কুমিল্লায় পরকীয়ার জেরে দুই সন্তানের জননীর আত্মহত্যা

পরকীয়ার জের ধরে স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে দুই সন্তানের জননী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার ভোরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পুলিশ নিহত খায়রুন নাহার ঝুনুর (৪০) লাশ উদ্ধার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি জানান, রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে লাশ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরসহ অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইননানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।

নিহত খায়রুন নাহার ঝুনুর দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর ছোট ছেলে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী।

নিহত খায়রুন নাহারের মেয়ে বলেন, ‘তিন বছর আগে বাবা মো. শাহ আলম প্রতিবেশী লাকি আক্তার পাখির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে প্রায়ই বাবা মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। গত ১৪ জুন কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকায় একটি বাসায় ঐ নারী ও বাবা আছেন এমন খবরে মা ওই বাসায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। ওইদিন লাকি আক্তার পাখির স্বজনরা মাকে মারধর করেন। এ ঘটনার ৩ দিন পর মা কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন সেলে একটি অভিযোগ দায়ের করে।

রোববার রাতে মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া হয়। এ নিয়ে তর্কাতর্কির মাঝে মা রাত দেড়টায় বিষপান করেন। পরে বিষয়টি টের পেয়ে যাই। তখন মা বলেন, তোমরা আমাকে মাফ করে দিও। পরে আব্বু মাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান, পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেয়ার পথে মা মারা যায়। মা মারা যাওয়ার জন্য লাকি আক্তার পাখি দায়ী। তার বিচার চাই।

স্থানীয় সমাজ সেবক রফিকুল ইসলাম বলেন, শাহ আলমের কর্মকাণ্ড নিয়ে তার স্ত্রী খায়রুন নাহার আমাদের কাছে অভিযোগ করে ছিলেন। এ নিয়ে সালিশ দরবার করে কোনো সুরাহা হয় নি। আমরাও চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হউক।

নিহতের বড় বোন মোমেনা আক্তার বলেন, ঐ নারীর কারণে বোনের সাংসারিক জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়।

লাকি আক্তার পাখি বলেন, আমাদের সম্পর্ক সাড়ে ৩ বছর ধরে। ২০২০ সালের শেষের দিকে আইন সম্মতভাবে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছি। স্বামী মাঝে মাঝে আমার বাড়িতে আসতেন। তবে কখনো তাকে তার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে লাকি আক্তার পাখি বলেন, পাঁচ বছর আগে আগের স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়। স্বামী নেশাগ্রস্ত ছিলো। আমার দুই মেয়ে। একটা অবলম্বন দরকার। পাশাপাশি স্বামী মো. শাহ আলম বলেছেন, ইসলাম আইন অনুযায়ী ভরণপোষণ দিতে পারলে ৪ বিয়ে জায়েজ আছে। তাই আমিও রাজি হই। এদিকে স্ত্রীর মরদেহ বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায় শাহ আলম। বিষটি নিয়ে শাহ আলমের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেনি।

আরো পড়ুন