কুমিল্লায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই

আসছে শীতে করোনার ঢেউ বা দ্বিতীয় প্রকোপ বাড়ার আশংকা থাকলেও এই নিয়ে কুমিল্লাবাসীর যেন কোনও চিন্তা নেই। বাস টার্মিনাল কিংবা রেলস্টেশন থেকে গণপরিবহন, কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। কিছু দিন আগেও এসব জায়গায় যেটুকু নিয়ম পালন করা হতো, সেইটুকুও এখন উধাও। চালক, হেলপার, সুপারভাইজার, যাত্রী-সবাই মাস্ক ছাড়াই চড়ছেন বাসে।

এছাড়া কুমিল্লা নগরীতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের গণপরিবহনে বিন্দুমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না যাত্রীরা। দুই জনের সিটে গাদাগাদি করে বসছেন ৪-৫ জন।

চলমান করোনা মহামারিতে কুমিল্লাসহ সারা দেশের গণপরিবহনই এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। তবে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য মেনে যাত্রী পরিবহন এবং মাস্ক ব্যবহারের কথাও। কিন্তু যাত্রীবাহী বাসসহ কুমিল্লার গণপরিবহনগুলোতে চালক, হেলপার ও যাত্রীরা মাস্ক ছাড়াই গণপরিবহনে উঠছেন। রবিবার (১ নভেম্বর) কুমিল্লার শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল এবং নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় ঘুরে এইসব দৃশ্য দেখা গেছে।

রবিবার দুপুরে কুমিল্লার রেলওয়ে স্টেশনে গিয়েও দেখা যায় স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক ব্যবহারে যাত্রীরা উদাসীন। সবাই ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। নেই কোনও সতর্কতা। এই অবস্থা কুমিল্লার বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন আগামীতে দ্বিতীয় দফা আবারও যদি করোনা আঘাত হানে তাহলে কুমিল্লাও ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।

কুমিল্লার লাকসাম রোড কান্দিরপাড় হাফেজ মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি সিএনজি চালিত অটোরিকশার পেছনের সিটে গাদাগাদি করে পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে উঠেছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাচ্চাদের মাস্ক ভুলবশত বাসায় রেখে এসেছেন। নিজের মাস্ক আছে, তবে পকেটে।

এদিকে শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায় স্বাস্থ্যবিধির কোনও বালাই নেই। নেই সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্কের ব্যবহার। দেশে যে করোনার প্রকোপ রয়েছে, সেটা এখনকার মানুষ যেন ভুলেই গেছে। পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নেই। শতকরা ৮৫ ভাগ যাত্রীর মুখে নেই মাস্ক।

শাসনগাছা তিশা পরিহনের যাত্রী মূসা যাবেন ঢাকায়। মুখে মাস্ক নেই। তার আশপাশের সিটে বসা সব যাত্রীর একই অবস্থা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পান খেয়েছেন। মাস্ক পরলে পান খাওয়া সম্ভব না, ওই বাসের যাত্রীদের মধ্যে শতকরা ৫-৭ জনের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।

ওই বাসের সচেতন যাত্রী মীর হোসেন জানান, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যারা বাসে চলছেন তাদের কারণে তারাও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, নিজের সুরক্ষা যতটুকু করতে পারি সেটা ছাড়া কোনও উপায় দেখছি না।

একই টার্মিনালের পাপিয়া বাসের আরেক সচেতন যাত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, দোকানে চারটা মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। এতো সহজলভ্যে মাস্ক, সবাই নিজের সচেতনতার জন্য তো ব্যবহার করতে পারেন। কুমিল্লা কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান ভূঁইয়া জানান, করোনার প্রথম দিকে মানুষ অনেক সচেতন ছিল। এখন তারা মনে করছে করোনা শেষে, পরিবেশ স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু করোনা এখনও যায়নি। এই মহামারি দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নগরীর জাঙ্গারিয়া বাস টার্মিনালেও একই দশা। এখানকার উপকূল বাসের টিকেট কাউন্টারের ম্যানেজারের মুখে মাস্ক নেই। স্বাভাবিক অবস্থার মতো যাত্রীদের সঙ্গে লেনদেন করছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি পুরোটাই মানছেন। মুখে মাস্ক লাগাতে পারেননি বাসা থেকে আনা হয়নি বলে।

আরেক বাস কাউন্টারের ম্যানেজার কাশেম। বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে। তার মুখেও মাস্ক নেই। তিনি বলেন, করোনায় আমরা আক্রান্ত হবো না, আক্রান্ত হবে বড় লোকেরা। আমরা তো শ্রমিক, আমরা রোদে পুড়তে পারি, আবার বৃষ্টিতে ভিজতেও পারি। আমাদের শরীরে এই রোগ আসবে না।

এদিকে করোনা মহামারি সময়ে গণপরিবহন সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়ার পর কুমিল্লার শাসনগাছা, চকবাজার, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এবং জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডগুলোতে কিছুদিন আগেও যাত্রী উঠানোর সময় ছিটানো হতো জীবানুনাশক। স্প্রে করা হতো পুরো গাড়ি এবং সিটে। কিন্তু এখন তাও হচ্ছে না।

মোয়াজ্জেম হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, কোনও গাড়িতে স্প্রের ব্যবস্থা নেই। চালক, হেলপার, সুপারভাইজাদের কেউ মাস্কও পরেন না।
আলী হোসেন নামে আরও এক যাত্রী জানান, করোনায় পুনরায় পরিবহন চলাচল শুরুর পর যাত্রী উঠার সময় স্প্রে মেরে নিতেন। আর এখন যাত্রী আসলে প্রথমে বলেন, ভাই কিছু লাগবে না। তাড়াতাড়ি উঠে পড়েন। ভেতরে গিয়ে নিজের সুস্থ স্বাস্থ্য নিয়ে ঝুঁকিতে পড়ি।

কুমিল্লার বাস মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, করোনার প্রকোপ আবারও বাড়তে শুরু করলে সরকারের সব নির্দেশনা মেনে রাস্তায় নামবে গণপরিবহন। কোনও বাস মালিক না শুনলে প্রশাসনকে বলবো তাদের ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করবো।

মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, যানবাহন এবং গণপরিবহনে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের সব ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সামনে করোনা প্রকোপ বাড়তে পারে সেই নির্দেশনা পেয়ে কার্যক্রমে আরও জোর দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন