অভাবের তাড়নায় সন্তানকে বিক্রি, ফিরিয়ে দিল পুলিশ

মাস দেড়েক আগেই তৃতীয় সন্তানের জন্ম দেন গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার লিমা হনুফা (৩৫)। অন্যের বাড়িতে কাজ করে লিমা হনুফাকে সংসার চালাতে হয়। সন্তান প্রসবের কারণে দীর্ঘদিন ধরে কাজে যেতে পারেননি।

লিমার স্বামী মো. মাসুম শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। তাই আয়রোজগার প্রায় বন্ধ থাকায় ৩০ হাজার টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল লিমা-মাসুমার।

এক দিকে সংসারের খরচ, অন্য দিকে পাওনাদারের নিয়মিত চাপ—সব মিলিয়ে লিমা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। এ অবস্থায় ঋণ শোধ করতে মাত্র ৪৭ দিন বয়সী ছেলেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন লিমা। ওই টাকা পেয়ে লিমার আর্থিক মুক্তি হয়তো মিলেছিল, কিন্তু কোলের সন্তানকে অন্যের কোলে তুলে দিয়ে হতাশায় ডুবে যান তিনি।

সন্তান চোখের আড়াল হওয়ায় খাওয়াদাওয়া সবই ছেড়ে দিয়েছিলেন। লিমার এ করুণ পরিণতি জানতে পেরে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের মহানুভবতায় লিমা কোলের সন্তানকে ফিরে পেয়েছেন।

গাজীপুরের টঙ্গীর জামাইবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পুলিশ লিমার কাছে তাঁর ছেলেকে হস্তান্তর করেন।

লিমা বলেন, তাঁর স্বামী অসুস্থতার কারণে সেভাবে কোনো কাজ করতে পারেন না। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে ছোট ছেলের বয়স ৪৭ দিন। এক প্রতিবেশীর পরামর্শে গত সোমবার ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঢাকার দোহারে এক পরিবারের কাছে তিনি ছোট ছেলেকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

সন্তান বিক্রি করার পর থেকেই হতাশায় ভুগছিলেন লিমা। এদিকে খবরটি স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় লোকজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল করে বিষয়টি পুলিশকে জানান। এরপর পুলিশ লিমার অসহায়ত্ব দেখে শিশুটিকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়।

শিশুটি উদ্ধারের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. মাহবুব-উজ-জামান বলেন, অভাবের কারণে এক মা তাঁর সন্তান বিক্রি করে দিয়েছেন, এমন খবর পেয়ে তাঁরা কিছুটা অবাক হয়ে যান। প্রাথমিকভাবে যাচাই করে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পায়।

পরে পুলিশের উদ্যোগে দোহারের ওই দম্পতিকে টাকা পরিশোধ করে লিমার সন্তানকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি লিমার স্বামীর জন্যও একটি কারখানায় চাকরির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

আরো পড়ুন