বিকেলের অাড্ডায় মুখরিত কুবির ক্যাম্পাস

গোলাম কিবরিয়াঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ৫০ একরের প্রতিটি জায়গা মুখরিত থাকে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণবন্ত বৈকালিক আড্ডায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কাঁঠালতলা , ক্যাফেটেরিয়া, মুক্তমঞ্চ, ডরমেটরি সিঁড়ি, প্রধান ফটক ও বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যসহ প্রতিটি জায়গা শিক্ষার্থীদের অানাগোনায় মুখরিত থাকে সবসময়। ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য ব্যস্ততার মাঝেও শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মেতে উঠে, ফিরে পায় নতুন প্রাণ। শিক্ষার্থীদের পছন্দের জায়গাগুলোর মধ্যে একটি হলো ডরমেটরিতে উঠার সিড়ি। বিকেলে একঝাঁক তরুণ-তরুণীকে দেখা যায় সিড়িতে বসে অাড্ডা দিতে। এমনকি উৎসবের দিনেও ছবি তোলার হিড়িক পড়ে এখানে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারেটির স্থাপত্যশৈলী যেকাউকে মুগ্ধ করবে। ভাষা শহীদদের গৌরবময় আত্মত্যাগের স্মৃতিকে তুলে ধরতে নির্মিত হয় এ শহীদ মিনার। বিকেলের আড্ডায় শিক্ষার্থীরা মেতে থাকে সবসময়। কখনও রাতেও শুনা যায় গিটারের টুংটাং শব্দ। অাড্ডায় প্রাধান্য পায় নানা ধরণের সমসাময়িক বিষয়। চলে নিজেদের মাঝে তর্ক বিতর্ক। জনে জনে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনার বিশাল ছক আঁকে। শহীদ মিনার কেন্দ্রীক অাড্ডা শিক্ষার্থীদের মাঝে অসম্প্রদায়িক চেতনা গড়ার পাশাপাশি মুক্ত চিন্তার উদ্ভব ঘটায়।এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নিয়মিত অাড্ডা দেখা যায় শহীদ মিনারে। তাদের অাড্ডায় প্রকাশ পায় কুবির নানা সমস্যা ও এর সমাধান। বিভিন্ন সংগঠনগুলো পড়ন্ত বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত গল্পে মাতিয়ে রাখে শহীদ মিনারকে।

কাঁঠালতলায় আড্ডা দেয়া এমনই একজন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী শাকিল। তিনি বলেন, “সারা দিনের ক্লান্তি শেষে একটু প্রশান্তির জন্য বিকেলে হাসি, গান অাড্ডায় মেতে উঠি অামরা।সময় শেষ হচ্ছে প্রতিনিয়ত শুধু মধুর স্মৃতিগুলো বেচেঁ থাকে অাজীবন”। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত পাহাড়ি ক্যাম্পাস হওয়ায় ছুটিরদিনগুলিতেও দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের বহিরাগত পর্যটকদের। বহিরাগতদের কাছে বিকেলের ক্যাম্পাসটি সবচেয়ে পছন্দের।

ক্যাম্পাসে প্রবেশের সাথে সাথে দেখা যাবে বিভিন্ন সংগঠনের ক্যাম্পাস ভিত্তিক অাড্ডা।তারমধ্যে রয়েছে বিডিএসএফ,ডিবেটিং ক্লাব, প্রতিবর্তন ও অনুপ্রাসের মত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এছাড়াও সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের দেখা যায় ক্যাম্পাসে ভিন্ন অাঙ্গিকে। কেউবা বাঁশির সুরে মাতিয়ে রাখে অাড্ডার অাসর।নাট্য ভিত্তিক সংগঠন থিয়েটারের সদস্যদের দেখা যায় একেক জন একেক ধরনের সাজ সেজে অভিনয় করতে।বিকাল হলেই সবুজ ঘাসের ওপর চলে রাতভর গান, কবিতা অাবৃত্তি ও ছড়ার আড্ডা।কাঁঠাল তলায় দেখা মেলে একদল গল্প পিয়াসি শিক্ষার্থীদের। বলা চলে সবসময় কাঁঠালতলাকে মাতিয়ে রাখে ওরা। কখনো গান গেয়ে বা ছড়া কেটে উপভোগ করে বিকেলের অাড্ডাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনতম ব্যাচের শিক্ষার্থীও মুগ্ধ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্যে।

বাংলা ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী বিজয় তার অনুভতি প্রকাশ করেন এভাবেই,”পাহাড়, ঝর্ণা অামাকে ছোটবেলা থেকেই টানত খুব। এখানে পাহাড়ি ক্যাম্পাস পেয়ে সত্যি অানন্দিত। তাই বন্ধুদের সাথে বসে ক্যাপাসের সৌন্দর্য্য উপভোগ করি “। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর প্রিয় জায়গাগুলোতে বসে তাদের আড্ডা ও রোড ম্যাপ করে থাকে। রক্তদান ভিত্তিক সংগঠন বন্ধুকে দেখা যায় বিকালের অাড্ডায় বসে শিক্ষার্থীদের রক্তদানে উৎসাহী করতে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনের সাথে মিশে আছে প্রকৃতির সাত রং।শিক্ষার্থীদের অাড্ডায় প্রকাশ পায় তাদের প্রাণচাঞ্চলতা। শিক্ষার্থীদের এই বিকেলের অাড্ডায় সৃষ্টি হয় নতুন তারুণ্য শক্তির।

আরো পড়ুন