মন মাতানো গান বাজছে গাড়ির ভেতর। কেউ কেউ ঠোঁট মেলাচ্ছেন। নানা খোশগল্পও চলছিল সমানতালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বশির ভাইও আমাদের সঙ্গী হয়েছিলেন। বশির ভাই আর রনি ভাই (সাবেক সাধারণ সম্পাদক)- এ দু’জনের বাড়িও অবশ্য কুমিল্লায়। যাওয়া -আসার সামগ্রিক দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন তারা। পথিমধ্যে বিরতি নিয়ে আমরা সকালের নাস্তা করে নিলাম। তারপর আবার শুরু হলো আমাদের যাত্রা।

কুমিল্লা পৌঁছানোর পর ক্যান্টনমেন্ট বিশ্বরোড পার হয়ে আমরা প্রথমে যাই ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে। যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত প্রায় ৭৩৭ জন সৈনিককে সমাহিত করা হয়েছে। স্থানটি বেশ মনোমুগ্ধকর। ঢাকার এক স্কুলের একদল শিক্ষার্থীও সেখানে দেখলাম। অনেকেই ঘুরতে আসেন। আমাদের দলের সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। একের পর এক ক্লিক পড়তে থাকলো আমাদের ক্যামেরায়। সেখানে এক-দেড় ঘণ্টা থাকার পর বের হলাম। সামনের একটি দোকান থেকে পানি, দই আর চা খেয়ে গাড়িতে উঠলাম।

গাড়িতে বসে আশেপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চললাম। শালবন বিহারের পাশ দিয়ে ছুটে চলল আমাদের গাড়ি। রাস্তা সংস্কারের কাজ চলায় আর সামনে যাওয়া হলো না। বাইরে থেকেই বৌদ্ধ মন্দিরটা একপলক দেখে ফিরতি পথ ধরলাম আমরা। এবার গন্তব্য ধর্মসাগর। পথিমধ্যে গাড়ি থামিয়ে মিষ্টি আর রসমালাই কেনা হলো। মিষ্টির প্যাকেট খুলতে না খুলতেই কিছুক্ষণের মধ্যে সব মিষ্টি শেষ হয়ে গেল!

ধর্মসাগরে পৌঁছানোর পর সবাই ভেতরে প্রবেশ করলাম। জলাধারটা যত বড় ভেবেছিলাম, তত বড় নয় আবার খুব ছোটও নয়। লোকসমাগম বেশ ভালোই। নৌকায় ঘোরাঘুরির সুযোগও আছে। এখানে বেশি সময় নেইনি। ছন্দু রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবার যাত্রা শুরু করলাম।

গন্তব্য এবার ম্যাজিক প্যারাডাইস, যা অনেকেরই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। গল্প, কথা আর গানে মশগুল আমরা। কখন যে পৌঁছে গেছি খেয়ালই নেই। গাড়ি থেকে নেমে অভিভূত হলাম সবাই! সামনে ডাইনোসরের মূর্তি নড়াচড়া করছে আর সঙ্গে গিটার, তবলাও আছে। চমৎকার সাউন্ড সিস্টেমও আছে, যা এগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। জনপ্রতি ৫০০ টাকার টিকিট কাটলে ঘোরাফেরা, গোসল করাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যাবে।

ভেতরে প্রবেশ করে আরও অভিভূত হলাম। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। ফ্যান্টাসি কিংডমের মতো নানা সুযোগ-সুবিধায় ভরপুর! আছে বিভিন্ন ধরনের রাইডের ব্যবস্থা। ডাইনোসরসহ বিভিন্ন মূর্তিগুলোকে যেন জীবন্ত মনে হচ্ছিল। এখানেই আমরা বেশি সময় ব্যয় করলাম। সবচেয়ে বেশি মজা হলো গোসলের সময়। বড়-ছোট নির্বিশেষে সবাই যেন বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানিকের বেশি সময় নিয়ে গোসল করলাম। এখানেও চলল একের পর এক ফটোশুট।

অনিক ভাইয়ের হাতে ক্যামেরাটা ক্লিক ক্লিক করেই যাচ্ছিল। তবে সবার মন খারাপ করে একসময় ক্যামেরার চার্জ শেষ হয়ে অফ হয়ে গেল! আমাদের মাঝে সোহাগ ভাই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি পানিতে নামলেন না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন! আশিক ভাই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি পানিতে সানগ্লাস নিয়ে নেমেও সানগ্লাস হারাননি। কিন্তু আমার পছন্দের সানগ্লাসটি হারিয়ে গেল নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই। যখন উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।

ম্যাজিক প্যারাডাইস থেকে যখন বের হলাম; তখন সন্ধ্যা নামতে খুব বেশি দেরি নেই। তাই সোজা চলে গেলাম বার্ডে (বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন সংস্থা)। বেশ মনোরম পরিবেশ। আছে কিছু প্রাচীন নিদর্শন। সেগুলো পরিদর্শন করে আমরা চললাম রনি ভাইয়ের বাড়ির দিকে। যখন ভাইয়ের বাসায় পৌঁছাই; তখন রাত হয়ে গেছে। তাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলাম সবাই। রাতের খাবার খেয়ে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। ফেরার পথে আবার গল্প, কথা আর গানে মেতে উঠলাম। অন্যদের চাপাচাপিতে আমাকেও একটি গান গাইতে হলো।

ঢাকায় পৌঁছতে বেশ রাত হয়ে গেল। রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে আমরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি। এককথায় বলতে হয়, ট্যুরটি চমৎকার হয়েছে। একদিনে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় কি-না জানি না। তবে ইতোপূর্বে একদিনের কোন ট্যুরে এমন মজা করতে পারিনি। সবমিলিয়ে বিশেষ কোন অসুবিধা ছাড়াই সফলভাবে ট্যুর সম্পন্ন করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে পেরেছি। সেজন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি।

লেখকঃ
রাকিব খান
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আরো পড়ুন