২০১৭ সালে কুমিল্লার রাজনীতির হালচাল

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতুঃ চলে গেল ঘটনাবহুল ২০১৭ সাল। বিগত বছরটি কুমিল্লার রাজনীতিতে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। আ’লীগে অর্ন্তকোন্দল বৃদ্ধি পেলেও প্রভাব-শক্তি কোন অংশে কমেনি বরং সুসংহত হয়েছে। কুসিক মেয়র পদ রক্ষা করা ছাড়া বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য নেই। অর্ন্তকোন্দল বেড়েছে। মামলা-গ্রেফতারজনিত কারনে মাঠে তেমন সক্রিয়তা ছিল না নেতাকর্মীদের। জামায়াতেরও প্রকাশ্যে কোন কার্যক্রম নেই। সব মিলিয়ে ২০১৭ সালের কুমিল্লার রাজনীতির চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

সিটিতে নৌকার ভরাডুবি, অর্ন্তকোন্দলের কাছে আফজল খান পরিবারের পরাজয়ঃ
বিগত বছরের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয় হয় নৌকার প্রতীকের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমার। বিভিন্ন সূত্রমতে, আফজল খান-এমপি বাহারের মধ্যে বহু বছরের অর্ন্তকোন্দল, বিএনপি প্রার্থী সাক্কু আর এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠতা, স্থানীয় অর্ন্তকোন্দল নিবারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যর্থতা, পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালের সদর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ডে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় ফটো সেশনের রাজনীতি, ওই ৯ ওয়ার্ডে নৌকার চরম ভরাডুবি, কেন্দ্রীয় নেতাদের কুমিল্লায় এসে ফটো সেশনের রাজনীতি, খাদি- রসমালাইয়ের উপহার আর অর্থ বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণেই দলীয় প্রার্থী সীমার পরাজয়ের মূল কারণ ।

কৌশলী রাজনীতিতে সফল সাক্কুঃ
৬৮ হাজার ৭৯৫ ভোট পেয়ে সীমাকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত নগর পিতার আসনে বসেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। ১১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মেয়র হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। আবার শপথ শেষে পা ছুঁয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোয়াও নিলেন। জানা যায়, সাক্কু পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এদিকে শপথ নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া নিলেন। এটাও তার রাজনীতি কৌশলের একটি অংশ বলে বিভিন্ন জন বলছেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, আগামী ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি এ দোয়া চেয়েছেন । এতে তিনি কতটা সফল হন তা ভবিষ্যতই বলে দিবে।

মহানগর কমিটি পেয়ে এমপি বাহার আরো সংগঠিতঃ
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কুমিল্লা মহানগর আ’লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান কুমিল্লা সদর সাংসদ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। সাধারণ সম্পাদক পদ হন তারই আস্থাভাজন আরফানুল হক রিফাত। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সিংহভাগ পদই এমপি বাহারের সমর্থিত নেতাকর্মীরা পেয়েছেন। এর ফলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক পদে সর্বোচ্চ পদ নিয়ে ফিরলেন এমপি বাহার। কয়েকটি পদ পেয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক ও আফজল খান গ্রুপের নেতাকর্মীরা। তবে এ কমিটিতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান এড., সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম শিকদার, সদস্য এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের স্থান হয়নি।

সাক্কু-ইয়াছিনের মধ্যে অর্ন্তকোন্দল বৃদ্ধি পেয়েছেঃ
৩০ মার্চ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও এক সাথে কাজ করেছে মেয়র সাক্কু ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন। গত কয়েক মাস ধরে গুঞ্জন রয়েছে ছাত্রদল-যুবদল কমিটি নিয়ে আবার দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে সাক্কু ও ইয়াছিন গ্রুপের মধ্যে ।

এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে মন্ত্রী-এমপিরাঃ
বছরের শেষের দিকে এলাকামুখী হতে দেখা গেছে কুমিল্লার আ’লীগের হেভিওয়েট মন্ত্রী ও এমপিদের। কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ-নাঙ্গলকোট) আসনের সাংসদ পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছেন ভোটারদের সাথে। কখনো পায়ে হেটে, কখনো মোটরসাইকেলে চড়ে। কখনো রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ধান মাড়াই করছেন, কখনো শিশুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, আবার কখনো বিলে জাল ফেলে মাছ ধরছেন। ভোটারদের ঘরের চৌকাঠে বসে কথা বলছেন। তেমনি অন্য আসনের এমপিরাও একই পদ্ধতি অবলম্বনের চেষ্টা করেছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী নতুন মুখরা ছিল মাঠেঃ
বিগত বছরের শেষের দিকে মনোনয়নের প্রত্যাশায় বিভিন্ন আসনে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন নতুন ও তরুন রাজনীতিবিদরা। এদের কেউ নৌকার মাঝি হতে চান, আবার কেউ ধানের শীষ, কেউ লাঙ্গল প্রতীক পেতে চান। কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা) আসনে আ’লীগ থেকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ব্যারিস্টার নাঈম হাসান ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্র বিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক আবু জায়েদ আল মাহমুদ মাখন সরকার, কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনে কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, গাজীপুর খান মডেল বহুমুখী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতি মোঃ সারোয়ার হোসেন বাবু, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে আ’লীগ নেতা ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী, কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি চিকিৎসক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত। কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি আবুল কালামকে (চৈতী কালাম) নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাতে দেখা যায়।

আজিম আউট, কালাম ইনঃ
বছর জুড়ে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে আলোচ্য বিষয় ছিল সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিমের পদত্যাগ আর লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ওরফে চৈতি কালামের অবস্থান মজবুত হওয়ার বিষয়টি।

বিএনপি হারিয়েছে হেভিওয়েট রাজনীতিবিদ এম কে আনোয়ারকেঃ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এম কে আনোয়ার পরলোকগমন করেছেন। ২৫ অক্টোবর হোমনায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল ও ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দু’বার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরো পড়ুন