টক অব দ্যা কুমিল্লাঃ পারভেজ অপহরণ সত্যি নাকি সাজানো নাটক ?

হালিম সৈকতঃ কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যেন আতঙ্কের নগরী। একের পর এক ঘটনা চলছেই। উপজেলা সৃষ্টির পর থেকেই ঘটে চলেছে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা। মাদকের স্বর্গরাজ্য খ্যাত উপজেলাটিতে খুন খারাপি যেন নিত্যনৈমত্যিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। গতকাল ঘটলো আরেকটি ঘটনা। তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আ’লীগের সদস্য পারভেজ হোসেন সরকারকে অপহরণ করা হয়েছে ঢাকার নিজ বাস ভবনের সামনে থেকে।

অপহরণের ১১ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত সোয়া ১২টায় রাজধানীর পূর্বাচল (৩০০ ফিট রোড) থেকে তিনি তার পরিবারকে ফোন দেন। পরবর্তীতে তার পরিবার ও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

পরে নিজ বাসার নিচে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন পারভেজ হোসেন সরকার। তিনি বলেন অপহরণকারীরা আমাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় সেই কারণে তাদেরকে আমি চিনতে পারিনি। তারা শুধু ২টি খালি স্ট্যাম্পে আমার কাছ থেকে সই নিয়ে যায়। এরপর আর কিছুই বলতে পারব না।

অপহরণের পর তার স্ত্রী তাহমিনা আফরোজ অভিযোগ করে বলেছিলেন, তিতাস উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান, তার ছোট ভাই লালন সিকদার ও যুবলীগ নেতা সারওয়ার হোসেন বাবু এই ঘটনা করতে পারে। তাদের সাথে আমার স্বামীর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর আগে কয়েকেবার হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।

এই দিকে তিতাসবাসীর মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কি হতে পারে আসল ঘটনা ? কেউ বলছেন বিষয়টি একটি সাজানো নাটক। বিশ^াস করতে পারছেন না। আবার কেউ তদন্তের আগে মুখ খুলতে নারাজ। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আসল রহস্য উন্মোচনের কথা বলছেন সকলেই।
আসুন জেনে নিই তিতাসের রাজনৈতিক নেতারা কি বলেন।

তিতাস উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত আলী বলেন, বিষয়টি রহস্যে ঘেরা। সুষ্টু তদন্ত করে সত্যিকার কাহিনী বের করা হোক।

সাধারণ সম্পাদক ও সদর কড়িকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসীন ভূইয়া বলেন, ঘটনাটি ঢাকায় ঘটেছে। ফলে এখান থেকে আমরা কিছুই বলতে পারছি না। তবে তদন্ত পূর্বক অপহরণকারীদের খুজে বের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।

সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মুন্সী মুজিবুর রহমান বলেন, ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তিতাস আ’লীগের অনৈক্যের কারণে আজকের এই ঘটনা। তিতাসে আ’লীগ বলতে কেউ নেই। আছে শুধু দলের নাম ভাঙ্গিয়ে টু পাইস ইনকাম করার কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক। দলে ঐক্য থাকলে আজকে এই ঘটনা ঘটত না। আমি নিন্দা জানাই।

কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও তিতাস-হোমনা আসনের নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সারওয়ার হোসেন বাবু বলেন, পারভেজ সরকারের স্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। কারণ তিনি অপহৃত হয়েছেন ঢাকায় আর আমরা তিতাসে। তাহলে কিভাবে আমরা অপহরণ করলাম। আমি বিষয়টি উদঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আহ্বান জানাব। যে বা যারা এই ঘটিনাটি ঘটিয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর হস্তে দমন করা হোক। আমার সম্পৃক্ততাও যদি থাকে তাহলে আমার বিরুদ্ধেও যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম সোহেল সিকদারের ছোট ভাই তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক নুর মোহাম্মদ লালন সিকদার বলেন, পারভেজ সরকারের অপহরণকে যারা আমাদের উপর চাপাতে চেষ্টা করছেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কারণ মিডিয়ার এই যুগে কোন কিছুই লোকানো সম্ভব নয়। আমরা তিতাসে আর ঘটনা ঢাকায়। তাহলে কিভাবে সম্ভব। মিথ্যা দোষ অন্যের ওপর চাপানো বন্ধ করতে হবে। এই সবই সাজানো নাটক। এটি একটি সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে। যেইভাবে ঘটনাটিকে সাজানো হয়েছে। এই ঘটনার সাথে আমি, আমার ভাই সোহেল সিকদার কিংবা সারওয়ার বাবু কোনভাবেই জড়িত নই। এটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। সিসিটিভি ফুটেজসহ অন্যান্য আলামত এবং অপহরণকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

সারা বাংলাদেশের মত তিতাসের সর্বত্রই এখন টক অব দ্যা তিতাস আসল বিষয়টি কি হতে পারে? কেউ বলছেন তিনি ঢাকয় জায়গার ব্রোকারী করেন এবং ঝামেলাপূর্ণ জায়গা নিজের বাহিনী দিয়ে দখল বুঝিয়ে দেন। সেই শত্রুতার কারণেও এমনটি হয়ে থাকতে পারে। কিংবা ঠিকাদারী নিয়ে কোন ঝামেলার কারণে হতে পারে। আবার বিষয়টি রাজনৈতিকও হতে পারে। তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার পর বুঝা যাবে ঘটনাটি কি সত্যি নাকি সাজানো নাটক?

উল্লেখ্য পারভেজ সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লাা-২ আসন (তিতাস-হোমনা) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বর্তমানে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য । গত বছর তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি বাজারে পারভেজের গাড়িতে গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে তিনি আর এলাকায় যান নি বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন