ভিক্টোরিয়া কলেজে লেখাপড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা ও মাদক মুক্ত রাখাই আমার লক্ষ্য -অধ্যক্ষ

মাহদী হাসানঃ কুমিল্লা অঞ্চলের শত বর্ষের শিক্ষার পাদপীঠ,ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে,  মাদক ও ইভটিজিং মুক্ত রাখার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, বর্তমান কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর রতন কুমার সাহা।

তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারী অধ্যক্ষ পদে যোগদান করার পর কলেজে লেখা পড়ার সুন্দর  পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখা ও ডিগ্রী শাখাকে মাদক মুক্ত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।  এ বিষয়টিকে কলেজের সকল শিক্ষক মন্ডলী ও শিক্ষার্থীরা স্বত:ফূর্ত ভাবে গ্রহন করে। এরই ধারাবাহিকতায় উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় মাদক এবং ইভটিজিং মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করেছেন।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজ প্রতিনিধি মাহদী হাসান এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ চলমান মাদক বিরোধী অভিযানকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?
কলেজ অধ্যক্ষঃ আমি মনে করি এটি দেশের জন্য এক নম্বর ভাল কাজ, কারণ মাদক আক্রান্ত সমাজ সঠিক ভাবে পরিচালিত হতে পারে না।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ হঠাৎ করে দেশে মাদকের মহামারি আকার হওয়ার কারন কি বলে আপনি মনে করেন?
কলেজ অধ্যক্ষঃ এটা ঠিক হঠাৎ করে না, পূর্ব থেকে মাদকের বিস্তার ছিল কিন্তু বর্তমানে তা আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদককে প্রশ্রয় না দিয়ে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন । তিনি দেশের সকল মানুষের মাঝে মাদক বিরোধী বার্তা পৌছে দিচ্ছেন। আমি মনে করি মাদক মুক্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতিকে উপহার দেওয়ার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ তরুন-তরুনীদের মাদকাসক্ত হওয়ার পিছনে বন্ধু বা সহপাঠীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কোন ভূমিকা থাকতে পারে কি?
কলেজ অধ্যক্ষঃ বন্ধু বা সহপাঠীদের মাঝে  এক-দুইজন মাদকসাক্ত থাকলে অন্যরা এদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাই সহপাঠী বা বন্ধু নির্বাচনে তরুন-তরুনীদের সতর্ক থাকতে হবে। সহপাঠীদের মাঝে মাদকাসক্ত থাকলে তাদেরকে বুঝিয়ে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ সন্তানকে মাদক থেকে দূরে রাখতে পরিবারের ভূমিকা কতটুকু?
কলেজ অধ্যক্ষঃ মাদক থেকে সন্তানকে দূরে রাখতে পরিবারের ভূমিকাটাই মূখ্য, এর জন্য পিতা-মাতা, ভাই-বোনকে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে হবে। সন্তানদের প্রতি আরো বেশী মনোযোগী হতে হবে। তাদেরকে বেশী সময় দিতে হবে। যা এখন পরিবার গুলোতে একবারেই চোখে পড়ে  না। সবাই সচেতন থাকলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ মাদক বিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুই কি একমাত্র সমাধান?
কলেজ অধ্যক্ষঃ এটি কখনই স্থায়ী সমাধান নয় বরং দেয়ালে পিঠ ঠেকার আগেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ,মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডাতে মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা উচিত। এরই ধাারাবাহিকতায় গত বছর থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদ ও কুমিল্লা জেলা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে প্রত্যেকটি উপজেলায় মাদক বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সেমিনার,সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাদকমুক্ত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি ভূমিকা রাখতে পারে?
কলেজ অধ্যক্ষঃ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাদকমুক্ত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পিতা-মাতা মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও অনেক গুরত্বপূর্ণ।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ বিগত দিনে ভিক্টোরিয়া কলেজের বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকের বিভিন্ন স্পটে মাদকের আড্ডা বসতো, শুনেছি এখন এই ধরনের আড্ডা আর নেই, এটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন?
কলেজ অধ্যক্ষঃ ভিক্টোরিয়া কলেজের মাদক নিয়ন্ত্রণ করার পিছনে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের কে সর্বাত্বক ভাবে সাহায্য করেছে। সার্বিক ভাবে কুমিল্লা-৬ সদর আসনের মাননীয় সংসদসদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার এর সহযোগীতার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরাও আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ  ভিক্টোরিয়া কলেজ মাদক মুক্ত রাখতে আপনার ভবিষ্যৎ পারিকল্পনা কি?
কলেজ অধ্যক্ষঃ আমার ছাত্র-ছাত্রীরা যেন মাদককে মনে প্রাণে ঘৃনা করে। এই জন্যই আমরা ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদ এর মাধ্যমে মাদক বিরোধী বিতর্ক উৎসব আয়োজন করে  আসছি। ভবিষ্যতে এর পরিসর আরো বৃদ্ধি করা হবে। মাদক মুক্ত করার জন্য ভিক্টোরিয়া কলেজ সারা দেশে মডেল হিসেবে কাজ  করবে। আইনশৃংলা বাহিনী তথা পুলিশ, বিজিবি, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা সহ সমাজের বিশিষ্ঠজনদের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকাই মাদক নির্মূল করতে পারে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

ডেইলি কুমিল্লা নিউজঃ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কলেজ অধ্যক্ষঃ ডেইলিকুমিল্লানিউজকেও ধন্যবাদ।

আরো পড়ুন