শাসনগাছা ফ্লাইওভারের জন্য আর কত অপেক্ষা !

মাসুদ আলমঃ কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছাসহ আশপাশ এলাকাগুলোতে ফ্লাইওভার নির্মাণে ধীরগতির কারণে যানজটসহ নানা সমস্যায় পড়ছে ধর্মপুর, রেইসকোর্স ও শাসনগাছাসহ নগরের বাসিন্দারা। ফ্লাইভারের কারণে নগরীর পশ্চিমাংশ অনেকটা অকেজো হয়ে আছে। তবে সবার প্রশ্ন কবে শেষ হবে এর নির্মাণ কাজ। কুমিল্লা সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছেন, ফ্লাইওভারের ল্যাম্প লাইটিংসহ যাবতীয় নির্মাণ কাজ শেষ। শুধুমাত্র রেলিং ও কার্পেটের কাজটা বাকী রয়েছে, এই কাজগুলো শেষ হলেই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফ্লাইওভারটি খুলে দেয়া হবে।
এদিকে নগরবাসী ভাবছেন ভিন্ন বিষয়। দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তির অবসানের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারবে শাসনগাছা ফ্লাইওভার ?

সূত্রমতে, শাসনগাছায় রেল ক্রসিংয়ের যানজট নিরসনে ২০১৫ সালের মে মাস থেকে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৫৯কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩১.২৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে ফ্লাইওভারটির কাজ করছে বাংলাদেশী প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ারিং লি.কোম্পানি। নির্মাণের ধীরগতিতে এ পথে যাতায়তকারীরা প্রতিদিনই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে শাসনগাছা থেকে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটসহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করছে। কিন্তু এসব বাস যাত্রীদের চলাচলে বিকল্প কোন সড়কের ব্যবস্থা করা হয়নি। হকার বসার কারণে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে পায়ে হাঁটার জায়গাও নেই।

নির্মাণকাজের শুরু থেকে ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নামা ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফ্লাইওভারটি পুরোপুরি চালু হওয়ার পর যানজট কমলেই কেবল দীর্ঘ ভোগান্তি পেরিয়ে সুফল পাবেন তারা। আর তা না ঘটে উল্টো যানজট আগের চেয়ে বাড়তে পারে বলেও শঙ্কিত অনেকে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সড়ক আগের চেয়ে ছোট হয়ে যাওয়া, সংযোগ সড়কের যানবাহনের যানজট সৃষ্টি হবে।

নগরীর বাদশামিয়া এলাকার বাসিন্দা ইকরাম হোসেন বলেন, দীর্ঘ কয়েকটা বছর কতটা যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আমাদের, সেটা আমরাই জানি। যানজটে যে কত সময় নষ্ট হয়েছে! আর ফ্লাইওভার নির্মাণে যে সময় নিয়েছে, এত সময় তো নেওয়ার কথা ছিল না।

ফ্লাইওভারের নিকটবর্তী ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম ভূইয়া বলেন, মানুষ যানজটের কারণে শাসনগাছা এলাকায় আসতে চায় না। এতে ব্যবসায়ীরা তাদের বাইরের ক্রেতা হারাচ্ছেন। ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা ছিলো, কিন্তু এখনও শেষ হয়নি। ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা গুলোও সংস্কার করা প্রয়োজন। কাজ দ্রুত শেষ হলে এ এলাকার ৫ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী লাভবান হতো।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি আলী আকবর মাসুম বলেন, শাসনগাছা রেল ক্রসিংয়ে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ফ্লাইওভার নির্মাাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। গত ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও শেষ হয়নি। মানুষের চলাচল ও যান চলাচলে দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত র্নিমাণ কাজ শেষ করা প্রয়োজন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শাসনগাছা ফ্লাইওভার এখন নগরবাসীর জন্য মহাদুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজের ধীরগতির কারণে শাসনগাছার সাথে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে রাস্তা বন্ধ করে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। শত দুর্ভোগ মানুষ মুখ বুজে সহ্য করছে। আমরা এখনও স্ট্যান্ডার্ড নাগরিক হতে পারিনি,তাই আমাদের সাথে যা ইচ্ছে তা করা হচ্ছে।

সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হায়দার জানান, শাসনগাছায় ফ্লাইওভারের নির্মাণে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় কাজের গতি কমে যায়। এখন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। রেলিং ও কার্পেটিংসহ অল্প কিছু আনুষাঙ্গিক কাজ বাকী রয়েছে। এগুলো শেষে হলেই আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ফ্লাইওভার চালু করতে পারবো। এছাড়াও নিচের সড়ক গুলোও দ্রুত সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানান।

আরো পড়ুন