কুবিতে মধ্যরাতে ছাত্রী হলে পুলিশ প্রবেশের অভিযোগ

কুবি প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হলে প্রাপ্য অধিকার এবং নিরপত্তার দাবিতে মানবন্ধন করেছেন ছাত্রীরা। সোমবার দুপুরে ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলায় নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ছাত্রীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনের আগে হলের প্রাধ্যক্ষ এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে হলে অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য পৃথকভাবে আবেদন করেন তারা। এদিকে রোববার দিবাগত রাতে (সোমবার রাত আড়াইটায়) কয়েকজন পুলিশ সদস্য নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের মূল গেইট থেকে ক্লাপসিবল গেইট(হল কমপ্লেক্স) পর্যন্ত যায় বলে অভিযোগ করেন ছাত্রীরা।

মানববন্ধনে ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, সোমবার গভীর রাতে আনুমানিক ২টা ১৭ মিনিটের সময়ে কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য ছাত্রী হলে প্রবেশ করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আইভী রহমানের সাথে ওই ব্যক্তিদের কথা বলতে দেখা যায়। গভীর রাতে পুলিশ সদস্যদের এরকম প্রবেশ আমাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করেছে। মানববন্ধনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আরো অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাদের বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে আসছেন। নাশকতামূলক কর্মকান্ডে জড়িত এমন বলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকিও প্রদান করা হয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ।

মানববন্ধনে সাধারণ ছাত্রীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী বীথি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে হলে সিট ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করায় আমরা বিভিন্ন ব্যক্তির হুমকির শিকার হচ্ছি। এই অবস্থায় আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।’ ছাত্রী হলে পুলিশ এসেছিল কিনা বিষয়টির সত্যতা জানার জন্য সিসি ক্যামেরায় দেখার দাবি জানান হয়।

মানববন্ধন শেষে প্রক্টরের কার্যালয়ে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের সাথে কথা বলেন আন্দোলনরত ছাত্রীরা। প্রক্টরের কার্যালয়ে কয়েকজন ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, গতরাতে (রবিবার দিবাগত রাতে) ছাত্রলীগের এক নেত্রী আমাদের হুমকি দিয়ে আসছিল। এ সময় আমাদেরকে পুলিশের ভয়ভীতিও দেখানো হয়। পরে রাত আড়াইটায় হল গেটে পুলিশ এলে কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য হলের মূল গেইটে প্রবেশ করে ঐ নেত্রীর সাথে কথা বলে। তবে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আইভি রহমান বলেন, ’পোশাকধারী পুলিশই এসেছিল। তাদের সাথে আমি গেইটের ভিতরে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি।’

ছাত্রীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘এ অভিযোগ সত্য নয়। পুলিশ গেইটের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা সাথে কথা বলেছে শুধু। ভিতরে প্রবেশ করে নাই। সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই প্রমান পাওয়া যাবে।’

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘এটা কোন সাধারণ ছাত্রীদের আন্দোলন নয়। ছাত্রী সংস্থার ছাত্রীরা এমনটি করেছে। এদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।’

ছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের প্রাধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান শিকদার বলেন, ‘ওদের একটা অভিযোগ আমি পেয়েছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) হলে প্রভোস্ট বডির মিটিং ডেকেছি।’ পুলিশ প্রবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গেইট থেকেই এক ছাত্রীর সাথে টহল পুলিশ কথা বলেছে। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করেনি।’

প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রীদের সাথে আমি কথা বলেছি। তাদের দাবির বিষয়ে জেনেছি। মূলত হলের আসন নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে পুলিশ প্রবেশের বিষয়টি সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে।’

আরো পড়ুন