কুমিল্লায় ক্রিকেটার ডিকেন্সের ক্রিকেট স্কুল

শাহাজাদা এমরানঃ সুস্থ থাকার জন্য চাই খেলাধুলা- এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স দেশে নতুন মাশরাফি, সাকিব ও তামিম সৃষ্টি করার কাজে হাত দিয়েছেন। এ জন্য তিনি কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠা করেছেন ক্রিকেট স্কুল কুমিল্লা। দেশের ক্রিকেটের আগামী দিনের তারকা তৈরি করা আর কুমিল্লার ক্রিকেটারদেরকে জাতীয় দলে খেলানোর উপযোগী করে তুলতেই এই ক্রিকেটীয় উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

তার বিশ্বাস, সবার সার্বিক সহযোগিতা পেলে ক্রিকেট স্কুল কুমিল্লা , কুমিল্লা তথা দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলের হার্দিক সহযোগিতা।

ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার। লাল-সবুজ পতাকার জার্সি গায়ে দিয়ে তিনি দেশের হয়ে ৬টি ওয়ানডে আর একটি টেস্ট খেলেছেন। ২০০৩-২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় দলে খেলেছেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার এনামুল হক মনির পরে ফয়সাল হোসেন ডিকেন্সই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি কুমিল্লা থেকে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। এরপর আর কোন কুমিল্লার ছেলে এখন পর্যন্ত আর জাতীয় দলে সুযোগ করে নিতে পারেনি। আর এই বিষয়টিই বড় পীড়াদায়ক বলে মনে করছেন ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স। বলা যায় এই জেদ থেকেই তিনি কুমিল্লার ক্রিকেটের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই চালু করছেন স্কুল ক্রিকেট কুমিল্লা। তার বিশ্বাস, দেশের ক্রীড়ার পাদপীঠ কুমিল্লা থেকেই তিনি একদিন বের করে নিতে পারবেন আগামী দিনের তারকা ক্রিকেটার। এ জন্য প্রয়োজন একেবারেই তৃণমূল থেকে প্রতিভা খুঁজে বের করা। কাজটি কিছুটা কঠিন হলেও অসম্ভব মনে করছেন না তিনি। তার দৃঢ় বিশ্বাস, তিনি এ কাজে অবশ্যই সফল হবেন তবে প্রয়োজন শুধুমাত্র সময় আর পরিশ্রমকে বিনোয়োগ করা।

ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স জাতীয় দলে খেলার সময়ই চিন্তা করেছিলেন খেলা ছেড়ে দিলে কি করব ? তখন খেলা ছেড়ে দিলে যে কোনোভাবেই ক্রিকেটের সাথে থাকার পণ করেন তিনি।

পরে আনুষ্ঠানিকভাবে খেলা ছেড়ে কোচিংকেই দ্বিতীয়বারের মত ক্যারিয়ার গড়ার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন। এ জন্য তিনি কোচিংয়ের লেভেল-১ সম্পন্ন করে। শেষ হওয়ার পথে রয়েছে লেভেল-২ ও। ঢাকার একটি নামিদামি ক্লাবের সহকারী কোচ হিসেবে কাজও শুরু করে দিয়েছেন বছর দুই হলো। এবার মনোনিবেশ করতে যাচেছন নিজ জেলা কুমিল্লাকে নিয়ে। যে মাটি ও মানুষের ভালবাসা তাকে আজকের ডিকেন্স হতে সহায়তা করেছে।

হঠাৎ করে কেন কুমিল্লায় ক্রিকেট স্কুল চালু করলেন জানতে চাইলে ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স বলেন, হঠাৎ করে না। খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেয়ার পর কোচিংটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছি। ঢাকাতেও আবাহনীর সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছি। কিন্তু বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি এনামুল হক মনি ভাই ও আমার পড়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে আর কোন কুমিল্লার খেলোয়াড় সুযোগ পায়নি। অথচ, কুমিল্লায় প্রতিভার কোন অভাব নেই। ভাবলাম , এই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিভাগুলোকে যদি এক সাথে করে কিছু একটা করতে পারি তাহলে আগামী দিনের তারকা ক্রিকেটাররা এখান থেকেই বের হয়ে আসতে পারবে। কুমিল্লার ক্রিকেট উন্নয়ন মানেই তো বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়ন করা। এই ভাবনা থেকেই আমার সমমনা শুভাকাক্সক্ষীদের সাথে আলাপ করে প্রতিষ্ঠা করি স্কুল ক্রিকেট কুমিল্লা।

