ঢাকার আবাসিক হোটেলে কুমিল্লার শিক্ষার্থী মৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকার ফার্মগেটে আবাসিক হোটেলে কুমিল্লার আমিনুল ইসলাম সজলের (২২) রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় মানববন্ধন করেছে তার সহপাঠী, বন্ধুমহল ও এলাকার সর্বস্তরের জনগন। এদিকে রাজধানীর ওই আবাসিক হোটেল থেকে সজলসহ আরেক শিক্ষার্থী মরিয়ম চৌধুরীর (২০) মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার ২৬ দিনেও হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি।

নিহত দুই শিক্ষার্থীর একজন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হরিপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে আমিনুল ইসলাম সজল ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মরিয়ম চৌধুরীর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায়। সজলের বাবার দাবি, সজলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় নিলে সজলের মৃত্যুর রহস্য বের হবে।

আলোচিত সজল হত্যার সঠিক কারন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাসিঁর দাবীতে রবিবার বেলা ১১টায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট বাজারে মানববন্ধন করেছে সর্বস্তরের জনগণ। বিভিন্ন প্র্রকার প্লেকার্ড, ফ্যাষ্টুন হাতে নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুরা। মানবন্ধনে সজল হত্যাকান্ডের মূলহোতা আবাসিক হোটেল স¤্রাটের কর্তৃপক্ষসহ জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবী জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নিহত সজলের বাবা মোশারফ হোসেন, সাবেক অধ্যক্ষ সাদেক হোসেন ভূইয়া, অধ্যাপক নুরুল্লাহ মজুমদার, হেশাখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, নাঙ্গলকোট পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ হোসেন, নাঙ্গলকোট সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ওবায়দুল হক, নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবের সভাপতি মজিবুর রহমান মোল্লা, ব্যবসায়ী শাহজালাল আহমেদ টুটু, নেওয়াজ শরীফ ও সিয়াম হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নিহত সজলের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে নিয়ে কুৎসা রটিয়ে হত্যাকরীদের বাচাঁনোর চেষ্টা করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানায়, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে দুজন মারা গেছে। সজলের পকেটে ডুমেক্স-৬০ নামে দুটি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। তা দেখেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় পুলিশ। পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুজনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আত্মহত্যাও করেননি তারা।

সজলের বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, তিনি নাঙ্গলকোট বাজারে রেডিমেড কাপড়ের ব্যবসা করেন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে তাদের কোনো শত্রু নেই। তিনি বলেন, ‘সজল-মরিয়ম স্বামী-স্ত্রী ছিল না। তাহলে তাদের কী পরিচয়ে সেখানে কক্ষ ভাড়া দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ? হোটেল কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় নিলে সজলের মৃত্যুর রহস্য বের হবে। তারা সজলকে অন্য কোথাও হত্যা করে এখানে এনে লাশ ফেলা হয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘তার চার ছেলে। সজল তৃতীয়। সজল কুমিল্লা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তৃতীয় বর্ষে পড়ছিল। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। গত ২৬ দিনে তারা একটা ফোন দিয়েও খোঁজ নেয়নি। আমরা ফোন দিলে বলে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা এখনো একটি মামলা পর্যন্ত নেয়নি। তারা বলে, কার বিরুদ্ধে মামলা করবেন। তারা যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটের কথা বলে বিষয়টি আড়াল করতে চাইছে। তারা হোটেল কর্তৃপক্ষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ’ ছেলে হত্যার বিচারের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল রাজধানীর ফার্মগেটের আবাসিক হোটেল সম্রাটের ৮০৮ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র আমিনুল ইসলাম সজল (২২) ও মুন্সিগঞ্জ বাড়ি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মরিয়ম চৌধুরীর (২০) মরদেহ। আলোচিত এ হত্যাকান্ড নিয়ে গত ২৩ এপ্রিল এনটিভির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়। এরপর দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় এ শিক্ষার্থীদের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে।

আরো পড়ুন