কুমিল্লা-৫ আসনে আ.লীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ১১ জন!

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া) সংসদীয় আসনের প্রয়াত এমপি, আ’লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী অ্যাড. আব্দুল মতিন খসরু’র মৃত্যুতে শুণ্য হওয়া আসনের উপ-নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষনা না হলেও এরই মাঝে আলোচনায় এসেছে কমপক্ষে ১১ জনের নাম। যাদের কেউ প্রয়াত এমপি’র স্ত্রী,আপন সহোদর, দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী, রাজনৈতিক শিষ্য, সরকারী অবসরপ্রাপ্ত আমলা বা আ’লীগের নিবেদিতপ্রান সমর্থক।

মূলত এই আসনের অপ্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ৫ বারের সংসদ সদস্য প্রয়াত নেতার সাম্প্রতিক সময়ে করোনায় অসুস্থ্যতার পর থেকেই অনেকেই এই আসনের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে নিজেদের ভাবতে শুরু করেছে। গত ১৪ এপ্রিল ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর থেকেই নানাভাবে আলোচনায় আসতে থাকে এসব নাম। ফলে দীর্ঘদিনের একক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব থেকে আবারো ক্ষমতার মোহে বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া আসনটিতে দলের প্রকাশ্যে গ্রুপিং সাধারন নেতা-কর্মীদের মনোবল নষ্ট করে দিতে পারে। তবে প্রয়াত এমপি’র অন্যতম রাজনৈতিক শিষ্য সাজ্জাদ হোসেন স্বপনের কথায় “আগামীতে যা কিছু হবে, সেটা আমরা দু’উপজেলার নেতৃবৃন্দ মিলে সিদ্ধান্ত নিবো” এটা অনেকটা আশার আলো দেখাচ্ছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের।

কুমিল্লার ভারত সীমান্তবর্তী বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া সংসদীয় আসন। স্বাধীনতা পরবর্তী এই আসনটি থেকে আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. আব্দুল মতিন খসরু ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ ইং মোট ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। বিগত শতাব্দির ৮০’র দশকের পর থেকে অ্যাড আব্দুল মতিন খসরু কুমিল্লার এই সংসদীয় আসনটিতে একমাত্র, অপ্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এসময় অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে কেউ কেউ প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিলেও কার্যতঃ ঘোষনার মধ্যেই সীমিত ছিল তাদের কার্যক্রম। ফলে বলতে গেলে বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়ায় আব্দুল মতিন খসরু এবং আ’লীগ এক সমার্থক। মোট কথা স্বাধীনতা পরবর্তী অনুন্নত এই দুটি সীমান্তবর্তী উপজেলার সামগ্রীক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রয়েছে প্রয়াত এমপি’র।

গত ১৪ এপ্রিল আব্দুল মতিন খসরু মারা যাওয়ার পর আলোচয়ায় আসতে থাকে শুণ্য আসনের নেতৃত্বে ইচ্ছুক একাধিক প্রার্থীর নাম। এ তালিকায় প্রথমে তার রাজনৈতিক শীষ্য সাবেক বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেরনের নাম শোনা গেলেও পরবর্তীতে এমপি’র স্নেহভাজন, শিক্ষানুরাগী, জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ‘সোনার বাংলা কলেজে’র প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আবু সালেহ মোহাম্মদ সেলিম রেজা সৌরভ, বুড়িচং উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও কুমিল্লা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আবুল হাসেম খান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগ সদস্য আবদুস সালাম বেগ এর নাম উচ্চারিত হতে থাকে।

প্রয়াত নেতার দাফন সম্পন্নের পরপরই এই তালিকায় যুক্ত হতে থাকে আরো বেশ ক’জনের নাম। এই তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত এমপি মতিন খসরু’র স্ত্রী সালমা সোবহান খসরু, প্রয়াত এমপি’র সহোদর কুমিল্লা বারের সাবেক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এড. আবদুল মমিন ফেরদৌস, ঔষধ প্রশাসনের ডিজি মেজর জেনারেল (অবঃ) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বর্তমান বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা আ’লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক এড. আব্দুল বারী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা এহতেশামুল হাসান ভূইয়া রুমী’র নাম। ফলে প্রয়াত নেতার বিদায়ের সাথে সাথে অপ্রকাশ্যে সীমান্তবর্তী বুড়িচং,ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলায় শুন্য আসনের নেতৃত্ব পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে উল্লেখিত নেতারা। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে মোটামুটি অনেকেই তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন নানা ভাবে।

