ঝগড়া মিটিয়ে একসঙ্গে অনশনে কুমিল্লা বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্টঃ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল বুধবার জেলা বিএনপির বিবদমান দুটি পক্ষ একসঙ্গে বসে দলীয় কার্যালয়ে অনশন করেছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নগরের কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কের দলীয় কার্যালয়ে ওই কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।

পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি রাবেয়া চৌধুরী বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে নেতা-কর্মীদের অনশন ভঙ্গ করান। অনশন কর্মসূচিতে দুপক্ষের শত শত নেতা-কর্মী অংশ নেন।

  • খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি
  • কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেত্রী রাবেয়া চৌধুরী মেয়র মনিরুল হককে ফোন করেন।
  • তিনি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে অনশনে অনুরোধ করেন

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের পদ-পদবি নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হকের সঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ আমিন উর রশিদের দীর্ঘদিন থেকেই কোন্দল রয়েছে। ওই কোন্দল কখনো মিটে যায়, আবার কখনো চাঙা হয়। কয়েক মাস ধরে দুপক্ষের নেতাদের মধ্যে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদল, মহিলা দল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি নিয়ে দূরত্ব বাড়ে। দুপক্ষ নিজেদের কর্মীদের কমিটিতে রাখার জন্য কেন্দ্রে আলাদা নামের তালিকা দেয়।

এ ছাড়া ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর থেকেও দুপক্ষ আলাদা স্থানে মহড়া, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাত আটটায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি রাবেয়া চৌধুরী একপক্ষের নেতা মেয়র মনিরুল হককে ফোন করেন। এতে তিনি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে অনশন করার অনুরোধ করেন। রাবেয়া চৌধুরীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার দুপক্ষ দলীয় কার্যালয়ে হাজির হয়ে অনশন করে।

অনশনে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আমিন উর রশিদ, সহসভাপতি সাবেক সাংসদ মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রউফ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মোস্তফা জামান, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাজ্জাদুল কবির, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোজাহিদ চৌধুরী, কুমিল্লা শহর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বেলা দুইটায় দলীয় কার্যালয়ে এসে দলের সাধারণ সম্পাদক আমিন উর রশিদকে জুস খাইয়ে দিয়ে অনশন ভঙ্গ করান দলের সভাপতি রাবেয়া চৌধুরী। এ সময় রাবেয়া চৌধুরী বলেন, ‘জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য সরকার বেগম জিয়াকে সাজা দিয়েছে। জনতার আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে জনগণ এর জবাব দেবে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যে নেত্রী আপসহীন খেতাব পেয়েছিলেন, সেই নেত্রী অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সরকার তাঁকে কারাগারে নিয়ে গেছে। অথচ দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলো, দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে, সেই দিকে সরকারের নজর নেই। অবিলম্বে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’

মেয়র মনিরুল হক বলেন, ‘রাবেয়া চৌধুরী ফোন করার কারণে আমার কর্মীদের একত্রে কর্মসূচি পালন করার জন্য বলেছি। কর্মীরা পদ না পেলে রাজনীতি করবে কীভাবে? আমার কর্মীদের বাদ দিয়ে উনি (আমিন উর রশিদ) কমিটি জমা দেওয়ায় এত দিন আলাদা কর্মসূচি হয়।’

এ প্রসঙ্গে আমিন উর রশিদ বলেন, ‘দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। ত্যাগী ও মাঠের কর্মীরা মূল্যায়িত হবে। সবাই মিলেই আমরা কর্মসূচি পালন করছি।’

 

আরো পড়ুন