কুমিল্লার সবজির চারা রফতানি হচ্ছে বিদেশে, বছরে বিক্রি ৪ কোটি টাকা

একপাশে গোমতী নদী অন্য পাশে রানি ময়নামতির প্রাসাদ। এর মাঝেই সমেষপুর গ্রাম। ছায়া সুনিবিড় সমেষপুর গ্রামে এখন নজর কাড়ে চারা চাষিদের ব্যস্ততা। কেউ জমি প্রস্তুত করছেন। কেউবা পানি ছিটাচ্ছেন। কেউবা চারা তুলে আঁটি করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে থেকে পাইকাররা চারা গুনে গাড়িতে তুলছেন।

এমন দৃশ্য দেখা যায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেষপুর গ্রামে। ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ এই চার মাস চারা উৎপাদন ও বিক্রয় হয়। এ সময়ে প্রায় চার কোটি টাকারও বেশি রবি শস্যের চারা উৎপাদন ও বিক্রি করেন এ জনপদের কৃষকরা। এসব রবিশস্যের চারা দেশের সবজি চাষিদের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট ছোট প্লটে হাজারো চারা দোল খাচ্ছে। রোদ থেকে বাঁচাতে চারা গাছের উপরে বাঁশ-পলিথিন দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাষিরা নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউবা পানি ছিটিয়ে চারাগুলোকে সতেজ করার চেষ্টা করছেন। প্লটগুলোতে মাথা তুলে আছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটো, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজির চারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বুড়িচং উপজেলার সমেষপুরসহ পাশের কয়েকটি গ্রামে প্রায় ৩০ একর জমিতে চারা চাষ করেছেন কৃষকরা। চারটি ব্লকে ৯৪ জন চাষি চারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।

সমেষপুর এলাকার চারা চাষি মো. হুমায়ূন কবির জানান, তিনি এ বছর ১০০ শতক জমিতে সবজির চারা চাষ করেছেন। তার বাগানে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন জাতের চারা রয়েছে। ১০০ শতক জমিতে চারা উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদে তার মুনাফা হবে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা।

চারা চাষি মোতাহের হোসেন জানান, ১০০ ফুল কফির চারা আকার-আকৃতি ও জাত হিসেবে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। বেগুনের চারা ১০০টি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। বিভিন্ন শাক-সবজির চারার গড় দাম প্রায় এমনই।

অরেক চারা চাষি মোতাহের হোসেন জানান, সমেষপুরের চারা সিলেট, সুনামগঞ্জ, ছাতক, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকেও পাইকাররা এসে চারা নিয়ে যান। বিশেষ করে ভারতের বক্সনগর, সোনামূড়ার কৃষকরা আসেন। কেউ কেউ লোক পাঠিয়েও নিয়ে যান।

ছাতক থেকে চারা কিনতে আসা পাইকার আবদুর রউফ বলেন, তিনি গত দশ বছর ধরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেষপুর থেকে চারা কিনে নিয়ে যান। এখানকার চারা যেমন সাশ্রয়ী তেমনি মানও ভালো। ফলনও ভালো হয়।

বুড়িচং উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চারা উৎপাদনের সময় রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া, রবি প্রণোদনা, বোরো হাইব্রিড প্রণোদনা, পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগানসহ কৃষক প্রশিক্ষণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে চারা শিল্পের কৃষকদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ এ মাসেই আয়োজনের কথা রয়েছে। কারণ বুড়িচং উপজেলার চারা শিল্প একটি প্রসিদ্ধ ও লাভজনক ব্যবসা। দেশের ১০ থেকে ১৫টি জেলায় চারা বিক্রির মাধ্যমে শীতকালীন সবজি উৎপাদনে এখানকার চাষিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এ শিল্পের প্রসারে প্রযুক্তিগত সব ধরনের পরামর্শ আমরা প্রদান করে আসছি। কৃষি পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করে কৃষকরা সচেতন হলে শিল্পটি আরো বিকশিত হবে।

আরো পড়ুন