কুমিল্লা নগরীতে শিশুদের ক্রিকেট খেলা শেখার খুব একটা মাধ্যম এখনো তেমন গড়ে ওঠেনি। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর শিশু-কিশোরেরা স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেই চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবেই ভর্তি শুরু হওয়া শুরু করেছে।

কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও কুমিল্লা ক্রিকেট ডেভেলমেন্ট এসোসিয়েশনের যৌথ সহযোগিতায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার একটি রুমকে আপাতত অফিস করে কাজ শুরু করছি মাত্র। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেট শেখার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই।

কোন কোন বয়সের ছেলেদের ভর্তি করাবেন জানতে চাইলে ক্রিকেট স্কুল কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা কোচ ডিকেন্স বলেন, আপাতত আমি কোন নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে যেতে চাচ্ছি না। কারণ, আমি চাই,একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে আগ্রহী ছেলেরা উঠে আসুক। বয়স যাই হোক না কেন আমি একেবারে প্রাইমারি স্কুল লেভেল থেকে কাজ শুরু করতে চাই।অর্থাৎ পড়াশুনার পাশাপাশি তার ধ্যান-জ্ঞানে ক্রিকেটকে প্রবেশ করাতে চাই।

কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাত্র কয়েক দিন হলো নগরীতে কিছু ব্যানার টানানো হয়েছে মাত্র। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এই অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই যে সাড়া পাচ্ছি তা এক কথায় অভূতপূর্ব। কুমিল্লার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগ্রহী অভিভাবকরা ফোন করে যোগাযোগ করছে । অফিসে এসে বিস্তারিত জেনে যাচ্ছে। কেউ কেউ এসে সাথে সাথেই ভর্তি হচেছ। এক কথায় বলতে পারেন বিশাল এক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। ক্রিকেটার হওয়ার জন্য কুমিল্লার নতুন প্রজন্ম যে এমনভাবে আগ্রহী হবে তা ভাবতেই পারিনি। বিশেষ করে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো,অভিভাবকদের আগ্রহ রয়েছে ব্যাপক।

ভর্তির নিয়ম কানুন জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠাতা কোচ বলেন, ভর্তি ফি ১ হাজার টাকা আর মাসিক বেতন ৫শ টাকা। আপাতত প্রতি সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস করানো হবে। প্রতি রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কোচিং চলবে।

ক্রিকেট একাডেমি না করে ক্রিকেট স্কুল নাম দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স বলেন, আমি মনে করি, ক্রিকেট শুধু ব্যাট-বলের খেলা না। এখানে আরো অনেক কিছু শেখার আছে, জানার আছে এবং বুঝার আছে। সার্বিকভাবে সব কিছু জানতে হলে স্কুলের কোন বিকল্প নেই। তাই আমি আমার এই প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছি ক্রিকেট স্কুল কুমিল্লা। ছোটদের নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আর একটি ব্যাপার আপনাকে বলি আর তা হল,শুধু ক্রিকেট না, যে কোন খেলাকেই যদি আপনি সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যেতে চান তা হলে স্কুল লেভেলের কোন বিকল্প নেই। ‘আমি নিজেও স্কুল ক্রিকেট খেলে বড় হয়েছি।’ বর্তমানে ঘরোয়া ক্রিকেটের অনেকেই স্কুল পর্যায় থেকে উঠে এসেছে। ‘দেশের ক্রিকেটের পাইপলাইন তৈরিতে দারুণ ভূমিকা রাখছে স্কুল ক্রিকেট। আমিও স্কুল ক্রিকেট খেলেই জাতীয় পর্যায়ে এসেছি। বহু ক্রিকেটারের হাতেখড়ি এখান থেকে। আশা করি স্কুল ক্রিকেট থেকেই আগামীর মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাবিক আল হাসান এবং তামিম ইকবালরা বেরিয়ে আসবে। ’ আর এটাই থাকবে আমার নিরন্তর প্রচেষ্টা।

আরো পড়ুন