পিবিআই কুমিল্লা জেলার সাফল্য নেপথ্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ

ডেস্ক রিপোর্টঃ হত্যা,অপহরণসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটনে গত প্রায় এক বছরে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লা। বিশেষ করে পিবিআই কুমিল্লা জেলার ইউনিট প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ দায়িত্ব লাভের পর থেকে এরই মধ্যে তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯ জন অপহৃতকে উদ্ধারসহ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে পিবিআই কুমিল্লা জেলা ইউনিট। এ ছাড়াও সম্প্রতি নগরীতে ঘটে যাওয়া বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান মজুমদার হত্যাসহ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ ঘাতকদের গ্রেপ্তার এবং আদালতে নারাজি দেয়া পুলিশ ও সিআইডি কর্তৃক আগে তদন্ত করে রহস্য বের করা সম্ভব হয়নি এমন মামলারও রহস্য বের করার মধ্য দিয়ে জনমনে পিবিআই কুমিল্লা আস্থা অর্জন করে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

জানা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ গত বছরের ২৫শে অক্টোবর পিবিআই কুমিল্লা জেলায় ইউনিট প্রধান হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তাঁরই প্রচেষ্টায় অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। ১৯ জন অপহরণ মামলার ভিকটিম উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তার, জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং দ্রুততম অনেক মামলার তদন্ত শেষ করেছেন।

রেকর্ড সংখ্যক অপহরণ মামলার রহস্য বের করেছে পিবিআই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদের প্রচেষ্টায় অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে এ সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। জেলার বরুড়া উপজেলার ভিকটিম সাবরিনা আক্তার (২৬) এবং তার কন্যা সন্তান তরিন আক্তার নিতু (৭)কে অপহরণকারী চক্রের নিকট থেকে উদ্ধার  করা হয়। এ ঘটনায় অপহরণকারী চক্রের তিন জন সদস্য গ্রেপ্তার করেন এবং নারী শিশু নির্যাতন আইনের ২২ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করাতে সক্ষম হন।

মুরাদনগর থানার অপহরণ মামলার ঘটনায় ভিকটিম রায়হান (১২) কে উদ্ধার করা হয়।  এ ঘটনার মূল নায়ক কথিত ভিকটিম রায়হান গত দুই বছর যাবৎ নিজে আত্মগোপন করে থাকে এবং তাহার বাবার সঙ্গে যাদের জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে তাদের আসামি করে হয়রানি করতে থাকে। প্রথম পর্যায়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ এই ভিকটিম উদ্ধারে সক্ষম হয়নি। কিন্তু আদালতের আদেশে পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ টিম ভিকটিম রায়হানকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থা থেকে উদ্ধার করে এবং বাদীর বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় প্রতিবেদন প্রেরণ করাতে সক্ষম হন।

সদর দক্ষিণ থানার অপহরণ মামলায় শিশু ভিকটিম নাজমা আক্তার (১৪) , চান্দিনা থানার অপহরণ  মামলায়  ভিকটিম শারমিন আক্তার (১৪)কে, দাউদকান্দি থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম সুমী আক্তার কল্পনা (১৫), কোতোয়ালি থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম লিমা আক্তার (১৫) কে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। জেলার সদর দক্ষিণের ভিকটিম নাদিরা আক্তারকে উদ্ধারেও পিবিআই কর্মকর্তা আপেল মাহমুদসহ অন্য  কর্মকর্তাদের রয়েছে বেশ সাফল্য। দীর্ঘ ৪১ দিন পর অপারেশন চালিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ কথিত ভিকটিম নাদিরা পারভীনকে উদ্ধার  করতে সক্ষম হন। বরুড়া থেকে অপহরণ হওয়া ছাব্বির (১৩) কে ২ মাস পর ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। ভিকটিম নুসরাত অপহরণ হওয়ার ৫ দিন পর পিবিআই উদ্ধার করে।

