খালেদা জামিন পেলেন কুমিল্লার দুই মামলায়

এই তিনটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনের আবেদনে সোমবার আদেশের দিন ঠিক ছিল বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চে।

আদালত কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নাশকতার দুটি ঘটনায় হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা দুটিতে খালেদাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে।

নড়াইলের মানহানির মামলাটিতে জেলার আদালতে খালেদার জামিনের আবেদন রয়েছে। সেখানে কী হয়েছে, তা জানতে চেয়ে যথাযথ উত্তর না পেয়ে আবেদনটি ‘নট প্রেসড রিজেকটেড (উপস্থাপিত হয়নি)’ বলে খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

কুমিল্লার হত্যা মামলায় জামিন দেওয়ার পর আদালত খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে জানতে চায়, রোববার নড়াইলের মামলায় বিচারিক আদালতে কী আদেশ হয়েছে?

খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আমরা তো মামলার নথি চাই, কিন্তু ঠিকমতো নথি পাই না। গত ২৫ মে আদেশের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন (কোর্ট) বন্ধ ছিল।”

তখন বিচারক বলেন, “নিশ্চয়ই পরের দিন ওইখানে আদেশ হয়েছে।”

এরপর আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশিরুল্লাহর কাছে জানতে চায়, নড়াইলের আদালতে কোনো আদেশ হয়েছে কি না?

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “গতকাল শুনানি হয়েছে। ৩০ অগাস্ট আদেশের জন্য রেখেছে।”

এরপর বিচারক বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা মামলার কোনো খোঁজই রাখেন না।

এটা ভেরি আনফরচ্যুনেট।”

“ওই আদালতে (নিম্ন আদালত) বিচারাধীন আবেদন শুনানি করে আসুন। যদি সেখানে জামিন না হয়, তাহলে আমরা দেব। কারণ, এটা জামিনযোগ্য মামলা।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত খালেদা ওই মামলাটিতে আপিল করে জামিন নিলেও বিচারাধীন কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোয় তার মুক্তি আটকে আছে।

কুমিল্লা ও নড়াইলের তিনটি বাদে আরও দুটি মামলায় জামিন চেয়ে খালেদা জিয়া হাই কোর্টে আবেদন করেছেন। সেগুলো এখনও শুনানিতে আসেনি।

কুমিল্লার হত্যা মামলাটি অবরোধের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় একটি নৈশকোচে পেট্রোল বোমা হামলায় আট যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় করা হয়। চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান পরদিন খালেদাকে হুকুমের আসামি করে মামলা করেন।

কুমিল্লার বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলাটিও নাশকতা নিয়ে।

অবরোধের মধ্যে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রামে একটি কভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ওই দিনই চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়।

২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তাতে খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়।

নড়াইলের আদালতে খালেদার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাটি দায়ের করা হয় শহীদদের সংখ্যা নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ করার অভিযোগে।

কুমিল্লার এ দুটি মামলায়ই বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

নড়াইল জেলা পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান ফারুকী ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর এ মামলা দায়ের করেন।

এই মামলা তিনটিতে গত ২০ মে হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। রোববার তার শুনানি শেষ হয়েছিল।

সোমবার আদেশের পর খন্দকার মাহবুব নড়াইলের মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আবেদন করেছিলাম, ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেননি। পরে আমরা হাই কোর্টে আবেদন করেছি। এটা জামিনযোগ্য অপরাধ। হাই কোর্টও জামিন দিতে পারে।

“আদালত বলেছে, জজ কোর্ট ঘুরে আসেন। জজ কোর্ট কোনো আদেশ না দিলে আমরা দেখব। এখন আমরা নড়াইলে যাব। সেখানে দরখাস্ত করব।”

নড়াইলের মামলায় আপনাদের কোনো ভুল আছে কি না- এমন প্রশ্নে খন্দকার মাহবুব বলেন, “আমাদের কোনো ভুল নেই।”

খালেদার আরেক আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “নড়াইলের মামলায় সেখানে গতকাল আদেশ দিয়েছে। সেটা আমাদের জানায়নি। আমরা সেশন কোর্টে আবেদন করিনি, তাই নট প্লেসড করেছেন।”

কুমিল্লার দুই মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। এখন তিনি ওই তিন মামলায় জামিন পাওয়ায় তার কারামুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে দাবি করেন খালেদার আরেক আইনজীবী এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন।

তিনি বলেন, “নড়াইলের একটি, ঢাকার দুটি ও কুমিল্লার অন্য একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তবে এরপর সরকারের যদি অসৎ উদ্দেশ্যে থাকে, তাহলে কোনো মামলায় অ্যারেস্ট দেখাবে।”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “যে দুটি মামলায় জামিন দিয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হলো, যে কোনো আসামি জামিনের বিষয়ে নিম্ন আদালতগুতে জামিনের প্রচেষ্টা করে তারপর হাই কোর্টে আসতে হবে। এই দুটি মামলাতে যেহেতু তার প্রার্থনা বিচারাধীন, সেহেতু নিম্ন আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় হাই কোর্ট থেকে জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।

“যাই হোক আদালত জামিন দিয়েছে। আমি আজকে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। পিটিশন রেডি হয়ে গেছে। অন্যান্য ফরমালিটিজ শেষ হলে আজকেই এটা চেম্বারে মুভ করব।”

কুমিল্লার দুটি মামলায় খালেদার আইনজীবীরা গত ২২ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করলে বিচারক শুনানির জন্য ৭ জুন তারিখ রাখেন।

শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করা হলে ১৪ মে তা খারিজ করেন বিচারক। এর মধ্যে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়।

এদিকে খালেদার আরেক আইনজীবী মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কুমিল্লার বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আরেক মামলায় হাই কোর্টে জামিন আবেদন করা হয়েছে।

চৌদ্দগ্রামে গাড়িতে আগুন দিয়ে আট যাত্রীকে হত্যার ঘটনায় হত্যার পাশাপাশি বিস্ফোরক আইনে এই মামলাটি হয়েছিল।

আরো পড়ুন