দাউদকান্দি-মতলব সড়ক যেন মরণফাঁদ

ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকা-দাউদকান্দি-মতলব-চাঁদপুর যাওয়ার রাস্তাটি এখন যেন মরণফাঁদ। সংস্কার না করার কারণে সড়কটি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। মেরামতের অভাবে সড়কের দাউদকান্দি অংশ বেহাল হয়ে পড়েছে। উঠে গেছে কার্পেটিং, বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য গর্তেরও সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় সড়কের পাশে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত মাটি নেই। অন্য গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে যেকোনো সময় বাস উল্টে সড়কের পাশের খাদে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় সড়কটির মেরামত জরুরি হয়ে পড়েছে। তা নাহলে, যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে পরিবহন ব্যবস্থা! অথচ ঢাকা হয়ে মতলব-চাঁদপুর যাওয়ার জন্য এই সড়কটি খুবই গুরুত্ববহন করে।

ঘটনাস্থলে দেখা যায় যে, দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর, বারইকান্দি, বিটেশ্বর, নৈয়ার, পালেরবাজার ও কানাচোয়া এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দকে ভরা। ফলে বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে সৃষ্টি হয় ভয়ারহ পরিস্থিতির। এ যেন ‘বিপদে উপর বিপদ’। এ ছাড়া যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সড়কের এই বেহাল অবস্থার কারণে যাত্রী ও চালকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ। জানা যায়, এরই প্রেক্ষিতে গত রোববার ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ও বাসচালক মালিক সমিতি রাস্তা বন্ধ করে মানববন্ধন পালন করেন। তারা বিভিন্ন স্থানে গাছ ও ড্রাম ফেলে এবং যানবাহন আড়াআড়ি করে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) দাউদকান্দির গৌরীপুর কার্যালয় ঘেরাও করেন। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, দুই বছরের বেশি সময় ধরে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী। বিকল্প সড়ক না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কে যানবাহন চালাচ্ছেন। এতে করে চালক ও যাত্রীগণ মানসিক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। মানববন্ধন থেকে দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবি জানানো হয়। তা না হলে আরো বড় কর্মসূচি দিতে তারা বাধ্য হবেন। মানববন্ধনটি সকাল ৭টা শুরু হয়ে চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এই সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা জানান, সড়কটি বেহাল অবস্থা হওয়ার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চালাতে হয়। এ ছাড়া সড়কটিতে আবার রয়েছে ডাকাতদের উৎপাত। তাই রাস্তাটির খারাপ অবস্থার কারণে দ্রুতগতিতে গাড়ি না চালাতে পেরে ডাকাতদের কবলেও পড়তে হয়। এতে চালক ও যাত্রীদের খোয়াতে হয় সর্বস্ব। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-গৌরীপুর-মতলব সড়কের দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার। এর মধ্যে দাউদকান্দি অংশে পড়েছে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে সড়কটিতে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ, প্রশস্তকরণ, বাঁক সোজাকরণসহ অন্য সংস্কারকাজ শুরু হয়। ২০১০ সালের জুনে শুরু হওয়া ওই কাজটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে ২০১১ সালের জুনে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর সংস্কার না হওয়ার কারণে সড়কটি বিপদজনক ও যানবাহনের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

সরজমিন দেখা গেছে, সড়কটির দাউদকান্দির গৌরীপুর অংশের পেন্নাই থেকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার অংশ ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। অনেক স্থানে এমনভাবে কার্পেটিং ও খোয়া উঠে গেছে, মনে হবে সড়কটি কখনো পিচ ঢালাই করা হয়নি। মতলব এক্সপ্রেস ও জৈনপুরী এক্সপ্রেস পরিবহনের চালকরা বলেন, মৃত্যুর ঝুঁকি ও আতঙ্ক নিয়ে এ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী বলেন, এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে তাদের প্রতিদিন তীব্র ঝাঁকুনি সহ্য করতে হয়। এদিকে, সড়কটির বেহাল দশার কারণে ডাকাতদের ধরার জন্য পুলিশ টহল টিমের কাজেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। দাউদকান্দি মডেল থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়কের অবস্থা এতই নাজুক যে রাতে টহল দিতে গিয়ে যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। সড়কটি সংস্কারের বিষয়ে সওজের কুমিল্লা কার্যালয়ের একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন।

আরো পড়ুন