নাঙ্গলকোটে দৌলখাঁড় ইউপিতে কর্মসৃজন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

মো. ওমর ফারুকঃ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের দৌলখাঁড় ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের ২য় পর্যায়ের ১ম ও ২য় কিস্তির ২শ ৮৯ জন ভূয়া শ্রমিকের নামের তালিকা করে ৪০দিনের কর্মসূচীর ৫টি প্রকল্পের আওতায় বরাদ্ধকৃত ৮লাখ ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ৪লাখ ৮হাজার টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে। এছাড়া ২য় কিস্তির অবশিষ্ট ৪লাখ ৮হাজার টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ টাকা উত্তোলন করা হবে বলে জানা যায়। এ টাকা উত্তোলনের সাথে ইউপি সচিব, ইউপি সদস্য, ট্যাগ অফিসার, উপ-সহকারি প্রকৌশলী, অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে গত বুধবার গিয়ে জানা যায়, দৌলখাঁড় ইউনিয়নের দেওভান্ডার টুকার বাজার পাকা সড়ক হতে আলীর বাড়ি পর্যন্ত, আফজালের দোকান থেকে আলী আক্কাছের বাড়ি পর্যন্ত, সোন্দাইল সাদিয়ার বাড়ি হতে হাফিজিয়া মাদ্রাসা পুকুর পাড় পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ, বাম ভুঁইয়াপাড়া গফুর মাঝির দোকান থেকে লোকমানের বাড়ি পর্যন্ত, পাইকোট আমিন ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি থেকে মনু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ, দৌলখাঁড় রশিদ ভুঁইয়ার বাড়ি থেকে ফরাজী বাড়ি পর্যন্ত, তালুকদার বাড়ি থেকে তমিজ উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত এবং বক্সগঞ্জ পাকা সড়ক হতে আনোয়ারের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক পুনঃনির্মাণ, কান্দাল মধ্যপাড়া মমতাজের বাড়ি থেকে দেলু সওদাগরের বাড়ি পর্যন্ত, কান্দাল লেমুয়া ব্রীজ থেকে মজুমদার বাড়ির পাশ দিয়ে মীর আহম্মদের বাড়ি পর্যন্ত, মমিনের বাড়ি থেকে এনামুল হকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ, খিলপাড়া সাতালিয়া পুকুর পাড় থেকে মনাব সওদাগরের বাড়ি পর্যন্ত ও ভোলাকোট আজাদের বাড়ি থেকে নোয়াব মহাজনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

এ সব প্রকল্পের অধীনে ২শ ৮৯জন শ্রমিকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে মৃত ব্যাক্তি, প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের নাম রয়েছে। এছাড়া অনেকের নাম থাকলেও তারা কেউ জানেন না তাদের নামে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক দিয়ে কাজ করার থাকলেও চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভুঁইয়া ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প্রে সভাপতি ইউপি সদস্যরা ভ্যাকু মেশিন দিয়ে দায়সারাভাবে এই সব রাস্তার কাজ করেন।

জানা যায়, দৌলখাঁড় ইউপি সচিব প্রত্যেকটি প্রকল্পের সাপ্তাহিক মাষ্টার রোলের সিটে শ্রমিকদের নাম, পিতার নাম, হিসাব নং ও টাকার পরিমাণ লিখে সবগুলোতে একই হাতের টিপসই দিয়ে টাকা প্রদানের জন্য ব্যাংকে তালিকা পাঠান। ওই তালিকা অনুযায়ী অগ্রণী ব্যাংক বক্সগঞ্জ শাখা কর্তৃপক্ষ ইউপি সচিব ও ইউপি সদস্যদের নিকট টাকা প্রদান করেন। কিন্তু ব্যাংক নিয়ম অনুযায়ী হিসাবধারী শ্রমিকরা স্ব শরীরে ব্যাংকে উপস্থিত থেকে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের নিয়ম রয়েছে।

