বুড়িচংয়ে মামলা করায় বাড়ী ছাড়া ধর্ষিতার পরিবার

জে.এইচ বাবুঃ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা গ্রামে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে কিশোরিকে ধর্ষন করে তিন যুবক। ধর্ষনের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করলে ধর্ষিতার পিতাকে কুপিয়ে আহত করে ধর্ষনকারীরা। আসামীদের ক্রমাগত হুমকীর মূখে বর্তমানে বাড়ী ছাড়া ধর্ষিতার পরিবার। আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেফতার করছেনা পুলিশ। এ সকল বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বুধবার সকালে এক নিকট আত্মিয়ের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ও মামলার বিবরনে জানা যায়, উপজেলার ভারেল্লা দক্ষিন ইউনিয়নের ভারেল্লা গ্রামের রমজান আলী ভ্যান চালিয়ে জিবীকা নির্বাহ করে আসছে। তাঁর মেয়ে (১৭) স্থানীয় একটি মিলে চাকুরী করে করতো। মিলে যাওয়া-আসার সময় স্থানীয় কিছু যুবক তাঁকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও কু-প্রস্তাব দিত। এ সকল বিষয় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের অবহিত করলে বখাটেরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

গত শুক্রবার রাতে রমজান আলীর মেয়ে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ঘরের বাহিরে যায়। পূর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা একই এলাকার মৃত হুমায়ন ফকিরের ছেলে জসিম উদ্দিন, মৃত ওমেদ আলীল ছেলে অহিদ, ছমেদ আলীর ছেলে সুন্দর আলী রমজান আলীর মেয়েকে মুখে গামছা পেচিয়ে বাড়ীর পাশ^বর্তী নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষন করে। ধর্ষিতার ধ্বস্তাধ্বস্তির আওয়াজ শুনিয়া তাঁর পিতা ও বোন ঘরের বাহিরে আসলে ধর্ষকারীরা রমজার আলীর মেয়েকে নিয়ে জসিম উদ্দিনের ঘরে নিয়ে আটকে রাখে। এসময় রমজান আলী তাঁর মেয়েকে উদ্ধার করতে গেলে তাঁকে পিটিয়ে আহত করে। পরে জনৈক শিপন নামে এক যুবকের সাথে বিবাহ পড়িয়ে তাঁকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। এবং বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য হুমকী ধমকী দেয়। বাড়ীতে আসার পর ধর্ষিতার অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের লোকজন তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।

ধর্ষনকারীদের ভয়ে দু’দিন বাড়ীতে অবরুদ্ধ থেকে তিনদিনপর ধর্ষিতা বাদী হয়ে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা দায়ের করেন। আদালত বিষটি আমলে নিয়ে বুড়িচং থানা পুলিশকে মামলা রেকর্ড করার জন্য নির্দেশ দেন। মামলার খবরে আসামীরা ক্ষিপ্ত হয়ে হয়ে দেখে নেয়ার হুমকী দেয়। গত সোমবার ধর্ষিতার বাবা রমজান আলী বাড়ীর সামনে চা দোকানে আসলে ধর্ষনকারীরা দলবল দিয়ে দেশিয় অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে রমজান আলীর উপর হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীদল তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা রমজান আলীকে মূমর্ষ অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর সন্ত্রাসীরা ধর্ষিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাড়ী থেকে বাহির করে দেয়। এবং বাড়ীতে আসলে প্রানে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। হামলার ঘটনায় রমজান আলীর স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় একটি মামলা দায়ের করে। আসামীদের ক্রমাগত হুমকীর মূখে ধর্ষিতার পরিবার বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে এক নিকট আত্মিয়ের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। দুটি মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও রহস্যজনক কারনে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। আসামীদের গ্রেফতার ও নিজ বাড়ীতে ফেরার লক্ষে গতকাল বুধবার সকালে নিকট আত্মিয়ের বাড়ীতে সংবাদ সম্মেলন করে রমজান আলীর পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে রমজান আলী ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন তাঁর বড় ভাই মোঃ এয়াছিন মিয়া, মেয়ে শারমিন আক্তার, ভাতিজা জসিম উদ্দিন প্রমূখ।

আসামীদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছেনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ীর এস আই মোহাম্মদ শাহিন কাদির বলেন, মামলার কপি হাতে পেয়েছি, আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে, দ্রুত সময়ে আসামীদের গ্রেফতার করা হবে।

আরো পড়ুন