এ ছাড়াও চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ বিভিন্ন মামলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী শিশু নির্যাতন আইনের অপহরণ মামলার ভিকটিম দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে চৌদ্দগ্রাম থানার ভিকটিম খাদিজা আক্তার (১৬), চান্দিনা থানার অপহরণ মামলায়  ভিকটিম তন্নী (১৬), লাকসাম থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম লিজা আক্তার (১৬), চান্দিনা থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম হালিমা আক্তার (২০), বুড়িচং থানার অপহরণ ঘটনায় ভিকটিম ফাতেমা আক্তার তানিয়া (১৯),বরুড়া থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম হাছিনা (১৯), নাঙ্গলকোট থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম নুরজাহান বেগম (২০), কাতোয়ালি থানার অপহরণ ঘটনার ভিকটিম মনোয়ারা মজুমদার (২২ ), চান্দিনা থানার অপহরণ মামলায় কুলসুম আক্তার (২৫), কোতোয়ালি থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম আছমা আক্তার রিমি (২৬) , চান্দিনা থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম গাজী রোমানা ইসলাম (২০), নাঙ্গলকোট থানার অপহরণ মামলায় রোকসানা আক্তার (২০), কোতোয়ালি থানার অপহরণ মামলায় ভিকটিম লাকি দাসকে উদ্ধারপূর্বক আদালতের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ অভিভাবকদের নিকট হেফাজতে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ কুমিল্লায় যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অপহরণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে সর্বমোট ৫১ জন আসামি গ্রেপ্তার এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা হয়। বিগত এক বছরে তাঁরই বস্তুনিষ্ঠ তদারকির  মাধ্যমে সাক্ষ্যপ্রমাণভিত্তিক ২১৭টি সি.আর মামলা এবং ১৩৫টি জি আর মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদন্ত সমাপ্ত করাতে সক্ষম হন।

এদিকে চাঞ্চল্যকর নারাজি মামলার রহস্য উদঘাটনেও পিবিআই কুমিল্লার বেশ সফলতা রয়েছে। বিগত এক বছরে অনেক মামলা কুমিল্লা আদালত থেকে নারাজি হয়ে পিবিআই কুমিল্লা জেলার উপর পুনরায় তদন্তের ভার ন্যস্ত হয়েছে এরকম অধিক সংখ্যক মামলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনেক মামলা পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক রহস্য উদঘাটন হয়নি। কিন্তু পিবিআই কুমিল্লা জেলায় তদন্তভার পাওয়ার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ তার বস্তুনিষ্ঠ তদারকির মাধ্যমে উক্ত মামলা সমূহের রহস্য উদঘাটন পূর্বক পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করাতে সক্ষম হন।

এছাড়াও জন সচেতনতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পিবিআই কুমিল্লা কাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ যোগদানের পর থেকে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাদক, ইভটিজিং, জঙ্গিবাদ বিরোধী অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশগ্রহণ ও বক্তব্যের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। ভৈরব বাজারের সন্তান মাহমুদ এর আগে নরসিংদী জেলার পিবিআই জেলা প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালনকালে বিভিন্ন মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রশংসা অর্জন করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পর পর দুইবার আইজিপি ব্যাচ পুরস্কার প্রাপ্ত হন।

পিবিআই কুমিল্লার সফলতা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আপেল মাহমুদ জানান, পিবিআই কুমিল্লায় কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও সদস্য সবাই একটি টিম ওয়ার্কের মতো কাজ করি, তাই যেকোনো মামলায়ই আমাদের সফলতা আসছে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো কর্মস্থলেই নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে সফলতা আসবেই। সফলতা হাতের কাছে এসে ধরা দেয় না, এর জন্য পরিশ্রম করতে হয়। পিবিআই কুমিল্লার সফলতার বিষয়ে মাহমুদ আরও বলেন, আমরা কোনো মামলা হাতে পেলে যখন শূন্য থেকে তদন্ত শুরু করি, তখন আমাদের এটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হলেও আমরা মনে করি একটি হত্যা, ধর্ষণ কিংবা অপহরণ মামলা। রহস্য বের করা একটি মানবতার কাজও বটে। তাই পিবিআই কুমিল্লার হাতে আসা সকল মামলাই আমাদের সফলতা আসছে। এ জন্য তিনি সকলের সহায়তা কামনা করেন।

আরো পড়ুন