ব্রাহ্মণপাড়ায় হেরেছে নৌকা, জিতেছে আওয়ামীলীগ!

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবু জাহের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। অপরদিকে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী এই নির্বাচনে পরাজিত হন। জেলা নির্বাচন সিনিয়র অফিসার জাহাঙ্গীর খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা নির্বাচন সিনিয়র অফিসার জাহাঙ্গীর খান জানান, নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী ৪০ হাজার ৫’শ ৯০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৬’শ৩৯ ভোট।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে নৌকার ভরাডুবিতে ব্যাপক আলোচনা, বিশ্লেষণ চলছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী গত নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেও উপনির্বাচনে পুনরায় নৌকা প্রতীক পেয়েও পরাজিত হওয়ার কারণেই বেশি আলোচনা, বিশ্লেষণ চলছে ব্রাহ্মণপাড়া জুড়ে।

অপরদিকে আওয়ামী পরিবারের অপর নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও বিজয়ী হওয়া নিয়েও সমান তালে বিশ্লেষণ চলছে। হাট-বাজার সর্বত্র একটিই আলোচনা দেড় বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার নৌকার শোচনীয় পরাজয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জানান, যোগ্য ব্যাক্তিকে নৌকা প্রতীক না দেয়ার করণেই দেড় বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার নৌকার শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী নানা কারণে বিতর্কিত ব্যক্তি। এর আগেও তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকায় মাদক, দুর্নীতিসহ অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। তার চেয়ে বড় কথা চট্টগ্রাম বিভাগে মাদক, চোরাকারবারী ও তাদের পৃষ্ঠপোষককারীদের চিহ্নিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তালিকায় ১২ নম্বরে জাহাঙ্গীর খান চৌধুরীর নাম রয়েছে। এসব কারণে তিনি উপজেলা জুড়ে এক বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তার ইমেজও জনগণের কাছে তলানীতে ছিলো। সে কারনে বিগত ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। গত নির্বাচনের পর তিনি এলাকায় তেমন আসেননি। অনেক নেতাই দুঃখ করে বলেন, ব্রাহ্মণপাড়ায় হেরেছে নৌকা, জিতেছে আওয়ামীলীগ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণপাড়ায় যে কোন নির্বাচনে প্রয়াত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবু তাহের পরিবার একটি বড় ফ্যাক্টর। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ, মক্তব প্রতিষ্ঠাসহ সামাজিক কাজে এ পরিবারের বিশাল ভূমিকা থাকায় উপজেলা জুড়ে এ পরিবার ব্যাপক জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে আবু তাহের পরিবার একটি আস্থা ও ভরসার নাম। উপনির্বাচনে এ পরিবার থেকে প্রয়াত চেয়ারম্যানের ছোটভাই আলহাজ্ব মো. আবু জাহের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রায় ৪০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন।

নেতাকর্মীরা বলেন, গত ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে আলহাজ্ব মো. আবু তাহের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন তিনি ২০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ভোট পান ২৪ হাজার আর আওয়ামীলীগ প্রার্থী ভোট পান ২৬ হাজার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও পরিবারিক ইমেজে আবু তাহের প্রায় সমান্তরাল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ছিলেন। আর গত ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের নির্বাচনেও মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আলহাজ্ব মো. আবু তাহের ভোট পান ৪০ হাজার ৬৭৩ আর আর আওয়ামীলীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী ভোট পান ২৪ হাজার ৯৭৮টি। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন।

উপনির্বাচনে মরহুম চেয়ারম্যান আবু তাহেরর ছোট ভাই বিশিষ্ট শিল্পপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক, সমাজ সেবক আলহাজ্ব মো. আবু জাহের অথবা আবু তাহের ছেলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ক্লীন ইমেজের ছাত্রনেতা আবু তৈয়ব অপিকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি ছিল। সেই দাবিকে উপেক্ষা করায় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করেছে যার প্রতিফলন ঘটেছে পুনরায় নৌকার পরাজয়ের মাধ্যমে।

তাছাড়াও নির্বাচনের দিন সকাল ৯টায় সাংবাদিকদের একটি দল ব্রাহ্মণপাড়া দুলালপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাওয়ার পর অন্তত ৫০ জন নৌকার কর্মী হামলা চালায়। এ সময় মাইটিভির ক্যামেরা পারসন আবদুস সালাম, একুশে টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন জহিরুল হক বাবু, জাগরণী টিভির জেলা প্রতিনিধি আশিকুর রহমান আশিক গুরুতর আহত হয়। আশিক ও বাবু বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আওয়ামীলীগ নেতাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাংবাদিকদের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলাও নৌকার ভরাডুবির অন্যতম কারণ।

ব্রাহ্মণপাড়া সদর ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগের নেতা হাজী জসীম উদ্দিন বলেন, সত্যিকথা বলতে কি! দলের ভেতরে বাইরে এমনকি সাধারণ জনগণের কাছেও তাহের পরিবার খুব জনপ্রিয়। এ জনপ্রিয়তায় দলের কতিপয় নেতা ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের নাম কেন্দ্রে পাঠায়নি। তবে এ উপজেলায় আওয়ামীলীগকে আরো শক্ত অবস্থানে নিতে হলে ওই পরিবারের বিকল্প নেই।

আরো পড়ুন