লালমাইয়ে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো, নদীতে পড়ে প্রাণটাই বুঝি যায়!

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার নবগঠিত লালমাই উপজেলায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর পুরনো দুটি সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ দুটি করছে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয়ের (এলজিইডি) অধীন দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে এ কাজ চলাকালে এলাকার কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ঠিকাদাররা যে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন, তা অত্যন্ত নড়বড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সাঁকোতে চলাচলের জন্য দেওয়া হয়নি হাতলও (রেলিং)। আবার সাঁকোর মাঝে মাঝে বাঁশ সরে গিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক ফাঁক। এতে সাঁকোতে চলাচলকারী শিক্ষার্থী, রোগী, বৃদ্ধসহ জনসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাঁকোতে চলতে গিয়ে মনে হয়, এই বুঝি নদীতে পড়ে প্রাণটা গেল!

লালমাই উপজেলা এলজিইডি সূত্র জানায়, জয়নগর-ভাবকপাড়া সড়কে ভাবকপাড়ায় একটি এবং শানিচোঁ-শিকারীপাড়া সড়কে শিকারীপাড়ায় আরেকটি সেতু (ব্রিজ) ছিল। বহু বছরের পুরনো সেতু দুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি। নির্মাণাধীন সেতুর কাজ পেয়েছে শিকারীপাড়ায় ‘মেসার্স চৌধুরী ট্রেডার্স’ এবং ভাবকপাড়ায় ‘মেসার্স জামান ট্রেডার্স’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ভাবকপাড়ায় মোহাম্মদ লিটন নামের এক ব্যক্তি ও শিকারীপাড়ায় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আয়াত উল্লা সেতুর কাজ করছেন। চার কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু দুটি নির্মিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডাকাতিয়া নদীর দুই পারের হাজার হাজার মানুষের চলাচলের জন্য বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে দুটি সাঁকো নির্মাণ করেছে। দুটি সাঁকোই অত্যন্ত নড়বড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সাঁকো দিয়ে চলাচলের সুবিধার জন্য হাতল নেই। বেশ কিছু স্থানে বাঁশ খুলে গিয়ে ফাঁকা হয়ে ‘মরণফাঁদ’ তৈরি হয়েছে। সাঁকো দিয়ে রোগী, বৃদ্ধ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

ভাবকপাড়ায় কথা হয় সাঁকো ব্যবহারকারী মো. আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি নদীর ওপর বিকল্প চলাচলে এভাবে নড়বড়ে সাঁকো নির্মাণের কোনো মানেই হয় না। এ সাঁকো দিয়ে কয়েকজন হাঁটা শুরু করলে শব্দ করে হেলতে থাকে। আর মাঝে মাঝে বাঁশ সরে গিয়ে মরণফাঁদ সৃষ্টি হয়েছে। এ যেন মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা করা হচ্ছে।’

স্থানীয় ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বাঁশের সাঁকো দিয়ে মোটরসাইকেল দূরের কথা, বাইসাইকেল পার করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।’

ভাবকপাড়া ও শিকারীপাড়ার কয়েকজন স্কুলশিক্ষার্থী বলে, সাঁকোয় হাতল নেই। নড়বড়ে সাঁকোর মাঝখানে গেলে তাদের শরীর কাঁপতে থাকে। বাঁশের ফাঁকগুলো পার হতেও ভীষণ ভয় লাগে। মনে হয়, এই বুঝি নদীতে পড়ে প্রাণটা গেল!

নাম না প্রকাশের শর্তে ওই দুই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানায়, সেতু দুটি নির্মাণকালে চলাচল উপযোগী অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক, এটা তাদের প্রাণের দাবি। আর যদি বাঁশের সাঁকোই থাকে, তা যেন মজবুত করা হয়। না হলে সামনে বৃষ্টিতে সাঁকো দুটি দিয়ে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়বে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিকারীপাড়ায় সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী ট্রেডার্সের পক্ষে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতা আয়াত উল্লা বলেন, ‘আমার এখানে কোনো সমস্যা নেই। আমি ভালোভাবেই বাঁশের সেতু তৈরি করে দিয়েছি। সমস্যা থাকলে ওইটায় (ভাবকপাড়ায়) থাকতে পারে।’

ভাবকপাড়া সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান ট্রেডার্সের পক্ষে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ লিটনের কাছে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে বেশ কয়েকবার তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ধরেননি।

লালমাই উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারাও যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের বলেন।’

সূত্রঃ কালেরকণ্ঠ

আরো পড়ুন