কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে দালালের দৌরাত্ম্য, দুর্ভোগে রোগীরা

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে সেবা নিতে গেলে পদে পদে ভোগান্তি আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগীদের। পাশাপাশি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রয়েছে সঠিক সেবা না দেওয়ার অভিযোগ। যদিও হাসপাতালটিকে বলা হয় বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার প্রধান ‘বাতিঘর’।

এদিকে, হাসপাতালটিতে ক্রমেই বেড়ে চলেছে দালালদের দৌরাত্ম্য। দালালের খপ্পরে পড়ে অতিষ্ঠ রোগীরাও। হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে দালাল চক্রের এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরেজমিনে কুমেক হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।

কুমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, চাঁদপুর, ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীসহ ৬ জেলার হাজারো রোগী প্রতিদিন সেবা নিতে আসেন এ হাসপাতালে। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে নিয়মিত ভর্তি থাকেন এক হাজারের বেশি রোগী। করোনাকালে এই হাসপাতালের আঙিনাতেই স্থাপন করা হয়েছে ১৫৪ শয্যার করোনা হাসপাতাল। তবে এসব রোগীদের এখানে সেবা নিতে এসে নানান ধরণের দুর্ভোগ পহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে কুমেক হাসপাতালের বহিঃবিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ডাক্তার দেখাতে টিকেটের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছেন রোগীরা। ১০ টাকা দিয়ে টিকেট পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। আর সেবা পেতে চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে অপেক্ষা করছেন কয়েকশ রোগী। ছুটতে হচ্ছে এদিক-ওদিক। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি, নেই সামাজিক দূরত্বও। দালালরা এসব রোগীদের নানান ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

জেলার নাঙ্গলকোট থেকে আসা রোগী আবদুল কাইয়ুম বলেন, এখানে সেবা নিতে এসে উল্টো কষ্টই পেতে হয়। প্রতিটি ডাক্তারের চেম্বারের সামনে দালালরা ফাঁদ পেতে থাকে। তাদের টাকা দিলে এক ঘণ্টার কাজ ৫ মিনিটে হয়ে যায়। টাকা না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

মনোহরগঞ্জ থেকে আসা রোগী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি গাইনী ডাক্তার দেখাতে এখানে এসেছি। কিন্তু ডাক্তার খুবই বাজে আচরণ করেন রোগীদের সাথে। এখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও ভুল রিপোর্ট পাই। এখানে সেবার বদলে রোগীদের হয়রানি করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দালালদের বেশিরভাগই রোগীদেরকে কম মূল্যে ও বাকিতে ওষুধ দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় বাইরের ওষুধ দোকানে। এরপর অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন তারা। এছাড়া প্যাথলজির কাজে দালালদের সাথে কমিশনে কাজ করেন কুমেকের সামনে থাকা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মালিক-কর্মচারীরা। রোগী ও রোগীর স্বজনরাই এদের প্রধান টার্গেট।

এদিকে হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলার কারণে গত ৪ নভেম্বর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। সভায় তিনি বলেন, দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে তাদের প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো যেতে হচ্ছে। বারবার এই অভিযোগ আসার পরও কোনো সমাধান হচ্ছে না। মানুষ সেবা না পেয়ে আমাকে ফোন করে। পরে আমি বললে কাজ হয়। কিন্তু যারা আমাকে ফোন করতে পারে না তাদের কি অবস্থা হয়?

জানতে চাইলে কুমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহাবুব আলম বলেন, আমাদের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী সেবা নিতে আসেন। শুধু কুমিল্লা নয়, পাশের আরো ৫ জেলার রোগীরাও এখানে আসেন সেবা নিতে। আর মূল সমস্যাটা হলো আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার অনেক কম। যার কারণে রোগীদের সেবা পেতে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে আমরা সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য বেড়েছে এটা সত্য। আমরা পুরো হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করতে কাজ করছি। শিগগিরই প্রশাসনের সহায়তায় এসব দালালদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

সূত্রঃ barta24

আরো পড়ুন