কুমিল্লার কালিরবাজারে মেম্বার পুত্রের অপকর্মের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সফিকুল ইসলামের ছেলে বিল্লাল হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের অপকর্মের বিরূদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকার বিক্ষুব্দ জনতা। স্থানীয় মনশাসন বেলতলী বাজারে একটি সালিস বৈঠকে বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে বিক্ষুব্দ জনতা রুখে দাঁড়ায়। শালিস বৈঠকে সংঘর্ষে ৭/৮ জন আহত হয়েছে। বাড়িঘরে হামলা ও একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করা হয়েছে। মনশাসন বেলতলী বাজারে বিল্লাল ও সফিক মেম্বারকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাত ১০ টায় স্থানীয় মনশাসন বেলতলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্র জানান, গত মঙ্গলবার বিকালে কালিরবাজারের মনশাসন বেলতলী বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী ঠিকাদারকে ইঙ্গিত করে কটুক্তি করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলামের পুত্র বিল্লাল হোসেন। এনিয়ে সফিক মেম্বারগংদের সাথে মোহাম্মদ আলীর বাক-বিতন্ডা হয়। উভয়পক্ষ বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো.সেকান্দর আলীকে জানালে রাত সাড়ে ৯ টায় বিষয়টি মিমাংসার জন্য শালিস বৈঠক ডাকা হয়।স্থানীয় বেলতলী বাজারে ডাকা ওই সালিস বৈঠকে বিল্লাল বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে জড়ো করে। খবর পেয়ে আশেপাশের গ্রামের কয়েকশ উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। ওই সালিস বৈঠক শুরু হলে সফিক মেম্বারের ছেলে বিল্লাল দরবারীদের কটাক্ষ মন্তব্য করলে বৈঠকে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সফিক মেম্বারের ছেলে বিল্লালের বিভিন্ন অপকর্মে কারণে স্থানীয় সাধারন লোজন ক্ষুব্দ থাকায় প্রতিপক্ষের সাথে জনতা মিলে তাদের দাওয়া করে। দাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে যায়। পরে উত্তেজিত জনতা সফিক মেম্বারের বাড়িঘর ভাংচুর করে। বাড়ির সামনে থাকা একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করে। খবর পেয়ে ক্যান্টমেন্ট ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন মূহুর্তে ফের রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশংকা করেছেন এলাকাবাসী।

শালিশ বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী, নূরুল ইসলাম ইউসুছ, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস, সাবেক সেনা সদস্য আবু তাহের সহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ইউপি নির্বাচনে সফিক মেম্বার বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় মেম্বার হয়ে যান। এর পর থেকে ওই পরিবার এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠে। সফিক মেম্বারের ছেলে বিল্লাল বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এলাকার নিরিহ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানী, নির্যাতন,জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের কারণে এলাকাবাসী ওই পরিবারের প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে উঠে। এলাকায় তাদের আধিপত্য জানান দিতে মঙ্গলবার শালিস বৈঠকে তারা বহিরাগত সন্ত্রাসী জড়ো করে ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা চালায়। দরবারিদের অসম্মান করায় ক্ষুব্দ জনতা তাদের দাওয়া করে। পুনরায় বাড়িতে গিয়ে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে বের হতে চাইলে বাড়ি ঘরে হামলা চালায় এলাকাবাসী। মাইক্রোবাসযোগে আসা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় মাইক্রোবাসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে উত্তেজিত জনতা। এটা এলাকায় তাদের নির্যাতনের শিকার জনতার ক্ষোভের বহি:প্রকাশ।

এদিকে স্থানীয় কৃস্নপুর গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্ধা জানান, গত ৯ এপ্রিল কৃ পুর পইয়া বাড়ি মসজিদ পুকুরে রাত ৩ টার দিকে বড় জাল পেলে লক্ষাধিক টাকার মাছ লুটে নেই একটি সন্ত্রাসী চক্র। মালিক পক্ষ টের পেয়ে ধাওয়া করলে জাল ফেলে তারা পালিয়ে যায়। ২৩ এপ্রিল ৫/৬ টি মটর সাইকেলযোগে একটি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়ে সাদেক মিয়া গংদের মালিকাানাধীন একটি জমির ফসল নষ্ট করে বাঁশের বেড়া দিয়ে দখলের চেষ্টা চালায় প্রতিপক্ষরা। উভয় ঘটনায় সফিক মেম্বারের পুত্র বিল্লাল নেতৃত্বে ছিল বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা। তারা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে মামলায় তাকে অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়।

এবিষয়ে সফিকুল ইসলাম মেম্বার জানান, একটি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমার প্রতিপক্ষের লোকজন বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শালিস বৈঠকে হামলা চালায়। আমার বাড়ি ঘর ও আমার ভাইয়ের একটি মারুতী গাড়ি ভাংচুর করে। আমার পক্ষের ৪/৫ জনকে আহত করে। গুরুতর জখম সোহাগকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো.সেকান্দর আলী জানান, মনশাসন বেলতলীতে সালিস বৈঠকে যে অনাকাংখিতভাবে ভুল বুঝাবুঝির কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষই আমাদের দলীয় লোক। বাহিরের কিছু লোক ইন্ধন দিয়ে আমাদের দলীয় ঐক্য নষ্ট করতে চাইছে। পুনরায় যেন মামলা-হামলা না হয় আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করছি।

ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মাহমুদুল হাছান রুবেল জানান,মঙ্গলবার রাতে মনশাসন বেলতলীতে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। কোন পক্ষই এখনো মামলা করেনি।

আরো পড়ুন