কুমিল্লার সংরক্ষিত আসনে এমপি, কে এই আরমা দত্ত ?

ডেস্ক রিপোর্টঃ সংরক্ষিত নারী আসনে কুমিল্লা থেকে মনোনয়ন পেলেন ভাষা সংগ্রামের রূপকার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনী আরমা দত্ত ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা। গতকাল সংরক্ষিত নারী আসনের ৪১জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলটির সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় এসব নাম চুড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে রাত সোয়া ১০টার দিকে গণভবন থেকে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জন্ম:
বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ১৯৫০

আরমা দত্ত একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা।

জন্ম ও বংশপরিচয়
আরমা দত্ত জন্মেছেন কুমিল্লায় তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে ১৯৫০ সালের ২০ জুলাই। বাবা সঞ্জীব দত্ত ছিলেন ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার সাংবাদিক। মা প্রতীতি দেবী, বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋত্তিক ঘটকের যমজ বোন। কাকা দীলিপ দত্তই মূলত বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। দাদু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আর একমাত্র ছোট কাকা দীলিপ দত্ত দুজনেই পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে।

পারিবারিক জীবন
পারিবারিক জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত সামলেছেন আরমা দত্ত। দাদুর অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে বাস্তবে রূপ দিতেই বিয়ে করেন অধ্যাপক মাহবুব আহমদকে। তিনি ছাত্র জীবনে তাঁর দুই বছরের বড় ছিলেন। তাঁদের একটি কন্যা সন্তান – নাম এষা অরোরা। আরমা দত্তের দাম্পত্য জীবন খুব বেশিদিন টেকেনি। এরপর তিনি বিয়ে করেন সমীর গুণকে। দ্বিতীয় জীবনসঙ্গীকে পরিত্যাগ করে চলে আসতে হয় তাঁকে। বারবার ঘর ভাঙলেও ঘরের মায়া ছাড়তে পারেননি আরমা। পারিবারিক জীবন তাঁর খুব প্রিয়। ঘরে আছেন মা, বিখ্যাত চলচিত্র ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক ঘটকের যমজ বোন প্রতীতি দেবী, মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই রাহুল দত্ত, কন্যা এষা অরোরা। এদের নিয়েই তাঁর সংসার। তারা ছাড়াও কন্যাস্নেহে তিনি একই বাড়িতে লালন-পালন করেছেন আরো কয়েকজন কিশোরী ও তরুণীকে। এদের সবাইকে নিয়ে কেটে যাচ্ছে কর্মব্যস্ত জীবন।

শিক্ষাজীবন
কুমিল্লা শহরের একটি আমেরিকান কনভেন্ট স্কুলে তাঁর লেখা পড়ায় হাতেখড়ি। মাত্র সাড়ে তিনবছর বয়সে তিনি ওই স্কুলে ভর্তি হন। দাদু যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী হবার পর তিনি বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন ঢাকার ভিকারুননেসা স্কুলে লেখাপড়া করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত চেয়েছিলেন, বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনা করে আরমা প্রকৃত বাঙালি হবেন। কিন্তু পরে ইংরেজী পড়ায় তাঁর আগ্রহ দেখে আবার পাঠালেন কুমিল্লার কনভেন্টে। ম্যাট্রিক পাশ করেছেন ১৯৬৬ সালে নবাব ফয়জুন্নেসা স্কুল থেকে। ইন্টার মিডিয়েট পাশ করেছেন কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে। সেই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্বে অনার্সে ভর্তি হন। অনার্স পরীক্ষা হবার কথা ছিল ১৯৭১-এ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের কারণে সেটা এক বছর পিছিয়ে যায়। ১৯৭৩ সালে অনার্স পাশ করেন। ১৯৭৪ সালে হন স্নাতকোত্তর।

কর্মজীবন
কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে। দেড় বছরের মতো চাকরি করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন তাঁকে ব্যথিত করে। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুন্ঠিত হয়। তিনি চলে যান কানাডায় স্বামীর কাছে। কিন্তু কানাডার আইনে পোষ্য হিসেবে কোনো কাজ পাওয়া তাঁর জন্য জটিল হয়ে পড়েছিল। ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি আবার বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ তার কাছে তখনো অস্থিতিশীল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আর যোগ দেননি। এ অবস্থায় তিনি ইউএসএআইডিতে প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগ দেন। দুই বছরের মতো সেখানে ছিলেন। তারপর ১৯৮৩ সালে যোগ দিলেন নরওয়েজিয়ান এইড নোরাডে। সেখানে তার পেশাগত উন্নয়ন ঘটে। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি নোরাড- এ ছিলেন। এরপর ১৯৮৯ সালেই প্রিপ ট্রাস্টে যোগ দেন আরমা দত্ত। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন ডেভিড পি করটেন। পরবর্তীকালে আরমা দত্তই প্রিপ ট্রাস্টের হাল ধরেন। বর্তমানে তিনি প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক।

অবদান
১৯৭০’র নির্বাচনের পর স্বাধীনতা সংগ্রাম যখন প্রবল আকার ধারণ করল তখন আরমা দত্ত দিনরাত সাংগঠনিক কাজ করতেন। ২০০১ সালে রাজনৈতিক কারণে যখন এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় তার বিপক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রিপ ট্রাস্ট। এনজিওদের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বাড়ানোর জন্যও কাজ করেছেন তিনি।

আরো পড়ুন