বাম ভুঁইয়াপাড়া গফুর মাঝির দোকান থেকে লোকমানের বাড়ি পর্যন্ত, পাইকোট আমিন ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি থেকে মনু মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্পে নামের তালিকায় দৌলখাঁড় গ্রামের মাহবুবুল হকের নাম রয়েছে। মাহবুবুল হক গত বছরের ৩১মার্চ মৃত্যু বরণ করেন। তার অগ্রণী ব্যাংক বক্সগঞ্জ শাখা ব্যাংক হিসাব নং- ১৫৪১৮। আইটপাড়া গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম গত কয়েক বছর থেকে সৌদি আরবে রয়েছেন। তার ব্যাংক হিসাব নং ১২৮৮৪। দৌলখাঁড় গ্রামের রহনী কুমার শীলের ছেলে দুলাল চন্দ্রশীলের নাম তালিকায় থাকলেও সে এব্যাপারে কিছুই জানে না। তার ব্যাংক হিসাব নং-১২৮৯৫। আইটপাড়া গ্রামের অজি উল্লার ছেলে মাহমুদ উল্লাহ। হিসাব নং-১৫২২৯। প্রকল্পে তার নাম থাকা এবং টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। দৌলখাঁড় গ্রামের সফিকুর রহমানের ছেলে বেলাল হোসেন ভুঁইয়ার দৌলখাঁড় বাজারে মা মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এন্ড ফার্নিচার দোকানের মালিক। তার নামও শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে। বেলাল হোসেন জানান, আমার নাম শ্রমিকের তালিকায় থাকলেও আমি ব্যাংক থেকে কোন টাকা উত্তোলন করি নাই।

দেওভান্ডার টুকার বাজার পাকা সড়ক হতে আলীর বাড়ি পর্যন্ত, আফজালের দোকান থেকে আলী আক্কাছের বাড়ি পর্যন্ত, সোন্দাইল সাদিয়ার বাড়ি হতে হাফিজিয়া মাদ্রাসা পুকুর পাড় পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্পে দৌলখাঁড় গ্রামের হুমায়ুন কবিরের ছেলে মামুনুর রশিদ ও সফিকুর রহমানের ছেলে মামুন হাসান গত ৫বছর থেকে ওমানে বসবাস করছেন। তাদের হিসাব নং-১২৯০০ ও ১৫৪৯৯।

দৌলখাঁড় গ্রামের হাফেজ আহম্মেদ খোকন জানান, ৪০দিনের কর্মসূচীতে শ্রমিক দিয়ে কাজ করতে দেখি নাই। ভ্যাকু মেশিন দিয়ে রাস্তায় মাটি ফেলতে দেখেছি। দৌলখাঁড় গ্রামের মৃত মাহবুবুল হকের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউদ স্বপ্না ও ছেলে সোহেল ভুঁইয়া বলেন, গত বছরের ৩১ মার্চ আমার বাবা মারা গেছে। আমাদের বাবার নামে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আমরা জানি না।

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, অযথা বাড়াবাড়ি করে আমাদেরকে হয়রানি করবেন না। এই শ্রমিকরা আগেও টাকা নিয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংক বক্সগঞ্জ শাখার ব্যাবস্থাপক নাছিম হায়দার (শাহিন) বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে শ্রমিকদের তালিকার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করবো।

প্রকল্পের ট্যাগ অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আমি আগের প্রকল্পগুলোতে গিয়েছি। পরের প্রকল্পগুলোতে যাই নাই। তারপরও আমি বিষয়টি দেখবো।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, আপানাদের মাধ্যমে অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যাক্তিগতভাবে ছিনি না। ব্যাংক কর্মকর্তারা লোক না দেখে কিভাবে টাকা দিচ্ছে? বর্তমান প্রকল্পের অবশিষ্ট টাকা দেওয়া হবে না।

আরো পড়ুন