অবশেষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

অবশেষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে মুঠোফোনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। সেই সঙ্গে নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, উপগণশিক্ষা সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদ ও উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক ফাহিম ইসলাম লিমনের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি বিলুপ্ত করেছেন। শুক্রবার রাতে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। শিগগিরই নতুন কমিটি হবে। এ জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত নেওয়া হচ্ছে।’

দলীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৮ মে সভাপতি পদে মো. ইলিয়াস মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে রেজাউল ইসলাম মাজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আংশিক কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর ১৬১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। তাঁদের পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও ছাত্রত্ব নেই। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছেন। এক বছর মেয়াদি ওই কমিটির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়।

এর মধ্যে সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, বর্তমানে তাঁর ছাত্রত্ব নেই। তিনি গত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে একা একটি কক্ষে থাকছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ–বাণিজ্য, সাংবাদিকদের নিপীড়ন ও মারধর, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধর, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি, শিক্ষকের বাসায় হামলা, মাদক সেবন, র‍্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার, নতুন ক্যাম্পাসে ভূমি অধিগ্রহণের নামে প্রভাব বিস্তারের নানা অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচ নেতা বলেন, ‘একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী টানা ১৫ বছর হলে আছেন। পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবন তিনি ১৫ বছর কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজকতা চালিয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ, দেরিতে হলেও আদুভাই যুগের অবসান ঘটানোর জন্য।’

২০০৭ সালের ২৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি মুক্ত। প্রতিবছর ভর্তির সময় শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ধূমপান করবে না বলে অঙ্গীকারনামা দিয়ে ভর্তি হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে ছাত্ররাজনীতি শুরু করে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই রাতে মো. খালিদ ছাইফুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এটি।

আরো পড়ুন