গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার ইতিকথা

ডেস্ক রিপোর্টঃ একাত্তরে ভারত সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনী স্থানীয় রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় বাড়িঘর লুণ্ঠন ও বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, সড়কপথ-রেলপথ ও ব্রীজ-কালভার্ট উড়িয়ে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়।নির্বিচারে চালায় হত্যাযজ্ঞ আর পাশবিক নির্যাতন।দেশের স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক এ.কে.এম শামসুল হক খান ও পুলিশ সুপার কবির উদ্দিন আহমদ। এমন বর্বরতা মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আর কোথাও ঘটেনি।

২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথ দীঘি এলাকা দখল করে নেয়। এই দখলকৃত এলাকাটি ‘কুমিল্লার প্রথম মুক্তাঞ্চল’। বিজয় তখন অত্যাসন্ন। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর সাথে ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ হয় এবং সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর ২৭ জন যোদ্ধা শহীদ হন। এদিন মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করতে থাকে এবং ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ‘কুমিল্লা মুক্ত দিবস’ উদযাপন করে। ঐদিন কুমিল্লায় প্রথম জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয়। শহর মুক্ত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু পাকিস্তান বাহিনী তখনও কুমিল্লা সেনানিবাসে অবস্থান করছিল। ১৬ ডিসেম্বর তারা আত্মসমর্পণ করে। এদের মধ্যে ২ জন ব্রিগেডিয়ার, ৭৬ জন অফিসার, ১৭৫ জন জেসিও এবং ৩ হাজার ৯১৮ জন সৈন্য ছিল।

বধ্যভূমি: হাজার প্রাণের হত্যাপুরীতে পরিণত হয় লাকসামের একটি সিগারেট ফ্যাক্টরী

উপজেলাওয়ারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা: সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, বিডিআর বাহিনীসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁরা হলেন কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ৬৩ জন, চৌদ্দগ্রামের ৬০ জন, বুড়িচংয়ের ২৮ জন, লাকসামের ৪৮ জন, হোমনার ১৩ জন, দাউদকান্দির ৩০ জন, ব্রাহ্মণপাড়ার ১৭ জন, চান্দিনার ৭ জন, দেবিদ্বারের ৩৩ জন, মুরাদনগরের ৪০ জন, বরুড়ার ১৬ জন, নাঙ্গলকোটের ৬২ জন।

বেতিয়ারা দিবস: ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর ১১ জন ন্যাপ গেরিলা নিহত হন। দেশ স্বাধীন হবার পর লাশগুলোর কঙ্কাল গর্ত থেকে উত্তোলন করে বেতিয়ারার শহীদ মিনারের পাশে গণকবর দেয়া হয়। প্রতিবছর এদিনে বেতিয়ারায় উদযাপিত হয় ‘বেতিয়ারা দিবস’।

যুদ্ধকালীন থানা কমান্ডার: যুদ্ধকালীন কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় যাঁরা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা হলেন আবদুল মতিন (কোতয়ালী), আবুল বাশার (লাকসাম), আবু তাহের (চৌদ্দগ্রাম), বেলায়েত হোসেন (বরুড়া), আলী আকবর (চান্দিনা), সিরাজুল ইসলাম (দেবিদ্বার), সরাফত আলী (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া), কামরুল হাসান (মুরাদনগর), নজরুল ইসলাম ও পরে আবদুল মতিন (দাউদকান্দি), চৌধুরী আমীর আলী (হোমনা)।

আরো পড়ুন