সাজ্জাদ হোসেনঃ সাজ্জাদ হোসেন সেই উনিশ শতকের আশির দশকের কলেজ জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে প্রয়াত মতিন খসরু’র আশপাশে থাকা এই ছাত্র নেতা এখন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের যুগ্মসাধারন সম্পাদক। রাজনীতির প্রায় পুরোটা সময় তিনি তার সাথে কাটিয়েয়েছেন। তিনি জানান, নেতার শুন্য হওয়া স্থানটি পুরন হওয়ার নয়। তবুও এগিয়ে যেতে হবে। নিজে প্রার্থীতা হওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এজন্য তিনি বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার দলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক, প্রয়াত এমপি’র স্ত্রী-ভাই, সেলিম রেজা সৌরভসহ নেতৃত্বে থাকা অন্যান্যদের নিয়ে পরামর্শ করবেন। তবে সবচেয়ে বড় কথা নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেন তার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি।

আবু সালেহ মোহাম্মদ সেলিম রেজা সৌরভঃ এক সময়ের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে কুমিল্লা জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ‘সোনার বাংলা’ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ নিজেকে প্রয়াত নেতার স্নেহভাজন উল্লেখ করে শূণ্য হওয়া আসনটিতে নিজেকে প্রার্থী করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।

অ্যাড. আবদুল মমিন ফেরদৌসঃ প্রয়াত নেতার আপন সহোদর তিনি জেলা আইনজীবি সমিতির একাধিকবার সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ছিলেন। শুন্য আসনটিতে প্রার্থীতার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তিনি বা প্রয়াত এমপি’র স্ত্রী সালমা সোবহান খসরু মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করবেন।

অ্যাড. আবুল হাশেম খানঃ বর্তমান বুড়িচং উপজেলার আ’লীগের সভাপতি তিনি। জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতিও ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বুড়িচং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি শুন্য আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশার আগ্রহ ব্যক্ত করে বলেন, প্রয়াত এমপি মতিন খসরুর সাথে আমার পথ চলা ১৯৬৯ সাল থেকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৫২ বছর আমাদের একসাথের রাজনীতি। একদিনের জন্যও কেউ কাউকে ছেড়ে যাইনি।

আখলাক হায়দারঃ বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান ও বুড়িচং আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আখলাক হায়দার বলেন, প্রয়াত এমপি পরিবারের ৪ জন রয়েছেন। যদি তাদের কেউ নির্বাচনে না আসেন,তাহলে আমরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিব। দল যাকে মনোনয়ন দেয় আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। এসময় তিনি নিজেও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছের কথা জানান।

এহতেশামুল হাসান ভূইয়া রুমিঃ বাংলাদেশ যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারন সম্পাদক এহতেশামুল হাসান ভূইয়া রুমি বলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। তিনি যাকে প্রার্থী মনোনয়ন দিবেন আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। তবে আমিও ইচ্ছুক। আমি প্রার্থী হয়ে প্রয়াত নেতা আব্দুল মতিন খসরুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই।

আব্দুস সালাম বেগঃ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, আমি গতবার মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে। এবার ইনশাআল্লাহ শতভাগ নিশ্চিত।

জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীঃ ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী প্রার্থীতা হতে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে বলেন,দল যদি মনোনয়ন দেয়,তবে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে রাজী আছি।

এড.আব্দুল বারীঃ ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক ও সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবি এড.আব্দুল বারী প্রার্থীতার ইচ্ছের কথা জানিয়ে বলেন, দল চাইলে আমি অবশ্যই প্রার্থী হতে রাজী আছি।

মেজর জেনারেল (অবঃ) মোস্তাফিজুর রহমানঃ সাবেক ঔষধ প্রশাসনের ডিজি তিনি। স্থানীয় রাজনীতিতে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবুও শুন্য আসনটিতে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এই সাবেক জেনারেল দলের হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন । তিনি বলেন, আমি ইচ্ছুক প্রার্থী হতে। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি নির্বাচন করবো।

আরো পড়ুন