‘আমার নেওয়ার কিছু নেই’ – আতিকুল

নাসির উদ্দিন তন্ময়ঃ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বিজিএমইএ-র সাবেক প্রেসিডেন্ট কুমিল্লার সন্তান আতিকুল ইসলামের বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তারা পাঁচ ভাই ও ছয় বোন। তিনি সবার ছোট। বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার লালপুরে। ১১ ভাইবোনের সংসার সামলাতে তার মাকে হিমশিম খেতে হতো। পরিবারের আনন্দ-বেদনার কথা উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেখেছি, মা আমার কাপড় ভাঁজ করে বালিশের তলায় রাখতেন। ইস্ত্রি করতে পারিনি, পয়সা ছিল না। এভাবেই মা আমাদের মানুষ করেছেন।’

সোমবার বিকেলে রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে গণসংযোগের সময় পরিবারের কথা উল্লেখ করে তিনি এ মন্তব্য করেন। আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একা কোনও কাজ করতে পারবো না। তবে আমরা সবাই মিলে পারবো। ঢাকার চাকাতো অচল হয়ে গেছে, এটাকে সচল করতে হবে। আমরাই পারবো জলাবদ্ধতা দূর করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার সব পার্ক দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে। এর সঙ্গে বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে। আমরাই পারবো তাদের হাত থেকে ঢাকার পার্কগুলোকে উদ্ধার করতে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি পার্কে যেতে না পারে, মুক্ত বাতাস খেতে না পারে, তাহলে তাদের কিন্তু মনের বিকাশ ঘটবে না। সুতরাং আমাদের কিছু করে যেতে হবে।’

নিজের পরিবারের কথা উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা একজন এসপি ছিলেন। বদনাম আছে অনেক। কিন্তু আমি সেই বদনাম নিতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘‘আমার জন্মের তিন মাস পর বাবা অবসরে যান। আমি পরিবারের ছোট ছেলে। আমার ভাই বিচারপতি তোফাজ্জল ইসলাম। তিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের সময় প্রত্যেকে বিব্রতবোধ করেছেন। কেউ কোনও রায় দেননি। যাকেই রায় দিতে বলা হয়, সেই বিব্রত বোধ করেন। আমার ভাই তখন আপিল বিভাগে ছিলেন। তার কাছে যখন ফাইলটা আসলো তখন তিনি মায়ের কাছে গেলেন। বললেন মা, ‘আমার কাছে তো ফাইলটা এসেছে।’ তখন মা বললেন, ‘আমি মনে করি, এই দেশে ন্যায় বিচার হওয়া দরকার।’ আমার মা তখন মৃত্যু শয্যায়। মা বলেছেন, ‘বাবা, যেটা সঠিক সেটাই করো। সবাই যদি বিব্রতবোধ করে, জাতির পিতার হত্যার কোনও দিন বিচার হবে না।’ সেই দিন আমি, আমার মা, আমার বোন সবাই দরজা বন্ধ করে বাসায় বসলাম। আমাকে কিন্তু সবাই চেনে। সেদিন আমার কাছে সাতটি ফোন এসেছিল, যাতে আমি আমার ভাইকে বিব্রতবোধ করতে বলি। সেদিন আমি বলেছিলাম, যেটা ন্যায় ও সঠিক সেটিই হবে। তখন আমার ভাই কলম বের করে রাত সাড়ে ১০টার সময় রায় দিলেন- মৃত্যুদণ্ড হবে সবার। এই হচ্ছে আমাদের পরিবার। সুতরাং আমরা গর্ববোধ করতে পারি।’

আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘‘আমার আরেক ভাই লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মঈনুল ইসলাম। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরে প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকে বলেন, ‘তুমি বিডিআর-কে রিফর্ম করো।’ আমার ভাই পিলখানার ভেতরে ঢুকে প্রত্যেক মৃত অফিসারের রক্ত মুছে মুছে বিডিআরকে রিফর্ম করেছেন। আর আমি বিজিএমইএ-র দায়িত্ব পালন করেছি। রানা প্লাজার পরে আমি চেষ্টা করেছি পোশাক খাতকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর জন্য। জান-প্রাণ দিয়ে বলেছি, শ্রমিকের যেন কোনও অসুবিধা না হয়। আমি তখন বলেছিলাম, রানা প্লাজায় যেসব শ্রমিক মারা গেছে বরং ওদের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নতুন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি গড়ে তুলবো। এখন দেখছেন বাংলাদেশের প্রায় সব কটি ফ্যাক্টরি অনেক উন্নত।’

তিনি আরও বলেন, ‘আনিসুল হক আমাদের কলিগ ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। আমি চাই, তিনি যে কাজগুলো যেখানে যে অবস্থায় রেখে গেছেন, সেই অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে। আওয়ামী লীগ থেকে যদি আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি- এই কাজগুলো আমি করবো। আমার নেওয়ার কিছু নেই। আমি দিতে চাই। আপনারা আমার পাশে থাকবেন। আমাদের একটাই স্লোগান হবে, আমরা অচল ঢাকাকে সচল করতে চাই। কিভাবে আমরা ঢাকায় নিরাপদে চলতে পারি, এটাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ।’

গণসংযোগের সময় আতিকুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন-অভিনেত্রী শমী কায়সার, সুইটি ও অভিনেতা আজিজুল হাকিম। এছাড়া, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ জনিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন