বরুড়ার পয়ালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার ১৫নং পয়ালগাছা ইউনিয়নের পয়ালগাছা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় লোকজনের সুত্রে জানা যায়, পয়ালগাছা উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত স্কুল অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু অভিভাবক সদস্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে পুরো এলাকা।

জানা যায়, গত ১ মার্চ ২০১৯ইং তারিখ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর মোট ৭ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র ক্রয় করে ( ফরমের মূল্য ২৫০০ টাকা) এবং দাখিল করে। গত ৫ মার্চ ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ঐ দিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল কাদের।

কিন্তু পর দিন সকালে তিন জন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকেন স্থানীয় মো. জসিম উদ্দিন এবং আনিসুর রহমান এবং জহিরুল কাইয়ূমসহ একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। তারা অভিভাবক সদস্য প্রার্থী জিয়া উদ্দিন চৌধুরী (ভোটার নং ৮৯১), মো. মোস্তফা কামাল ( ভোটার নং ৭২২) ও মো. নুরুল হক ( ভোটর নং ৪৬৩) প্রত্যেককে টাকা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা টাকা পেয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান। এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু ততক্ষণে প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে গেছে। তারা তিন জন ৬ মার্চ প্রধান শিক্ষকের নিকট প্রত্যাহারের কাগজ পেশ করেন।

কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রিসাইডিং অফিসার এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন এর কাছে প্রত্যাহারের কাগজপত্র জমা দেবার কথা। কিন্তু তারা তা না করে জমা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষকের নিকট। প্রত্যাহারের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর।

এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল কাদেরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না। আমাকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজহারুল ইসলাম ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার স্যার। বিষয়টি উনারাই ড্রিল করছেন।
তিনি স্বীকার করেন প্রত্যাহারকৃত মনোনয়নপত্র গুলো (৭ তারিখ পর্যন্ত) আমার কাছেই আছে। তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দুই দুই বারের নির্বাচিত সদস্য জাকির হোসেন খোকন বলেন, প্রধান শিক্ষক টাকার বিনিময়ে নির্বাচন দিচ্ছেন না। সকলে নির্বাচন চাইলেও তিনি চাচ্ছেন না। আমি চাই নির্বাচন হোক।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের হোটেল ব্যবসায়ী বর্তমান অভিভাবক সদস্য প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন (ভোটার নং ৪০০) সমস্ত টাকার যোগান দিচ্ছেন। কারণ তিনি জানেন নির্বাচন করলে নিশ্চত পরাজিত হবেন। তাই তিনি নির্বাচন না করে টাকা দিয়ে সকলকে ম্যানেজ করে নির্বাচন বন্ধ করেছেন।

জাকির হোসেন বলেন, বরুড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন, তিনিও চাচ্ছেন নির্বাচন যাতে না হয়। তাছাড়া আনিসুর রহমান ৪৫ হাজার টাকা, মোস্তফা কামাল ৩৫ হাজার এবং নুরুল হক ৩৫ হাজার টাকা পেয়ে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নির্বাচন থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। আমি কক্সবাজারে হোটেল ব্যবসা করি। এলকায় তেমন থাকি না। সাধারণ অভিভাবকগণ চাচ্ছেন আমি যাতে নির্বাচন করি। তাই আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে সমঝোতা হয়ে গেছে তাই নির্বাচন হচ্ছে না। এতে অভিযোগ তোলার কি আছে?

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি গালাগালি শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি কোন টাকা পয়সা নিই নি। সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। পরে তিনি ইউএনও এর সাথে কথা বলার জন্য বলেন।

নির্বাচন বিষয়ে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমি তো কিছুই জানি না। নির্বাচন হবে আগামী ১৬ মার্চ ২০১৯ইং। আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে? আপনি কি সাংবাদিক আপনার কার্ড দেখি। নির্বাচনের পরে সব দেখা যাবে। ধমকের সুরে বলেন এখন যান।

সাংবাদিকরা যখন তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, প্রমাণ করার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমরা অভিযোগ পেয়েই আপনাকে জানাতে এসেছি। তখন তিনি বলেন, অফিসের একটি বিষয় নিয়ে আমর মাথা গরম ছিল। তাই আপনাদের সাথে খারাপ আচরন করে ফেলেছি, সরি। আমি দুঃখিত।

পরে জানা যায়, ইউএনও মাহজারুল ইসলাম যখনই কক্সবাজার যান তখনই অভিভাবক সদস্য প্রার্থী জসিম উদ্দিনের কক্সবাজারের হোটেলে অবস্থান করেন। আর এই কারণেই তিনি বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। এবং জসিমকে সদস্য হিসেবে রাখার জন্য চেষ্টা করছেন।

এই বিষয়ে পয়ালগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল (অব:) আবু তাহের এর চাচা আলহাজ¦ মো. আসাদ আলী মাস্টার বলেন, ঘটনাটি নজির বিহীন। শুনেছি টাকা পয়সা দিয়ে সকলকে ম্যানেজ করে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা ঠিক না। নির্বাচন হবে, যোগ্য ব্যক্তিরা পরিচালনা বোর্ডে আসবেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য (যিনি ৩০ বছর অভিভাবক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন) ও পয়ালগাছা বাজার কমিটির সভাপতি ডা: মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমি আর এমনটি দেখিনি। শুনেছি ১৬ তারিখ নির্বাচন হবে কিন্তু গতকাল শুনলাম টাকার বিনিময়ে সমঝোতা হয়ে গেছে, নির্বাচন হবে না। এলাকার সবাই চাচ্ছেন ভোট হোক। ভোটের মাধ্যমে অভিভাবকরা তাদের যোগ্য সদস্য নির্বাচিত করুক। শুনেছি বিষয়টি দেখভাল করছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। তবে আমি এর জন্য দায়ী করব প্রধান শিক্ষককে। সব কিছুর জন্য তিনিই দায়ী।

এই যদি হয় একটি স্কুল কমিটির নির্বাচনের অবস্থা, তাহলে অন্য নির্বাচনে কি হবে? স্কুলে কি আছে? সদস্য হলে কি লাভ হবে? কেনই বা এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপে পুরো এলাকা বিভক্ত। এলাকার মোট ৯০% ভোটর চাচ্চেন ভোট হউক। কার স্বার্থে বন্ধ করা হয়েছে নির্বাচন? বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সচেতন মহল।

আরো পড়ুন