প্রবাসীদের সুখ দুঃখে সরকারের পাশে থাকা উচিত

প্রবাস জীবন মানে নিষ্ঠুর, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন এবং প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেয়ালবিহীন কারাগারে এতিমের মতে বসবাস করা। কারও দুঃখ কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না। নিজের দুঃখ নিজে অন্তরে রেখে নীরবে কান্না করতে হয়। প্রবাসে যারা এসেছেন একমাত্র তারাই প্রবাসজীবন যে কেমন নির্দয় ও নির্মম তার ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।

শস্য-শ্যামলা সবুজেঘেরা সোনার বাংলাদেশ এবং মা-বাবা, ভাই-বোন আত্মীয়স্বজন এমনকি নিজের প্রিয় স্ত্রীর মায়া-মমতা ভালোবাসা ত্যাগ করে, সংসারের সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, আর্থিক উন্নতির জন্যই প্রবাসের মাটিতে পা রাখতে হয়।

দেশ থেকে প্রবাসে গিয়ে কি খুব ভালো থাকে কেউ? না, দেশ থেকে সবকিছু ছেড়ে যেমন তার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজনদের রেখে যখন প্রবাসে একা একটা মানুষ যায় বা কাজ করে তখন তার মনটা কিন্তু পড়ে থাকে দেশের মাটিতেই। মনে পড়ে তার মা-বাবার কথা, ভাই-বোনের কথা, স্ত্রী-সন্তানের কথা। তখন তার আর কাজ করতে ইচ্ছে হয় না।

প্রবাসে থাকা একজন মানুষের সবচেয়ে বড় যে টান তা হলো নাড়ির টান। এই টানের কারণেই একজন প্রবাসীকে দেশ নিয়ে ভাবায়, ভাবায় তাকে ভালো কিছু নিয়ে তার দেশের কাছে, তার নাড়ির কাছে ফিরতে হবে। নইলে তার প্রবাস জীবন ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণে কেউ কেউ দেশ ত্যাগই করে না, জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করে। এটা আসলে একটা হতাশার কারণ। এই কারণের মূল ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও বোঝা যায় একটা মানুষের দেশ, দেশের মানুষ নিয়ে তার কতটা টান, কতটা বন্ধন মিশে আছে।

যে মানুষগুলো দেশে থাকে বা দেশে আছে তারা সাধারণত নাড়ির টানটা গাঢ়ভাবে অনুভব করতে পারে না। কেননা তারা দেশ দেখতে পাচ্ছে, দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে, আরো দেখতে পাচ্ছে মা, ইচ্ছে করলেই ক্লান্তি এলেই তারা তাদের মায়ের আঁচল পেতে জীবনের সব ক্লান্তি দূর করতে পারছে নিমিষেই। হতাশ লাগলেও মা সেই হতাশা দূর করারও চেষ্টা করছে। আহ এর থেকে প্রশান্তির আর কী হতে পারে। কিছুই না। আসলে মা হলো সন্তানের মূল চাবিকাঠি।

প্রবাসীদের দুঃখকে উপলব্ধি না করে তাদের জন্য সরকারের করণীয় অনেক কিছুই আছে। কিন্তু সরকার প্রবাসীদের কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে নিয়ে যাচ্ছে। বিনিময়ে কিছুই দিচ্ছে না।

সরকার থেকে এমন কি পেয়েছে প্রবাসীরা যা উল্লেখ করার মত? বরং প্রবাসীরা বিদেশ গিয়ে কর্মস্থলে বিপদে পড়লে বাংলাদেশ দূতাবাস গুলোতে কর্মরত অফিসারা অসদাচরণ করেন। এরকম অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে।অথচ প্রবাসীদের হাড়ভাঙা শ্রমের টাকায় তাদের বেতন আসে। সরকারের উচিত বিমানবন্দরে এক একজন প্রবাসীকে ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া। কারনে প্রবাসীদের কাছে দেশ ঋণী হয়ে আছে। প্রবাসীরা দেশের কাছে নয়।এক একজন প্রবাসীর আয়ের টাকায় এক পরিবারের চার-পাচঁজন নির্ভর করে। যদি প্রবাসীরা শ্রমিক হয়ে বিদেশ পাড়ি না দিতেন তবে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হতো সরকারকে।যা সরকারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই মানবিক কারণেও প্রবাসীদের নানাভাবে হয়রানি বন্ধের জন্য সরকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা উচিত।

অনেক প্রবাসী আছে দেশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। শুধুমাত্র হয়রানি জীবনের অনিশ্চয়তায় ভোগার কারণে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না প্রবাসীরা। তাই প্রবাসীদের জন্য সরকার সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশে বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। এর ফলে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। দেশ থেকে যারা বিদেশ যান আমরা তাকে প্রবাসী বলি।

কেননা তারা আপন জায়গা ফেলে একটু ভালো থাকার জন্য পরবাসে চলে যান। কেন যান? আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের অভাব বলে, বিদেশের মতো সুযোগ-সুবিধা নেই বলে, বেতন কম বলে ইত্যাদি কারণে। এই কারণগুলোও থাকত না, আমরা যদি আমাদের দেশের ভেতরের, দেশের মানুষদের জন্য যদি সঠিক উপায়ে সুষ্ঠু কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি করতে পারতাম। এ নিয়ে আসলে একার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়, কাজ করতে হবে সরকারকেও।

লেখক: আব্দুল মজিদ সুজন (সাংবাদিক ও কলামিস্ট)

আরো পড়ুন